ইনসাইড থট

বিএনপির লবিস্ট কেলেঙ্কারি- দেশ বিরোধী রাজনীতি


প্রকাশ: 29/01/2022


Thumbnail

বিএনপি কি আসলেই রাজনীতি বিবর্জিত একটি দল? আমার আসলেই বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়! যেভাবেই দেখি না কেনো, এই দলটা কয়েক দশকের অভিজ্ঞতাপূর্ণ, এদের নেতার সংখ্যাও নেহায়েত কম না। কিন্তু কি করে বিরোধী দল করতে হয়, কিভাবে রাজনৈতিক বিরোধিতা করতে হয়, কিভাবে বিরোধিতার সূতা গাঁথতে হয়, এই সম্পর্কে এই দলের বিরাট একটা অংশের বিন্দুমাত্র ধারনা নেই বলেই মনে হয়। কেনো নেই বা কেনো গণতান্ত্রিক চর্চা গড়ে উঠেনি, এটা মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন! রাজনীতি বা জনগণ না হয়ে এদের ক্ষমতায় যাওয়ার একমাত্র অবলম্বন যেকোনো ভাবে পেছনের দরজা কেনো, এটাও অবাক করা বিষয়!  

টক অব দ্যা টাউন এখন , বিএনপির লবিস্ট নিয়োগ।  কয়েকদিন আগে এই দলের মহাসচিব মীর্জা ফখরুল নিজ মুখেই স্বীকার করলেন, বিএনপি লবিস্ট নিয়োগ করেছে। টাকা কিভাবে গিয়েছে, কত গিয়েছে, সেটা সরকারের এজেন্সির উপর ছেঁড়ে দিয়ে কেনো তারা লবিস্ট নিয়োগ করেছে, সেটা একটু দেখি। তারা লবিস্ট নিয়োগ করেছে, আমেরিকান সরকারকে দিয়ে বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকারকে বিপদে ফেলতে, সরকারকে বিব্রত করতে। এবারের বিএনপির নিযুক্ত লবিস্ট নিয়োগে যে ক'টি বিষয় সামনে এসেছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে নিয়োগকৃত লবিস্টদের দিয়ে বাংলাদেশকে দেয়া আমেরিকার বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগিতা বন্ধ করা, এর মধ্যে কয়েকটি প্রধান অংশ হলো, দেশ রক্ষায় সেনাবাহিনীর হালকা ও ভারী অস্ত্র ক্রয়, ট্রেনিং, লাইফ সেভিং ইকুইপমেন্ট, আছে বাঁধ-সড়ক তৈরির সহযোগিতা, আছে জরুরী খাদ্য ও মেডিসিন সরবরাহ, আছে বন্যা-মহামারী-জলোচ্ছ্বাস-দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি। চিন্তা করে দেখুন, এর সবকিছুই কিন্তু বাংলাদেশের জনগণের সরাসরি স্বার্থ সংশ্লিষ্ট, এর সাথে, দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিরোধিতায় বিএনপি কেনো দেশের জনগণকে জিম্মি করলো, সেটা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কোনো বিবেক-বুদ্ধিতেই বুঝে উঠতে পারলো না! এটা বিএনপির কি ধরনের রাজনীতি? 

আচ্ছা, লবিস্ট নিয়োগ করতেই পারে, কিন্তু রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে লবিস্ট নিয়োগ করা যে দেশদ্রোহিতার সমতুল্য, এটা কি তারা জানেন? সরকার যে তাদের এইজন্য ভালো ঝামেলায় ফেলতে সক্ষম, এটাও কি তারা জানেন?  আরে এই কাজটি তারা এই প্রথম করেন নি, এর আগেও করেছেন, ক্রমাগত করে যাচ্ছেন। আচ্ছা, আপনাদের মনে আছে? ২০১৩ সালের ৩০শে জানুয়ারি বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া আমেরিকার প্রভাবশালী পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্টে সরকারের বিরুদ্ধে একটি কলাম লিখেছিলেন, সেখানে সরকারকে বিপদে ফেলতে বেশি কিছু প্রস্তাব রাখা হয়:

১। বাংলাদেশের রাজনীতিতে আরো বেশী আমেরিকান ও ব্রিটিশ হস্তক্ষেপ,
২। বাণিজ্যে সুবিধা বাতিল, 
৩। জেনোসাইডের বিচারের বিরুদ্ধে আমেরিকাকে দাঁড়াতে প্ররোচিত করা। 
৪। জঙ্গি দমনে সক্ষম সামরিক সংস্থার বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা, 

মূলত: এই চারটি বিষয় সেখানে খালেদা জিয়া তার নিজের দেশের বিভিন্ন ইন্সটিটিউটের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অনুরোধ করেন অন্য দেশের শক্তির কাছে। এই দাবীগুলো আপনারা একটি একটি করে চিন্তা করে দেখুন, প্রথমটিতে কিন্তু আমেরিকা পুরো চেষ্টা করেছে, কিন্তু ব্রিটিশ হাইকমিশনারের উপর জঙ্গিদের বোমা হামলার পর তারা পিছু হটে ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তায় সেটা পথ হারায়। 

দ্বিতীয়টিতে কিন্তু খালেদা জিয়া সফল হোন, বাংলাদেশকে দেয়া জিএসপি সুবিধাটি আমেরিকা বাতিল করে দেয় এবং বাংলাদেশ গত ৬ বছরে লক্ষাধিক কোটি টাকার বাণিজ্য হারায় ও ভিয়েতনাম আমাদের দেশকে রেডিমেড গার্মেন্টস রপ্তানিতে প্রায় ছাড়িয়ে যাওয়ার মুখে এসে দাঁড়ায়। খালেদা জিয়ার এই কাজটি দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যায় নি, গিয়েছে দেশের বিরুদ্ধে, দেশের পায়ে কুড়োল মেরে তিনি ব্যক্তি লাভে ও লোভে বাংলাদেশ ও তার জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে কুণ্ঠাবোধ বা লজ্জাবোধ করেন নি, এর জন্য ক্ষমাও চাননি।  

তৃতীয় কাজটি আরো ভয়াবহ, দেশের মূলে কুঠারাঘাত করতে চেয়েছিলেন খালেদা জিয়া, দেশকে একটি জঙ্গীরাষ্ট্র আফগানিস্তান বানাতে তার এই প্রচেষ্টা যদি সফল হতো, তাহলে এতদিনে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হতো। সমস্ত রাজনীতি ও লাভ-ক্ষতি হিসেবের আগে-পরে আমাদের একটা ব্যাপার চিন্তা করা লাগে, প্রতিদিন ঘুম ভাঙার পরে প্রতিটি সকালে আমাদের প্রায় ১৭০ মিলিয়ন মানুষের মুখে সকালের খাওয়া উঠিয়ে দিতে হয়, দিনের বাকী সময় না হয় বলাই বাহুল্য। যে সাম্প্রদায়িক শক্তি বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডের বিরোধিতা করে, তাদের মুখেও এই খাওয়াটা দিতে হয়। এই বেসিক ব্যাপারটিই হচ্ছে আমাদের দেশের অর্থনীতির মূল কথা। আমরা নষ্ট-ভৃষ্ট-ভিক্ষুক হলে ভিক্ষা কিছু মিলবে হয়ত, সেটা দিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে সস্তা খাওয়াটা ভিক্ষুকের মতো খাওয়া যায়, ইজ্জত নিয়ে নিজের বাড়িতে নিজ পরিবারের সাথে বসে হালাল রুজি দিয়ে খাওয়া যায় না। আমাদের অর্থনৈতিক শক্তি আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে, আমাদের শক্তি আজ বিদ্যুতে লোড শেডিং বন্ধ করে প্রতিটি কারখানা, হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ, রেস্টুরেন্ট চালাতে, আমাদের শক্তি আজ ছিটমহল-মংগা নিঃশেষ করে দিয়ে উত্তরবঙ্গে একসময়ের দরিদ্রতাকে নির্মূল করাতে, আমাদের শক্তি আজ প্রায় তিন কোটি মানবসম্পদের কাজের সংস্থান করাতে, আমাদের শক্তি আজ নিজের অর্থায়নে পদ্মা ব্রিজ করে অন্যের দয়াকে প্রত্যাখ্যান করা, যার সুবিধা আগামীর সব সরকার নেবে, আমাদের শক্তি আজ অস্ত্র ইপিজেড তৈরি করে লক্ষ লক্ষ চাকরীর সুযোগ তৈরি করা, আমাদের শক্তি আজ প্রবাসীরা অর্থ পাঠালে সরকারও সেখানে ভর্তুকি দেয়া, আমাদের শক্তি আজ বিধবা ভাতা-বৃদ্ধ ভাতা-পঙ্গু ভাতার মতো জনকল্যাণকর কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা। খালেদা জিয়া এসবের কিছুই করলেন না, তিনি কি করলেন? মাঝখান দিয়ে আমাদের ভাতে মারার ব্যবস্থা করে ভিয়েতনামকে আমাদের পরাজিত করার সুযোগ তৈরি করে দিলেন। তারপরও, দেশের মেধাবী ব্যবসায়ী, পরিশ্রমী জনগণ ও সরকার পিছু হটলেন না, তারা সবাই মিলে প্রতিরোধ গড়ে তুললেন এবং সবচেয়ে বড় কথা, এই কাজে তারা সেই আমেরিকা, ব্রিটিশ ও ইইউসহ অনেক দেশের প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে কাছে পেলেন, যারা আমেরিকার ভ্রান্ত নীতির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থকে, সরকারের নীতিকে সমর্থন দিলেন ব্যাপকভাবে।  

চতুর্থ, বিএনপি সব কিছুতে ব্যর্থ হয়ে, যে কাজটি শেষ পর্যন্ত করলেন সেটা হচ্ছে, বাংলাদেশের জঙ্গি দমনে সফল ও দুনিয়াব্যাপী নাম করা র‍্যাবের কয়েকজনের বিরুদ্ধে আমেরিকায় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা। এমন নয় যে, ইনাদের আমেরিকায় যেতেই হবে, কিন্তু এটা একটা বড় ধরনের ষড়যন্ত্রের অংশ। উল্লেখ্য, র্যাব তৈরি হয়েছিলো খালেদা জিয়ারই আমলে, সেই আমলে সন্ত্রাসী নির্মূলে, বাংলা ভাইসহ জঙ্গিদের ধরতে এই র্যাবই ছিলও বিএনপির সরকারের অস্ত্র, অথচ সেই অস্ত্রই আজ নমঃশূদ্র বিএনপির ও খালেদা জিয়ার কাছে। কেনো? কিছুই না, স্রেফ নির্বাচনে বিএনপির কথামতো না চলা ও সরকার-জনগণের দেয়া নিয়মের মধ্যে চলে বাহিনীকে রাজনীতির অংশ হয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হতে দিতে অস্বীকার করা। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, খালেদা জিয়ার হাত থেকে এই বাহিনীও রক্ষা পাবে না, যদি না তাঁরা এখনকার মতো প্রফেশনাল না থাকে। 

এই হচ্ছে, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের উপর বিদেশী শক্তির আক্রমণের বিভিন্ন দিক ও বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের জড়িত থাকার বিভিন্ন চেহারা। ষড়যন্ত্র বন্ধ হয় নি, হবেও না, এটাই স্বাভাবিক। চেনা-জানা লোক উন্নতি করলে অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়, বাংলাদেশের উন্নয়নে অনেকেই ইর্ষাকাতর হবে এটাও স্বাভাবিক ধরে নিচ্ছি, এই ধরনের চ্যালেঞ্জিং সময়ে যে ধরনের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে সামনে রাখা লাগে, উপরের উদাহরণের পরে তা আর যেই হোক, দেশের পিঠে ছুড়ি মারা বিএনপি বা খালেদা জিয়া নন। 

আমার বা আমদের নতুন জেনারেশনের বড় কষ্ট হচ্ছে, এই যে আওয়ামী বিরোধিতা করতে করতে দেশের এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবী বা রাজনীতিবিদদের এই দেশেরই বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যাওয়া, এটা কেনো? তারা কি রাজনীতির এই দেশপ্রেমিক বা দেশ কেন্দ্রীয় হয়ে উঠার শিক্ষাটা পায় নি, বা নেবে না? ৭৫-এর ১৫ই আগস্টে একটি জাতির পিতা ও তাঁর পুরো পরিবারকে হত্যা করার পরিকল্পনা ও হত্যা করাতো রাজনীতি না, ভয়ংকর অপরাধ, জেলের ভেতরে ক্ষমতার দম্ভে একটি দলের চার মুল নেতাকে হত্যা-তো রাজনীতি না, ভয়ংকর অপরাধ, ২১শে আগস্টে একটি প্রধান বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করার প্রচেস্টাতো রাজনীতি না, ভয়ংকর অপরাধ, এই ধরনের মাফিয়া মনোবৃত্তির কিছু মানুষের ক্ষমতার লোভে রাজনীতিকে ব্যবহার করাকে সম্মিলিত ভাবে থামাতে হবে, যেকোনো মূল্যে। যারা এসবের সাথে জড়িত, তারা কোনোভাবেই রাজনীতিবিদ নন, তারা অবশ্যই পরিত্যাজ্য ও জেলে সারাজীবন কাটানোর মতো স্রেফ অপরাধী। এদেরকে বিন্দুমাত্র ছাড় দিলে বাংলার মানূষকে তারা ধ্বংস করে দিবে।  

রাজনীতির এই অংশে, নিজ দেশের জনগণের কাছে না গিয়ে তৃতীয় কোনো দেশকে নিজ দেশের ক্ষতি করানোর প্রবণতা যে কোনো মানদণ্ডে রাস্ট্রদ্রোহীতা। খালেদা জিয়া তা করেছেন এবং তার দলের শীর্ষ কিছু নেতৃবৃন্দ এই ধরনের নেগেটিভ রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন, যা হতাশাজনক ও লজ্জার। আমাদের বোধগম্য হয় না, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে, আমাদের যেখানে আর কোনোদিনই ৭১-এর পূর্বাবস্থায় ফিরে যাওয়া সম্ভব না, সেখানে, বিএনপি এই বাস্তবতা মানতে পারছে না কেনো? তারা কেনো জনগণের কাছে যেতে পারছে না? যে লবিস্ট তারা নিয়োগ দিয়েছে, তা দিয়ে সারা বাংলাদেশে শীত বস্ত্র বিতরণ করলে মোটামুটি একটা কেস তারা দাঁড়া করাতে পারতেন, তা না করে, বাংলাদেশের জনগণের এই টাকাটা দিয়ে তারা কিছু লবিস্ট নিয়োগ দিয়েছে, যারা বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করছে। মানুষের মনোজগতে অবিশ্বাস, ঘৃণা ও দূরত্ব তৈরিতে এই একটি স্ক্যান্ডালই যথেষ্ট। 

বাংলাদেশের মানুষ তার নেতা হিসেবে বাংলাদেশের স্বার্থ দেখা রাজনীতিবিদদেরই দেখতে চাইবে, আধুনিক বাংলাদেশ এখন অর্থনৈতিক মুক্তির স্বার্থ সংশ্লিষ্ট, তারা ইতিহাসকে শ্রদ্ধা করে, ৭১ নিয়ে অহংকার করে এবং তারা সামনে এগিয়ে যেতে চায়। তারা যেমন জাতির পিতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কোনো অপমান সহ্য করে না, তেমনি, তারা ধর্মভীরু থাকতে চায় কিন্তু কোনো হিসেবেই পাকিস্তানী-তালেবানী রাজনীতি পছন্দ করে না, বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলকে এখন এই সত্যটি বুঝতে হবে, বাস্তবতায় দাঁড়াতে হবে। মনে রাখতে হবে, এই দেশের মাটি নরম হয় বর্ষায়, আবার এই দেশের সেই মাটিই পাথরের মতো শক্ত হয় চৈত্রে, বাংলাদেশে ক্ষমা হয়ত করে, কিন্তু ভোলে না কিছুই।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭