ইনসাইড থট

বরেণ্য উপাচার্যের সন্ধানে বাংলাদেশ


প্রকাশ: 30/01/2022


Thumbnail

দেশবাসী এখন বরেণ্য উপাচার্য চায়, ভালো নির্বাচন কমিশন চায়, প্রকৃত গণতন্ত্র এবং কথা বলবার স্বাধীনতা চায়। সংশোধন চায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। অনেকেই ফিরে পেতে চায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। আমরা কোথায় পাবো সেই বরেণ্য উপাচার্য? বরেণ্য উপাচার্য ছিলেন বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী। আমি যখন ওনাকে পেয়েছিলাম তখন তিনি মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান। আমার মনে আজও দাগ কেটে আছে ওনার সেই অমায়িক আতিথেয়তা। আমি একজন ছাত্র। তৃতীয় বর্ষের। অথচ আমি সেদিন ওনার বন্ধু হয়ে গিয়েছিলাম। জাতির পিতা শেখ মুজিব বঙ্গবন্ধু হয়েছেন জনগণকে ভালোবেসে। আমরা বঙ্গবন্ধুর আমলে যেভাবে স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারতাম, সত্যি কথা হলো সেই স্বাধীনতা এখন প্রশ্নবিদ্ধ । আবার কি আমরা সেইভাবে কথা বলতে পারবো ? সংশোধিত হবে ডিজিটিাল নিরাপত্তা আইন? কারা কেড়ে নিতে চায় আমাদরে সেই স্বাধীনতা? কারা পদদলতি করে ১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতার দলিল ? তারা কি বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত সৈনিক যারা ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশের বাইরে উপার্চায হয় ?

বরেণ্য আরেক ব্যক্তি বাংলাদেশ আইন কমিশনের চেয়ারম্যান সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খাইরুল হক। এই তো কদিন আগে এই সাবেক প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হলো। পত্রিকায় আমার একটি লেখা পড়ে আমাকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে গেছেন নিজের অফিসে। সেখান আরো বিচারপতিদের ডেকে এনে আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। আমি এতো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নয় বলে আমি কোনো কথা বলতে পারছিলাম না। কেবল একটি ফোন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান স্যারকে দাওয়াত দিলাম। আমাকে অবাক করে দিয়ে চলে এলেন দর্শন বিভাগের ক্ষুদ্র আয়োজনে। হ্যাঁ, আপনারা আরো অনেক বরেণ্য ব্যক্তির কথা জানেন। কিন্তু এমন বরেণ্য ব্যক্তির সংখ্যা অনেক কম আগের তুলনায়। কারণ একটি দেশে বারবার সামরিক শাসন। সেটা থেকে সৃষ্ট অস্থিরতা। সেই অস্থিরতার ডামাডোলে এখনো ভাল মানুষগুলো কিংবা তাদের সন্তানদেরকে বিদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন।  এখানে যে সমাজ ব্যবস্থা চালু হয়েছে, ভালো মানুষ থাকবার পরিবেশ নাকি নেই।  ভালো মানুষগুলোকে দেশে ফিরে আসতে বিমুখ করেছে। আর যাঁরা ফিরে আসে দেশের টানে তাঁরা পদে পদে অপমানিত।  

কারো মতে, যাদেরকে আমি ভালো মানুষ বলছি, বিদেশে কিছু করতে পারেনি বলে ফিরে এসেছে। আর ওই যে তেল -আর ঘির মূল্য সমান। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর র‍্যাংকিং নেই। কিন্তু  র‍্যাংকিং এ থাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ে আসা একজন শিক্ষককে নিগৃহীত হতে হয়। পিএইচডি না থাকলে উপাচার্য, ইউজসিরি চেয়ারম্যান হওয়া যায় এই দেশে।  তারা নানা ফতোয়া দেন।  তাদের দাপটে ভালো মানুষগুলো অসহায়।  তাঁদের খবর কি মহামান্য আর্চায রাখেন ? যদি রাখতেন তবে অয্যোগরা কিভাবে উপার্চায, প্রো উপার্চায, ট্রেজারার এর মত পদে আসীন হন?

এখানে সারাজীবন ফাঁকি দিয়ে বন্ধুত্ব বিক্রি করে উপাচার্য হওয়া যায়, আর বিদেশে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপনের অনুমতি নাকচ করা হয়। 
সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সহকারী অধ্যাপক ছুটি না পাবার বেদনায় নাকি হার্ট ফেল করে মারা গেছেন। ৫ বছরেও কেন তিনি পিএইচডি শেষ করতে পারেননি সেই অপরাধে তার ছুটির আবেদন নাকচ। কারো কারো মতে শিক্ষা ছুটি  মানে সাগর পাড়ে বেড়ানো আর লিয়েন মানে চাকরি খোঁজা। শ্রেষ্ঠ কাজের মূল্য এভাবেই আমরা দিয়ে থাকি।  বাংলাদেশে ২ বছর ১১ মাসে পিএইচডি হয়ে যায়, ৫-৬টি ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ের উপর চ্যাপ্টার লিখে দিলে পিএইচডি হয়, যেখানে আমলাদের জন্য পিএইচডি একটি উপহার, সেখানে কেমন করে বরেণ্য ব্যক্তিরা উপাচার্য হবেন! সেখানে ৫ বছরতো বেশি! আরো অনেক কাহিনী আছে যা দিয়ে মহাকাব্য রচনা যায়। 

আমি আমার অভিজ্ঞতার কথা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাবররে সহর্কমীদের শোনালাম।  আমি একবছরে একটি মার্স্টাস লিডিং টু পিএইচডি প্রোগ্রামে অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে যাই ক্যানবেরা।  ক্যানবেরা ক্যাপিটাল সিটি। আমি ভেবেছিলাম সেটা লন্ডন নিউ  ইউর্কের মতো জমজমাট হবে। আমার পর্যাপ্ত টাকা ছিল না।  ভেবেছিলাম কাজ করে পড়াশোনা করবো।  কিন্ত ক্যানবেরা গিয়ে হতবাক।  সেখানে কিছুই নেই।  বাধ্য হয়ে সিডনি চলে এলাম।  এম পি এস শেষ করবার পর পিএইচডির জন্য আবেদন করলাম।  আমাকে জানানো হলো আমার এম পি এস ডিগ্রী প্রোগ্রামে ২৫% গবষেণা নেই।  সুতরাং পিএইচডি করতে হলে আগে মার্স্টাস রিসার্চ করতে  হবে।  আমার মাথায় বাজ পড়লো।  পিএইচডিতে এনরোল না হলে ইউনিভার্সিটি আমাকে ছুটি, বেতন  বা ভাতা দিবে না। মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালালাম পিএইচডির  জন্য।  এডমিশন হয়ে গেল বটে তবে কাজ নেই।  এভাবে ১০ মাস চলে গেলো।  এর পর এলো খালেদা জিয়ার জোট সরকার।  তারা এসে নির্দেশ দিলো দেশে ফিরে আসতে হবে। অনেকে চাকরি হারানোর ভয়ে ফিরে এল। সেই সময় খালেদা জিয়া গোপালগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিলো।  

আমি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলাম।  বন্ধুর সঙ্গে বঙ্গবন্ধু পরিষদের নামে সোনার বাংলা পত্রিকা বের করতে লাগলাম।  খালেদা জিয়া সিডনী গেলে প্রতিবাদ করলাম।  বাংলাদেশের কোথাও আওয়ামী লীগ দাঁড়াতে পারছে না জোট সরকাররে তান্ডবে।  আমি পড়াশোনা প্রায় ছেড়ে দিয়ে নেমে পড়লাম সোনার বাংলা প্রকাশ ও বাংলাদশে আওয়ামী লীগের  রাজনীতিতে। স্কলারশিপ নেই তাই তত্বাবধায়ক পরার্মশ দিল এম এ করে আবার পিএইচডি এনরোল করতে।  তাতে করে টিউশন ফি দেয়া লাগবেনা।  এক দেড় বছরে পিএইচডি হয়ে যাবে।  তাঁদের কথা শুনলাম।  এমএ করে আবার পিএইচডি শুরু করলাম।  সাড়ে সাত বছর পর ফিরে এলাম পিএইচডি ছাড়া।  এর পর খণ্ডকালীন উপায়ে ২০১০ সালে পিএইচডি শেষ করলাম। পিএইচডি সনদ আনতে এবং পায়ের একটি অপারশেন করবার আবদেন করে পেলাম লালা বার্তা।  যথাসময়ে ফিরে না এলে চাকরি থাকবে না।  ২০০৭ সালে দেশে ফিরে ফকরুদ্দিন-মঈন সরকারের হাত থেকে গণতান্ত্রিক মুক্তির জন্য আন্দোলনে যোগ দিলাম।  সেই গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যারা কোথাও ছিলোনা তার হয়েছে উপার্চায কিংবা ওই রকম উচ্চ পদায়ন।  আর আমার ও আমার পরিবারের ভাগ্যে জুটেছে বঞ্চনা।  মঈন-ফকরুদ্দনি সরকাররে উপার্চায আমাকে ৬ মাস বিনা বেতনে রেখেছেন। দেননি কোনো উৎসব ভাতা।  

জোট সরকার, জরুরি আইনে সরকার বিতাড়িত করতে গিয়ে আমার জীবনের মূল্যবান সময় চলে গেছে।  তবুও দুঃখ নেই।  কারণ বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদরে বিচার হয়েছে, যুদ্ধাপরাধীদের সাজা হয়েছে এবং নতুন একটি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়া খালেদার জেল হয়েছে।   

বিগত দুই সপ্তাহে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় অস্থির ছিল। এর কিছুদিন আগে  ২০১৯ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অস্থির ছিল।  সম্প্রতিকালে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রলয় ঘটে গেলো।  মানুষ এসব এখন ঘৃণা করে। একজন বরেণ্য উপাচার্য খুঁজছে সকলে শাহজালাল ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য। কিন্তু বরেণ্য ব্যক্তিদের ভয়- মান সন্মান নিয়ে মেয়াদ শেষ করে যেতে পারবো তো? 
যারা লবিতে এগিয়ে আছেন তারা কেউই বরেণ্য উপাচার্য্য যোগ্য নন বলেই আমার ধারণা।  তারাই উপার্চায হবেন এবং র্দুজনদরে বন্ধু হয়ে নিজের আখেরাত গোছাবেন।  বরেণ্য উপার্চায বর্তমান উপার্চায নিয়োগ প্রক্রিয়াতে সম্ভব নয়।  ৭৩ এর অধ্যাদেশ গণতান্ত্রিক। কিন্তু যে সমাজে মেধাবী ছাত্রটি ক্যাপ্টেন না হয়ে যে চকলেট দিতে পারে সে ক্যাপ্টেন হয়।  যে সমাজে সিগারেট প্যাকেটে ১০০ টাকার নোটে ভোট বিক্রি হয় , যে সমাজে একজন সিনেট মেম্বার  কিছু সুবিধার বিনিময়ে ভোট বিক্রি করেন সেখানে বরেণ্য উপার্চায পাওয়া যাবে না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ১৯৭৩ সালের অধ্যাদশে অচল। শিক্ষকদের স্বাধীনতার দলিল ১৯৭৩ এর অধ্যাদেশ এখন ভুলুন্ঠিত আমলাতন্ত্রের নিষ্পেষণে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭