লিভিং ইনসাইড

বন্ধুত্বের কোন লিঙ্গ নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 08/12/2017


Thumbnail

প্রথম প্রথম খুব বিরক্ত লাগতো ওদের দেখলে। পাশে এসে টাকার আবদার করলে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিতাম। মাঝে মাঝে মন খারাপ করত আবার কখনো কথা না বাড়িয়ে চলে যেত। একদিন দুই বান্ধবী মিলে ঠিক করলাম, আজ ওদের সঙ্গে মজা নেব। টাকা চাইতে এলে বললাম, টাকা দেব কিন্তু তার বিনিময়ে আমাদের বিনোদন দিতে হবে। নাচ, গান অথবা ওদের মত মেকাপ করা শেখাতে হবে। মজা করছি বুঝতে পেরে বলল এগুলো সৌখিন কাজ রাস্তা ঘাটে নাচ গান করা যায় না। ওদের বাসায় দাওয়াত দিল আমাদের। এভাবেই বন্ধুত্বের শুরু। বৈশাখী আর ইমু এখন আমাদের দুজনের কাছে আর দশটা বন্ধুর মতই। কিন্তু অন্যদের কাছে ওরা আলাদা- কারণ- ওরা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ।

আর দশটা বন্ধু ওদের সঙ্গে আমাদের এই সহজ সম্পর্ক মেনে নিতে পারে না। তাঁরা আমাদের বোঝায় যে, যাঁর-তাঁর সঙ্গে বন্ধুত্ব করা ঠিক নয়। আমাদের নিয়ে ওরা হাসাহাসি করে। আমরা দুই বান্ধবী পাত্তা দিই না।

আর যাঁরা হাসাহাসি করে তাঁদের কোন দোষও দিই না আমরা। কারণ ওদের এই মানসিকতার পেছনে মানুষের প্রতি উদার মনোভাবের অভাব, বিষয়টা এমন নয়। সমাজ ছোটবেলা থেকেই আমদের এই বিষয়টা খুব যত্ন করে শিখিয়েছে, ওরা ভালো নয়। সমাজের কাছে অনেক ব্যাখাও আছে তাঁদের খারাপ প্রমাণ করার। এর মধ্যে অন্যতম- ওরা কোনো কাজ করে না।

ইমু আর বৈশাখীকে একদিন বললাম, ‘তোমরা কাজ করলেই তো পারো’। ওরা চকচকে চোখে তাকালো আমার দিকে। খুব করে বলল, ‘একটা কাজ জোগার করে দাও না। এই অন্যের দয়ার জীবন আর ভালো  লাগে না ‘ আমি শূন্য চোখে তাকালাম, কারণ, ওদের আবদারে সাড়া দিতে পারবো না জানি।

এমন নয় যে, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা সবাই খুব ভালো; খুব অসহায়। ওদের অনেকেই বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত। আবার অনেকেই সাধারণ মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে জোরপূর্বক চাঁদাবাজি করে।

আবার তার মানে এই নয় যে, তৃতীয় লিঙ্গের সবাই খারাপ। আমাদের মত সাধারণ মানুষেরাও এই অপরাধগুলো করে। কিন্তু তাঁদের তো মানুষের খাতা থেকে নাম কাটা যায় না। তাহলে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষগুলোর প্রতি এই তীব্র ঘৃণা কেন?

সময় এখন ওদের ঘৃণায় দূরে সরিয়ে না রেখে বন্ধুত্বের হাত বাড়ানোর। সরকার বিভিন্ন সময়ে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু তাঁরা কেউই টিকতে পারেনি সেসব জায়গায়। কারণ সেই কর্মস্থলগুলোতেও তাঁদের দিকে ঘৃণার দৃষ্টিই দেয়া হতো। কর্ম দেয়ার সঙ্গে তাঁদের মেনে নেয়ার মত মানসিকতাও সাধারণ মানুষের মধ্যে তৈরি করা জরুরি। এই মানুষগুলোকে দক্ষ মানব সম্পদে পরিণত করতে পারলে, তা দেশের জন্যই ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে।

তাই আসুন  লিঙ্গের ভেদাভেদে বন্ধুত্ব না মেপে তাঁদেরও মানুষ হিসেবে মেনে নিই। কারণ‘মানুষ মানুষের জন্য’।


বাংলা ইনসাইডার/টিবি



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭