ইনসাইড থট

সিনহা হত্যার বিচার: শেখ হাসিনাই এদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন


প্রকাশ: 31/01/2022


Thumbnail

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতির স্থলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন। যে বাংলাদেশে বহু বছর খুন-রাহাজানির কোন বিচার হতো না, সেই বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকার প্রকৃত আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই বাংলাদেশে খুনিরা বছরের পর বছর প্রকাশ্য দিবালোকে ঘুরে বেড়াতো, কোন মানুষ খুনিদের বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য দিতে সাহস পেতো না, রাষ্ট্রপক্ষের আন্তরিকতার অভাবে মামলা সমূহ বছরের পর বছর ঝুলে থাকতো, সেই বাংলাদেশে আজ প্রতিটি খুনের বিচার হচ্ছে শেখ হাসিনার সরকারের আন্তরিকতার কারণে। শেখ হাসিনার সরকারে খুন করে কেওই রেহাই পায়নি। খুনি যত শক্তিশালীই হউক না কেন, তার ক্ষমা নেই। জিয়া-মোশতাকরাই বাংলাদেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু করেছিল। খুনিরা শুধু বিচার থেকেই রেহাই পায়নি, তাদেরকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করেছিল, পুরস্কৃতও করেছিল।

বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে খুনের দায়ে অভিযুক্ত ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম প্রধানকেও জাতির পিতা ক্ষমা করেননি। তার বিচার হয়েছিল। অথচ অবৈধ শাসক জেনারেল জিয়া তাকে ক্ষমা করে দিয়ে তাকে জেল থেকে মুক্ত করেছিল। 

সপরিবারে জাতির পিতার হত্যার বিচার জিয়া- মোশতাক আইন করে বন্ধ রেখেছিলো । তারা দুজনেই এই হত্যাকাণ্ডের মূল মন্ত্রণাদাতা ছিল । জাতির পিতার হত্যার বিচার বন্ধে জারিকৃত ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স নামে  নির্মম ও অসভ্য আইন বাতিলের অনেক আন্দোলন হয়েছিল নব্বইয়ের দশকে। কিন্তু খালেদা জিয়ার সরকার এই আইন বাতিল করতে দেয়নি। যারা আজ বাংলাদেশে আইনের শাসন আর ন্যায় বিচার নিয়ে কথা বলেন, তারা কি ভুলে গেছে এদেশে সপরিবারে জাতির পিতার হত্যার বিচার চেয়ে থানায় মামলা করা যায়নি দীর্ঘ ২১ বছর। 

জিয়ার শাসনামলে সেনা অফিসার ও সৈনিক হত্যার মহোৎসব চলেছিল। অসংখ্য সেনা সদস্যকে প্রহসনমূলক বিচারে হত্যা করা হয়েছিল । অসংখ্য মানুষকে গুম করা হলো। সেই হত্যার এবং গুমের বিচার করা হয়নি। তাদের পরিবার স্বজন আজও কাঁদে। সংবিধান স্থগিত করে দেশের প্রচলিত আদালত সমূহ স্থগিত রেখে জেলায় জেলায় মার্শাল ল কোর্ট স্থাপন করে বিচারের নামে প্রহসন করা হলো। পরবর্তীতে পঞ্চম সংশোধনীতে তাদের এসকল অবৈধ ও অসাংবিধানিক কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দেয়া হলো।

জেনারেল এরশাদের আমলেও সত্যিকার অর্থে ন্যায় বিচার ছিল না। তবে জিয়ার আমলের মতো এতো নির্মম অবস্থা ছিল না । খালেদা জিয়ার প্রথম মেয়াদে সারের দাবিতে আন্দোলনরত কৃষককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। উত্তরবঙ্গে ইয়াসমিনকে ধর্ষণ এবং হত্যা করা হয়েছিল । খালেদা জিয়ার ঐ মেয়াদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রীতিমতো খুনের উৎসবে পরিণত হয়েছিল। চুন্নু, রাজু, মামুন, মাহমুদ, গালিব, লিটন, মাহবুব, মিজান, আলোক সহ আরও বেশ কয়েকজন ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে খুন হয়েছিল। এই সকল হত্যাকাণ্ডে খালেদা জিয়ার সরকারের লোকজন জড়িত ছিল। এসবের কোন বিচার হয়নি।

খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় মেয়াদে সারাদেশে আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের হত্যার অভিযান শুরু হয়েছিল। সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া, আহসানুল্লাহ মাস্টার, নাটোরের নেতা মমতাজ সহ সারাদেশে অসংখ্য আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল। এছাড়া ২০০১ এর নির্বাচনের পর সারাদেশে আওয়ামী লীগ নেতা কর্মী এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের অসংখ্য  মানুষকে বিএনপি- জামাতের সন্ত্রাসীরা হত্যা করেছিল। ২১ আগস্টে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সহ পুরো আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে হত্যা করতে চেয়েছিলো। সেখানে আওয়ামী লীগ নেতা আইভি রহমানসহ ২৪ জন নেতা-কর্মী নিহত হয়েছিলেন। অসংখ্য মানুষ গ্রেনেড হামলায় আহত হয়েছিল । খালেদা জিয়ার ঐ আমলে অপারেশন ক্লিন হার্টে অসংখ্য মানুষকে বিনাবিচারে হত্যা করা হয়েছিল। পরবর্তীতে বিশেষ আইনের মাধ্যমে ঐ অপারেশনে  যুক্ত সবাইকে ইনডেমনিটি দেয়া হয়েছিল। বুয়েট ছাত্রী সনি'কে ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা ক্যাম্পাসে গুলি করে মারলো। এই সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার খালেদা জিয়ার সরকার করেনি। এই সকল হত্যাকাণ্ডে খালেদা জিয়ার সরকারের নগ্ন পৃষ্ঠপোষকতা ছিল।

শেখ হাসিনার সরকারের সময় সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার হচ্ছে । রাষ্ট্রপক্ষ থেকে কোন খুনি এবং অপরাধীকে প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে না । ফেনীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত হত্যাকাণ্ডে মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল, আওয়ামী লীগ নেতা সহ ১৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। পুরাণ ঢাকার বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডে ছাত্রলীগের ৮ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যাকাণ্ডে ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। শেখ হাসিনার সরকারের সময় সংঘটিত প্রতিটি হত্যাকাণ্ডেরই বিচার হচ্ছে । অপরাধী যে-ই হউক, তার রাজনৈতিক পরিচয় যা-ই হউক, তাকে বিচারের আওতায় আসতেই হবে। শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দর্শনে অপরাধীর কোন রাজনৈতিক পরিচয় নেই । তার একমাত্র পরিচয় সে অপরাধী- খুনি। তার বিচার হবেই।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ন্যায় বিচারে বিশ্বাসী, আইনের শাসনে বিশ্বাসী। সর্বশেষ মেজর সিনহা হত্যা মামলার রায়ে এটি আবার প্রতিষ্ঠিত হলো । খুনের দায়ে কর্মরত একজন ওসি এবং এসআই কে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো। বাংলাদেশের আইনের শাসনের ইতিহাসে এটি মাইল ফলক হয়ে থাকবে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭