লিট ইনসাইড

ভাষা সৈনিক জহির রায়হানের অন্তর্ধান দিবস


প্রকাশ: 30/01/2022


Thumbnail

বাঙ্গালীর মুক্তি সংগ্রামের অন্যতম অগ্রদূত  ভাষা সৈনিক, চলচ্চিত্র নির্মাতা, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও যোদ্ধা জহির রায়হানের আজ অন্তর্ধান দিবস। তাঁর ভাই শহীদুল্লা কায়সারসহ আরও অনেককে বিহারিরা আটকে রেখেছিলো। এই খবর পেয়ে জহির রায়হান ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি সকালে তাঁর ভাইকে খুঁজতে মিরপুর ১২  নাম্বারের দিকে যান। সেখান থেকে আর আর ফেরা হয়নি জহির রায়হানের।

১৯৩৫ সালের ১৯ আগস্ট বর্তমান ফেনী জেলার সোনাগাজি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পারিবারিক নাম আবু আবদার মোহাম্মদ জহিরুল্লাহ। বড় ভাই সাহিত্যিক, সাংবাদিক শহীদুল্লাহ কায়সারকে স্বাধীনতার আগ মুহূর্তে আলবদর বাহিনী অপহরণ করে। বড় ভাইকে খুঁজতে মিরপুরে গিয়ে চিরতরে হারিয়ে যান এই ভাষা সৈনিক, চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান।

১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তিনি তার পরিবারের সাথে কলকাতা হতে বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) স্থানান্তরিত হন। তিনি ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে বাংলায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে দু'বার বিয়ে করেন, ১৯৬১ সালে সুমিতা দেবীকে এবং ১৯৬৬ সালে তিনি সুচন্দাকে বিয়ে করেন, দুজনেই ছিলেন সে সময়কার বিখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেত্রী।

তিনি ছিলেন ভাষা আন্দোলনের প্রথম সারির সক্রিয় নেতাদের একজন। এমনকি ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার পক্ষের জনমতের নেতৃত্বেও ছিলেন তিনি। পরে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে কলকাতায় ফিরে যান জহির রায়হান। সেখানে থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রচারাভিযান ও তথ্যচিত্র নির্মাণ শুরু করেন। তার বেশিরভাগ চলচ্চিত্রই ভাষা, দেশ ও স্বাধীনতার কথা বলে।

জহির রায়হান বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন এবং শুরু হয় তাঁর সাহিত্যিক ও সাংবাদিক জীবন। তিনি ১৯৫০ সালে যুগের আলো পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। খাপছাড়া পত্রিকায় লেখালেখির মাধ্যমে তার সাংবাদিকতা জীবনের শুরু। ১৯৫৫ সালে তার প্রথম গল্পগ্রন্থ সূর্যগ্রহণ প্রকাশিত হয় এবং জাগো হুয়া সাভেরা ছবিতে সহকারী হিসেবে কাজ করার মাধ্যমে ১৯৫৭ সালে চলচ্চিত্র জগতে তাঁর পদার্পণ ঘটে। এছাড়াও কখনো আসেনি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ১৯৬১ সালে তিনি রূপালী জগতে পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯৬৪ সালে তিনি পাকিস্তানের প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র সঙ্গম নির্মাণ করেন (উর্দু ভাষার ছবি) এবং পরের বছর তার প্রথম সিনেমাস্কোপ চলচ্চিত্র বাহানা মুক্তি দেন।

মুক্তিযুদ্ধের কিছুকাল আগে তার নির্মিত ‘জীবন থেকে নেয়া’ চলচ্চিত্র মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যার প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘স্টপ জেনোসাইড’ নির্মাণ করে সাড়া ফেলেছিলেন তিনি।

এ ছাড়াও ‘কখনো আসেনি’, ‘সোনার কাজল’, ‘কাঁচের দেয়াল’, ‘বাহানা’, ‘বেহুলা’, ‘আনোয়ারা’, ‘সঙ্গম’ প্রভৃতি তার কালজয়ী চলচ্চিত্র। তার রচিত উপন্যাসের মধ্যে ‘হাজার বছর ধরে’, ‘আরেক ফাল্‌গুন’, ‘বরফ গলা নদী’, ‘শেষ বিকেলের মেয়ে’, ‘আর কত দিন’, ‘কয়েকটি মৃত্যু’, ‘তৃষ্ণা’ উল্লেখযোগ্য। ‘সূর্য গ্রহণ’ তার সুপরিচিত গল্পগ্রন্থ।

সাহিত্য ও চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হন জহির রায়হান। উল্লেখযোগ্য স্বীকৃতি হলো— আদমজী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৪, হাজার বছর ধরে), নিগার (কাঁচের দেয়াল, শ্রেষ্ঠ বাংলা ছবি), বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৭১, সাহিত্য : মরণোত্তর, ১৯৭২ সালে ঘোষিত), একুশে পদক (১৯৭৭, চলচ্চিত্র : মরণোত্তর) ও স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (১৯৯২, সাহিত্য : মরণোত্তর)।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭