ইউক্রেন ইস্যুতে রুশ আগ্রাসন মোকাবিলা ও রাশিয়ার ওপর চাপ বাড়াতে পূর্ব ইউরোপে সেনা বাড়ানোর কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এবার বাইডেনের পথে হাঁটতে যাচ্ছে আরেক মার্কিন মিত্র দেশ যুক্তরাজ্য। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জানিয়েছেন, ইউরোপে মোতায়েন করা নিজেদের সেনা ও সামরিক সরঞ্জামের পরিমাণ বাড়াতে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোকে প্রস্তাব দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
গতকাল শনিবার এক বিবৃতিতে এমন ঘোষণা দেন বরিস জনসন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বলছে, আগামী সপ্তাহেই ন্যাটোর প্রধান কর্মকর্তাদের কাছে সামরিক উপস্থিতি বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে যাবে লন্ডন। পূর্ব ইউরোপে এই মুহূর্তে যুক্তরাজ্যের ১ হাজার ১৫০ জন সেনা মোতায়েন রয়েছেন। পাশাপাশি বাল্টিক দেশ এস্তোনিয়ায় রয়েছে যুক্তরাজ্যের নানা ‘প্রতিরক্ষামূলক অস্ত্র’। বরিস জনসনের প্রস্তাব আলোর মুখ দেখলে এই সেনা ও যুদ্ধাস্ত্রের পরিমাণ দ্বিগুণ করা হতে পারে।
প্রসঙ্গত, গত বছর থেকেই ইউক্রেন সীমান্তে সেনা সমাবেশ করেছে ক্রেমলিন। ইউক্রেনকে ঘিরে জোরদার করা হয়েছে রুশ সামরিক মহড়া। এসবের জেরে পশ্চিমাদের দেশগুলোর দাবি, ইউক্রেনে হামলা চালাবে রাশিয়া। যদিও এমন কোনো উদ্দেশ্যের বিষয় মস্কোর পক্ষ থেকে বারবার নাকচ করা হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে সেনা সংখ্যা বাড়ানোর ঘোষণা ক্রেমলিনের প্রতি যুক্তরাজ্যের একটি স্পষ্ট বার্তা বলে উল্লেখ করা হয়েছে বরিস জনসনের বিবৃতিতে। সেখানে বলা হয়, এই পদক্ষেপ বার্তা দিচ্ছে যে রাশিয়ার ‘শত্রুতার’ মুখে যুক্তরাজ্য সব সময় ন্যাটো মিত্রদের পাশে থাকবে। অস্থিতিশীল কোনো কার্যকলাপ সহ্য করা হবে না।
ইউক্রেনের নিজেদের ভবিষ্যৎ বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা রয়েছে উল্লেখ করে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী সপ্তাহে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীগুলোকে ইউরোপজুড়ে মোতায়েন করতে নির্দেশ দিয়েছি। জলে, স্থলে ও আকাশে ন্যাটো মিত্রদের সহায়তা করতে আমরা যে সক্ষম তা এর মধ্য দিয়ে নিশ্চিত করা হবে। এদিকে চলমান উত্তেজনা নিয়ে শিগগিরই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে কথা বলবেন বরিস জনসন।
এর আগে গত শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর শক্তি বাড়াতে কিছু সেনা পাঠাবেন তিনি। তবে সেনা সংখ্যা কত হবে তা নিশ্চিত করা হয়নি। যদিও ইউরোপে হাজারো মার্কিন সেনা রয়েছেন। তবে এসব সেনাদের বেশির ভাগই রয়েছেন ইউরোপের পশ্চিমাঞ্চলে।
ইউক্রেনকে নিয়ে রাশিয়ার চলমান তত্পরতার পেছনে রয়েছে ন্যাটো। ন্যাটোর সদস্য হতে জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে কিয়েভ। তবে এ নিয়ে আপত্তি রয়েছে মস্কোর। কোনোভাবেই প্রতিবেশী দেশটিকে ন্যাটোর অংশ হতে দিতে চায় না তারা। সবশেষ ইউক্রেন ইস্যু নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠকেও একই বিষয় তোলা হয়। ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য করা যাবে না—উত্তেজনা কমাতে মার্কিন সরকারের কাছে এমন প্রতিশ্রুতি চায় ক্রেমলিন। তবে তা নাকচ করে যুক্তরাষ্ট্র। সব মিলিয়ে ইউরোপের এ অঞ্চলে যুদ্ধ শুরুর আশঙ্কা দেখছেন সামরিক বিশ্লেষকেরা।