ইনসাইড পলিটিক্স

সরকারকে চতুর্মুখী চাপে ফেলার নীলনকশা


প্রকাশ: 30/01/2022


Thumbnail

টানা ১৩ বছর দেশ পরিচালনা করল আওয়ামী লীগ সরকার। তৃতীয় মেয়াদে তিন বছর পূর্তি হলো। এই তৃতীয় মেয়াদে সময়ে আওয়ামী লীগ সরকার নানা রকম চাপে আছে। একদিকে করোনার প্রকোপ, অন্যদিকে মন্ত্রীদের অদক্ষতা, পাশাপাশি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে নানা চাপ ক্রমশ বাড়ছে। আর এই চাপ সৃষ্টির ক্ষেত্রে যে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং তার সহযোগী জামায়াত সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করছে, এটি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী একাধিক বক্তৃতায় বলছেন। এমনকি জাতীয় সংসদের সদ্য সমাপ্ত শীতকালীন অধিবেশনেও প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, সরকারের বিরুদ্ধে নানারকম দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায় যে, সরকারের ওপর চতুর্মুখী চাপ দেওয়ার চেষ্টা করছে বিএনপি-জামায়াত এবং এই চাপটি সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রেক্ষাপটে দেয়ার একটা নীলনকশার বাস্তবায়ন চলছে। সরকারের ওপর যে চতুর্মুখী চাপের চেষ্টা করছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে-

১. আন্তর্জাতিক চাপ: গত পাঁচ বছর ধরে বিএনপি-জামায়াত জোট নিবিড়ভাবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কাজ করছে সরকারের ইমেজ নষ্টের জন্য। বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পর থেকেই জামায়াত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করে। আর এই অপপ্রচারের পরবর্তীতে যুক্ত হয় লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া এবং তার দল। আর এই চাপের প্রধান লক্ষ্য হলো, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশ সম্পর্কে ভুল বার্তা দেওয়া, বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই, মানবাধিকার সংরক্ষিত নয়, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই ইত্যাদি তথ্য-উপাত্ত গুলোকে মুখরোচক ভাবে উপস্থাপন করা এবং এর ফলে যেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হয় এবং প্রভাবশালী দেশগুলো বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

২. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম: বিএনপি গত প্রায় ছয় বছর ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে পরাজিত করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি এখন পুরোপুরি ভাবে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে বিএনপি-জামায়াত গোষ্ঠীর হাতে এবং তারা যে যেভাবে পারছে সে সেভাবে সরকারের বিরুদ্ধে নানারকম কুৎসিত নোংরা মিথ্যাচার করছে। আর এ সমস্ত অপপ্রচারের ফলে মানুষের মধ্যেও নানা রকম বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। অসত্য বক্তব্য লাগামহীনভাবে প্রচারের ফলে অনেকে এটিকে বিশ্বাস করতেও শুরু করেছো। আর সামাজিক মাধ্যমের এই নিয়ন্ত্রনহীন অপপ্রচারের কারণে এখন সরকার কিছুটা হলেও চাপে পড়ছে।

৩. প্রশাসনের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা বিএনপি-জামায়াত গোষ্ঠী: বাংলাদেশের প্রশাসনে এখন দৃশ্যত সবাই আওয়ামী লীগ। অতি আওয়ামী লীগ হয়ে তারা প্রায়ই সরকারের গুণকীর্তন করছে। কিন্তু ভিতরে ভিতরে তারা আসলে কতটুকু সরকারের ভালো চায়, সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রশাসনের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি-জামায়াত সমর্থকরা ক্রমশ প্রকাশ্য হচ্ছে এবং তারা এমন কিছু কর্মকাণ্ড করছে যে কর্মকাণ্ড গুলোতে সরকারের ইমেজ নষ্ট হচ্ছে এবং সরকার বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে বাধ্য হচ্ছে। আর এই ঘরের শত্রু বিভীষণরা ক্রমশ প্রকাশ্য রূপ ধারণ করছে।

৪. বুদ্ধিজীবী এবং সুশীল সমাজকে সক্রিয় করা: বিএনপি-জামায়াত জোট বিভিন্ন বুদ্ধিজীবী এবং সুশীল সমাজকে সক্রিয় করছে। যেমন- ধরা যাক নির্বাচন কমিশন গঠন আইন নিয়ে সুশীল সমাজ বিএনপির ভাষায় কথা বলছে। আবার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যে অবস্থান নিচ্ছে সেই অবস্থানকে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে সমর্থন করছে বাংলাদেশের একটি সুশীল গোষ্ঠী। ফলে এটি বাংলাদেশের সরকারের ওপর এক ধরনের চাপ তৈরি হচ্ছে।

এই চতুর্মুখী চাপ দিয়ে সরকারকে কোণঠাসা করেই আন্দোলনের কথা ভাবছে। বিএনপি নেতারাও স্বীকার করছেন যে, তারা বিভিন্নভাবে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন। সেই চাপের ফলে সরকার এখন কিছুটা হলেও কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। তবে সরকারের দায়িত্বশীলরা বলছেন, এ ধরনের চাপে কোণঠাসা হওয়ার প্রশ্নই আসেনা। বরং সরকার এ চাপ মোকাবিলা করেই এগিয়ে যাবে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭