ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

করোনায় যখন উঠছে পশ্চিমের বিধিনিষেধ, বাড়ছে এশিয়ায়


প্রকাশ: 29/01/2022


Thumbnail

করোনা মহামারীর অতি সংক্রমণে যখন বিশ্ববাসীর জীবনযাত্রা একেবারের স্থবিরতা ভেতর দিয়ে পার হচ্ছে তখন আস্তে আস্তে পশ্চিমা দেশগুলো তাদের দেশে করোনার কঠোর বিধিনিষেধ থেকে সরে আসছে। সেখানে যেনো ঠিক উলটো পথে হাঁটছে এশিয়ার বেশির ভাগ দেশ। কোন কোন দেশ তো করোনার সূচনা লগ্নের চেয়েও বেশি কঠোর লকডাউন জারি করছে দেশে। 

এশিয়ার অনেক দেশ তাদের করোনার ভ্যাক্সিন কার্যক্রম আরো জোরালো করলেও তারা করোনার নতুন ধরণ ওমিক্রনের আগমনে দেশে লকডাউন থেকে শুরু করে জীবন যাত্রায় আরো কঠোর অবস্থান গ্রহণ করছে। 

করোনায় লকডাউন নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এপিডেমিওলজির অধ্যাপক চো সুং-ইল বলেন, ‘এশীয়রা স্বাধীনতার চেয়ে জীবনকে বেশি মূল্য দিয়ে থাকতে পারেন। এর কারণ হতে পারে স্বাধীনতার জন্য জীবন বিপন্ন করে গণ–অভ্যুত্থানের তরতাজা স্মৃতি হয়তো আমাদের নেই।’

অন্যদিকে হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের মহামারি বিশেষজ্ঞ বেন কাউলিং বলেন, ‘আমি মনে করি, এশিয়ার দেশগুলোও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চায়। তবে সম্ভবত বিশ্বের অপর অংশের তুলনায় বেশি সাবধানতার সঙ্গে। বিধিনিষেধ এ সাবধানতারই অংশ। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে সংক্রমণ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাবে এবং তারপর জনস্বাস্থ্যবিষয়ক পদক্ষেপগুলো শিথিল করা হবে।’

চীনের মূল ভূখণ্ডে কর্তৃপক্ষ করোনা ঠেকাতে ‘শূন্য সহিষ্ণুতা’ নীতিতে কাজ করছে। এর ফলে সেখানে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ প্রায় বন্ধ হচ্ছে, আবার ঘন ঘন কঠোরতর বিধিনিষেধ ও বিধিনিষেধ দেওয়া হচ্ছে।

মহামারির এ দুই বছরে করোনা সংক্রমণে এখনই সবচেয়ে টালমাটাল হংকং। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এরই মধ্যে তারা স্কুল, বার ও শরীরচর্চাকেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। সন্ধ্যা ছয়টার পর রেস্তোরাঁয় বসে খাওয়াও বন্ধ করা হয়েছে। ‘এশিয়ার বিশ্বনগরী’ হিসেবে পরিচিত চীননিয়ন্ত্রিত এ অঞ্চল কঠোরতম কোয়ারেন্টিন ও সীমান্তে কড়াকড়ির কারণে পৃথিবীর সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন মহানগরীগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে। অবশ্য এ কঠোর অবস্থান থেকে সামান্য সরে এসে বৃহস্পতিবার কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়েছে, বিদেশ থেকে আগত ব্যক্তিদের বাধ্যতামূলক হোটেল কোয়ারেন্টিন ২১ থেকে কমিয়ে ১৪ দিন করা হচ্ছে।
জাপানে দৈনিক করোনা শনাক্ত প্রায় ৮০ হাজারে পৌঁছেছে। অনাবাসী সবার জন্য জাপানের সীমান্ত বন্ধ রয়েছে। দেশটির ৪৭টি প্রিফেকচারের (প্রশাসনিক অঞ্চল) মধ্যে ৩৪টিতে বার ও রেস্তোরাঁ খোলা রাখার সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

মহামারির পুরো সময়জুড়ে সর্বাত্মক বিধিনিষেধ এড়িয়ে চলা দক্ষিণ কোরিয়ায় বিদেশ থেকে আগত ব্যক্তিদের ১০ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হচ্ছে। দেশটিতে একসঙ্গে ছয়জনের বেশি সমবেত হওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া রাত ৯টার পর বার, রেস্তোরাঁ ও শরীরচর্চাকেন্দ্র খোলা রাখায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। গত শুক্রবার ২৪ ঘণ্টায় ১৬ হাজার নতুন রোগী শনাক্তের খবর জানানো দেশটিতে ৬ ফেব্রুয়ারি বিধিনিষেধ নিয়ে নতুন ঘোষণা আসার কথা রয়েছে। 

মহামারির মধ্যে বিশ্বের যে দেশগুলো সীমান্তে প্রবেশের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি কড়াকড়ি আরোপ করেছে, সেগুলোর অন্যতম নিউজিল্যান্ড। দেশটি জানুয়ারির মধ্যভাগ থেকে ধাপে ধাপে সবার জন্য আন্তর্জাতিক সীমান্ত খোলার যে পরিকল্পনা করেছিল, তা ফেব্রুয়ারির শেষ নাগাদ পিছিয়ে দিয়েছে ওমিক্রনের কারণে। এ সিদ্ধান্ত বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত নিউজিল্যান্ডের হাজারো নাগরিকের অসন্তোষ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

অপরদিকে ইউরোপে সর্বশেষ দেশ হিসেবে ডেনমার্ক গত বুধবার প্রায় সব ধরনের করোনা বিধিনিষেধ তুলে নিয়েছে। যদিও এখনো দেশটিতে দিনে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের করোনা শনাক্ত হচ্ছে। এর আগে চলতি মাসেই যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ড অনেকটা একই পদক্ষেপ নিয়েছে। ডেনমার্ক কর্তৃপক্ষ বলেছে, সংক্রমণ বাড়লেও গুরুতর অসুস্থতা বাড়েনি। কোভিড-১৯–এর যেসব রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তাঁদের ৩০-৪০ শতাংশের অসুস্থতার অন্য কারণ রয়েছে। ফ্রান্সও আগামী সপ্তাহ থেকে হসপিটালিটি ভেন্যুগুলোতে বিধিনিষেধ শিথিল করার ঘোষণা দিয়েছে।

এশিয়ার বেশির ভাগ দেশ এখনো এ সুযোগ না দিলেও ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার অধিকাংশ দেশ পূর্ণ ডোজ টিকাগ্রহীতাদের জন্য কোয়ারেন্টিনমুক্ত ভ্রমণ চালু করছে।

ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আইএটিএ) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২১ সালে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বিমান ভ্রমণ ৯৩ দশমিক ২ শতাংশ কমেছে, যা অন্য যেকোনো অঞ্চলের চেয়ে অনেক বেশি।

টোকিওর টেম্পল ইউনিভার্সিটির এশিয়ান স্টাডিজের পরিচালক জেফরে কিংস্টোন আল–জাজিরাকে বলেন, বিভিন্ন দেশে বিধিনিষেধ আরোপের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনাও কাজ করে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার কঠোর সীমান্ত নীতির পেছনে তাঁর দুই পূর্বসূরির মহামারি মোকাবিলা নিয়ে ক্ষমতা হারানোর প্রভাব রয়েছে।

জেফরে কিংস্টোন বলেন, ‘এর জন্য জনগণকে চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে বিশেষত যেসব শিক্ষার্থী এখানে পড়তে আসতে চায় বা যেসব ব্যক্তি তাদের পরিবারের কাছে আসতে চায় তাদের জন্য। এটা অর্থনীতির জন্যও ক্ষতিকর, পর্যটন খাতে আঘাত, স্বল্প পুঁজির রেস্তোরাঁ ও বার মালিকদের দেউলিয়া হওয়ার পথ তৈরি এবং পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসা পথে বসার উপক্রম হয়। বৈশ্বিক মহামারি থেকে তা শেষের দশা আসবে, কিন্তু কখন তা কেউ জানে না।’

তবে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় করোনায় যেভাবে মৃত্যু হয়েছে, তা পূর্ব এশিয়ায় না হওয়ায় ‘একটি মাত্রায় আত্মতুষ্টির’ কারণ রয়েছে বলে মন্তব্য করেন কিংস্টোন।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭