ইনসাইড বাংলাদেশ

নতুন মার্কিন রাষ্ট্রদূত: সম্পর্কের টানাপড়েন কি ঘুচবে?


প্রকাশ: 29/01/2022


Thumbnail

বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে এখন কূটনৈতিক মহলে নানামুখী আলোচনা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে টানাপোড়নের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যেই মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলার বিদায় নিয়েছেন গত নভেম্বরে। নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করতে ঢাকায় আসছেন পিটার হ্যাস। প্রশ্ন উঠেছে যে, পিটার হ্যাস বাংলাদেশে এলে দুদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কি কোন পরিবর্তন ঘটবে। আর পিটার হ্যাসের মনোনয়ন এর মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে কি বার্তা দিল। পিটার ডি হ্যাস একজন অর্থনীতি মনস্ক কূটনীতিক। তিনি তার ক্যারিয়ারের অর্থনৈতিক বিষয়ক কূটনীতির দিকেই বেশি মনোযোগী ছিলেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার আগে তিনি প্রিন্সিপাল ডেপুটি এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি হিসেবে কাজ করেছেন এবং তিনি অর্থনীতি এবং বাণিজ্য বিষয়টি দেখাশোনা করতেন স্টেট ডিপার্টমেন্টে। আর এর আগে যে সমস্ত কার্যকলাপের সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন তার সবগুলোই অর্থনীতি নীতি-কৌশল বিষয়ক। তিনি মার্কিন বাণিজ্য নীতি এবং এ নিয়ে দরকষাকষির ক্ষেত্রেও ভূমিকা পালন করেছিলেন। এছাড়া আরেকটি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো যে, তিনি ভারতে কনসালটেন্ট জেনারেল হিসেবে মুম্বাইতে চাকরি করেছেন। আর তার এই ক্যারিয়ার বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ব্যাপারে একটি সুনির্দিষ্ট নীতি এবং লক্ষ্য থেকে পিটার ডি হ্যাসকে মনোনয়ন দিয়েছেন।

গত এক দশকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি করেছে এবং বাংলাদেশে এখন বড়বাজার। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ে যে চাপ দিচ্ছে তার পুরোটাই যে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ইত্যাদির কারণে সেটি সঠিক নয়। আবার জঙ্গিগোষ্ঠী, বিএনপি-জামায়েত যে লবিস্ট নিয়োগ করে মার্কিন প্রশাসনকে প্রভাবিত করছে এমন বক্তব্য পুরোটা সঠিক নয়। বরং বাংলাদেশের চাপ প্রয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বাজার দখল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম একটি লক্ষ্য বলে কূটনৈতিক মহল মনে করেন। বিশেষ করে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের অর্থনৈতিক সম্পর্কের যে আধিক্য এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিচলিত এবং উদ্বিগ্ন করেছে। আর সে কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের উপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে বলে অনেকেই মনে করেন। আর এই মনে করার সত্যতা পাওয়া যায় পিটার ডি হ্যাসের মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনয়নের মধ্যে দিয়ে। কারণ তিনি বাণিজ্য নীতি এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়ন ক্ষেত্রে একজন বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের কূটনীতিক হিসেবে পরিচিত। তাহলে বাংলাদেশের সঙ্গে কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যিক সম্পর্ক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক কি আরো বাড়াতে চায়? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে তার ব্যবসা বাণিজ্যর সম্প্রসারণ ঘটাতে চায়। আর এজন্য কি পিটার ডি হ্যাসকে মনোনয়ন দেওয়া হল?

পাশাপাশি পিটার ডি হ্যাস এক সময় ভারতে কাজ করেছেন। এই অঞ্চলে মার্কিন-ভারত যৌথভাবে কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে চায়। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে চীনের আধিপত্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অনেক বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিভিন্ন দেশে চীন এখন অর্থনৈতিক কূটনীতির মাধ্যমে আধিপত্য বিস্তার করছে এমন কথা বলছেন পশ্চিমা বিশেষজ্ঞরা। আর সে কারণেই এই অঞ্চলের সঙ্গে সম্পর্কিত একজন ব্যক্তিকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনয়ন করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আসলে বাংলাদেশকে একটি নতুন বার্তা দিতে চায়। আর সেই বার্তাটি হল, চীন থেকে বাংলাদেশকে এখন একটু হলেও দূরে থাকতে হবে এবং ভারত ও পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে আরো নৈকট্য করতে হবে। পিটার হ্যাস বাংলাদেশে এসে তার মিশনে কতটুকু সফল হন সেটিই এখন দেখার বিষয়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭