ইনসাইড টক

‘একজন যদি অপরাধীও হয়, তাহলেও তাকে গুলি করা যাবে না’


প্রকাশ: 31/01/2022


Thumbnail

মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেছেন, যেভাবে মেজর (অব:) সিনহাকে গুলি করা হয়েছে সেটি আমাদের সবাইকে উদ্বিগ্ন করেছে।  একজন যদি অপরাধীও হয়, তাহলেও তাকে গুলি করা যাবে না। তিনি এমন কোনো ধরনের হুমকির সৃষ্টি করেন নাই যার জন্য তাকে গুলি করতে হবে। এ রকম পরিস্থিতি কিন্তু মেরিন ড্রাইভে বিরাজ করে নাই।

মেজর (অব:) সিনহা হত্যার রায় ও ওসি প্রদীপের মানবাধিকার, বিচারকের প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান এসব কথা বলেছেন। পাঠকদের জন্য অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর নিজস্ব প্রতিবেদক অলিউল ইসলাম।

অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, আমরা সিনহা সাহেবের হত্যাকাণ্ডের পর মনে করেছিলাম যে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না। কিন্তু এরপরেও দেখলাম এ রকম ঘটনা ঘটেছে। অর্থাৎ একজন প্রাক্তন সামরিক কর্মকর্তা বা অফিসারের ভাগ্যে যদি এমনটা ঘটে, তাহলে সাধারণ মানুষের ভাগ্যে কি আছে, তা এমনিতেই অনুমান করা যায়। এ ঘটনার পর আমরা দেখলাম দুই বাহিনীর প্রধানকে কক্সবাজার যেতে হয়েছে এবং এক সঙ্গে কথা বলতে হয়েছে। আমরা ভেবেছিলাম এ ধরনের হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশে আর ঘটবে না। কিন্তু আমাদের সেই আশায় দুরাশায় রূপান্তরিত হয়েছে। আমাদের র‍্যাবের উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, এটা তো ছোট্ট কোন ইস্যু না। আমরা যতই ছোট করে দেখবার চেষ্টা করি না কেনো এটা আমাদের রাষ্ট্রের, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর সামগ্রিকভাবে কালি লেপন হয়ে গিয়েছে। এটা আমাদের পুরো জাতির জন্য অপমানজনক ঘটনা ঘটেছে।

তিনি আরও বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে সবটাই সঠিক, তা কিন্তু নয়। তাদেরও নিজেদের রাজনৈতিক বিবেচনা থাকে। এরপরেও নাগরিক হিসেবে আমরা যতটুকু জানি, এই ঘটনাগুলো কিন্তু ঘটেই চলেছে এদেশে। সুতরাং এখানে মুখ লুকিয়ে রাখলেই তো সব চাপা দেওয়া যায় না বা সত্য মিথ্যা হয়ে যায় না। আমরা অন্ধ হলেও প্রলয় বন্ধ হবে না। সিনহা হত্যাকাণ্ডের পরও কিন্তু এসব ঘটনা বন্ধ হয়নি। যারা ক্ষমতাবান, যারা শাসকশ্রেণী, তাদের খুব একটা বোধোদয় হয়েছে বলে তো মনে হচ্ছে না। 

এ হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে মিডিয়া ট্রায়ালের বিষয়ে তিনি বলেন, সিনহা হত্যাকাণ্ডটিকে কেন্দ্র করে এতো পরিমাণ মিডিয়া ট্রায়াল হয়ে গেছে যে, বিচারক প্রভাবমুক্ত হয়ে রায় দিতে পারবে কিনা, এ নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। মিডিয়া ট্রায়ালের কারণে মামলার রায় হওয়ার আগেই জনগণ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। তাদের মধ্যে এক ধরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেছে যে কি হতে পারে। এখন অবস্থা এমন জায়গায় পৌঁছে গেছে যে, যদি পাবলিক পারসেপশনের বিপরীত কোনো রায় ঘোষিত হয়, তাহলে পরে জনমনে অস্বস্থি দেখা দিবে। 

রায় দেওয়ার ক্ষেত্রে বিচারকের প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে ড. মিজানুর রহমান বলেন, বিচারপতিও একজন মানুষ। যেহেতু বিচারক একজন মানুষ এবং সামাজিক জীব সেহেতু তিনি পারিপার্শ্বিকতার বাহিরে আলাদা জীবনযাপন করেন না। ওনি বাংলাদেশের সমাজেই বসবাস করেন। তার পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে নিয়েই তিনি বসবাস করেন। সুতরাং পারিপার্শ্বিকতার প্রভাব ব্যক্তির উপর পড়তে বাধ্য এবং এর থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থাকা যায় না বলেই আমার মনে হয়। আমাদের মনে রাখতে হবে যে কোনো বিচারের ক্ষেত্রে বিচারকদের অবজেক্টিভ থাকার কথা বলা হলেও মানুষ হওয়ার কারণে অনেক সময় সাবজেক্টিভ উপাদান একটু না একটু থেকেই যায়। ওনি সব কিছুর ঊর্ধ্বে উঠে বিচার করতে গেলেও তিনি যখন ওসি প্রদীপকে দেখবেন, তার কথা শুনবেন, এগুলো কি তিনি স্বাভাবিকভাবে নিতে পারবেন? ওসি প্রদীপের অতীত কর্মকাণ্ড যে বিচারকের মনের ভেতরে একটি নেতিবাচক প্রতিফলন ফেলবে না, এরও তো গ্যারান্টি নেই। যেভাবে এতদিন ধরে মিডিয়াতে বিষয়টিকে জিইয়ে রাখা হয়েছে, যেভাবে চুলচেড়া বিশ্লেষণ করা হয়েছে, তাতে করে এই মামলাটিতে বিচারকের প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭