ইনসাইড থট

আমার ছোট ভাইয়ের অর্জনে আমি গর্বিত


প্রকাশ: 02/02/2022


Thumbnail

অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ তার নিজের মেধা এবং পরিশ্রমের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে আজকে সমাজে শুধু একজন বিখ্যাত চিকিৎসক হিসেবে নয়, একজন মানব দরদী মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। এক-এগারোর সময় তার সাথে আমার সত্যিকারের ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। যখন নেত্রী সাব জেলে ছিলেন, তখন আমি এবং ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ একই গাড়িতে চড়ে অনেকবার রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনাকে দেখতে গিয়েছি এবং একসাথে ফিরে এসেছি। টেলিফোনে সে সময় তার সাথে অনেক কথা হতো, গল্প হতো। আস্তে আস্তে কখন যে সে আমার সত্যিকারের ছোট ভাইয়ে পরিণত হলো, তা আমি নিজেও বুঝতে পারিনি। সত্যিকারে আমার একদম ছোট ভাই বলতে যা বুঝায়, সে হচ্ছে সৈয়দ বোরহান কবীর। তার পরেই অধ্যাপক আব্দুল্লাহ। এ রকম আরও দু'একজন ছোট ভাই আছে। কিন্তু আমার হৃদয়ে অধ্যাপক আব্দুল্লাহ'র স্থান আলাদা। অধ্যপক আব্দুল্লাহ'র সবচেয়ে বড় গুণ তার কোনো ভনিতা নেই। তিনি যে এতবড় একজন বিদ্বান এবং বিজ্ঞ মানুষ, তা তিনি কোনোভাবেই অন্যকে বুঝতে দেন না। এমন কি তার চলা-ফেরা, কথা-বার্তা, কিংবা রোগী দেখার সময় তাকে দেখলে মনে হয় একজন সাধারণ মানুষ, যার সাথে যে কেউ যে কোনো কথা বলতে পারে, সুখ-দু:খ ভাগাভাগি করতে পারেন। এই সাধারণ মানুষটি আল্লাহর অশেষ রহমতে জীবনে অসাধারণ অসাধারণ কাজ করেছেন।  

মেডিকেলে পড়ার সময় তিনি সক্রিয়ভাবে ছাত্র রাজনীতি না করলেও সবসময়ই বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন। কিন্তু যখন নেত্রীর জন্য কঠিন সময় আসলো, যখন জননেত্রী সাব জেলে আছেন, তখন এই অধ্যাপক আব্দুল্লাহ-ই কিন্তু নেত্রীর মুক্তির জন্য মিডিয়ার সামনে অনেক কঠিন কঠিন বক্তব্য দিয়েছিলেন। সেসময় এ ধরণের বক্তব্য দিতে অনেক বড় বড় রাজনীতিবিদও ভয়ে কাঁপতেন। সেসময় একদিন অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আমাকে বলেছিল, 'মোদাচ্ছের ভাই, যখন একবার জননেত্রীর জন্য বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার জন্যে সত্যি কথা বলা শুরু করেছি, তখন আমার জীবনে যাই ঘটুক না কেন, আমি এটি থামাবো না'। সে তার কথা প্রমাণ করে দেখিয়েছে। একটি প্রতিকূল পরিবেশে সে তার যোগ্যতা এবং মেধা দিয়ে মিডিয়া ফেইস করেছে এবং সুন্দরভাবে মিডিয়াকে একের পর এক প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। এভাবে কথা বলতে বলতে একটা সময় সে মিডিয়া বান্ধবও হয়ে গেছে। তারপর বাকিটা তো ইতিহাস। নেত্রীকে জেল থেকে বের করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ও প্রধান অবদান নেত্রী নিজে। কেননা তিনি অনেক বিজ্ঞতা দিয়ে, অনেক রকম পন্থা অবলম্বন করেছিলেন। তিনি আমাদেরকেও কখনও বলেননি বা বলার প্রয়োজন মনে করেননি। উল্টো আমাদের মনে জোর রাখতেন, যেন আমরা না ঘাবড়াই। কিন্তু তখন আমি নিজে দেখেছি অধ্যাপক আব্দুল্লাহ নেত্রীর মুক্তির জন্য কতটা সংগ্রাম করেছিলেন। 

এরপর তিনি অনেকগুলো বই লিখেছেন। বাংলাদেশের একমাত্র লেখক, যার মেডিকেলের বই অন্য ভাষাতেও অনুবাদ হয়েছে এবং সে বইগুলো বিভিন্ন দেশে আন্ডারগ্রাজুয়েট ও পোস্ট গ্রাজুয়েট লেভেলে পড়ানো হয়। দিল্লি থেকে সে বইগুলো প্রকাশিত হয়। দেশের অনেকেই এটি জানে না। আমরা সবাই তাকে ভালো চিকিৎসক হিসেবেই জানি। কিন্তু তিনি একজন উন্নতমানের চিকিৎসা বিজ্ঞানী এবং আন্তর্জাতিক মানের লেখক, এটি অনেকেরই জানার মধ্যে নেই। তিনি যেখানেই হাত দিয়েছেন, কখনো রানার্স-আপ হননি, সবসময় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। সুতরাং আমি দাবি করতে পারি, আমি চ্যাম্পিয়নের বড় ভাই। সে চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করে এবং চ্যালেঞ্জকে কখনোই ভয় পায় না। 

যখন দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হয়, তখন অধ্যাপক আব্দুল্লাহ সস্ত্রীক করোনায় আক্রান্ত হয়। দুঃখজনক হচ্ছে করোনায় আক্রান্ত হয়ে তার স্ত্রী মৃত্যুবরণ করেন। আমি দেখেছি তার মুখের দিকে তাকানো যায় না কিন্তু তারপরেও তাকে দেখে মনে হয়েছে শোক পালনের থেকেও বোধহয় তার দায়িত্ববোধটা বেশি। এ শোকের সময়েও অনেকে টেলিফোনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে তার কাছে উপদেশ চেয়েছে এবং আমি তাকে কখনোই না বলতে শুনিনি। অর্থাৎ তার ভিতরটা জ্বলে যাচ্ছে কিন্তু বাহিরটা শক্ত আছে। এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সে খুবই নামকরা অধ্যাপক ছিলো। একুশে পদকসহ বিভিন্ন পদকে রাষ্ট্র তাকে সম্মানিত করেছে। এখন সে ইমেরিটাস অধ্যাপক হলো। তার বয়স, কর্মক্ষমতা এবং মেধা দিয়ে সে নিজেকে প্রমাণ করেছে যে, শুধু মেধা থাকলেই হবে না, মেধাকে সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় ব্যবহার করতে হবে। পাশাপাশি মেধার সাথে নিজের পরিশ্রমও যোগ করতে হবে। সে তরুণদের জন্য একজন রোল মডেল। তার জীবনটাকে যদি কোনো তরুণ-তরুণী অনুসরণ করে, তাহলে অনেকেই উপরে উঠতে পারবে। আমরা দেখে যেতে পারবো কিনা জানি না, কিন্তু একসময় অধ্যাপক আব্দুল্লাহর জীবনী লেখা হবে। তাকে অনেকেই গর্ব অনুভব করবে। আমার ছোট ভাইয়ের একের পর এক সাফল্যের কারণে আমি এখনই গর্বিত হচ্ছি । মানুষ তাকে সত্যিকারের মূল্যায়ন করা শুরু করেছে। এই জন্যে যারা তাকে মূল্যায়ন করেছে তাদেরকে আমি সাধুবাদ জানাই। বিশেষ করে তাকে ইমেরিটাস অধ্যাপক করার জন্য আমার ছাত্র এবং ছোটোভাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদসহ সিন্ডিকেটের প্রতিটি সদস্যকে ধন্যবাদ জানাই, পাশাপাশি সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া করি। নেত্রী সঠিক ব্যক্তিকেই চিনেছিলেন। তার সাদাসিধে কথাবার্তা নেত্রী বেশ পছন্দ করেন এবং সবচেয়ে বড় কথা হলো তার বিশ্বস্ততা, নেত্রী তাকে বিশ্বাস করেন। এর কারণ হচ্ছে তার সাথে এই জীবনে আমার অনেক কথা হয়েছে। কিন্তু গল্পের তালেও তাকে কোনো ধরণের অপ্রয়োজনীয় কথা বলতে শুনিনি। সাধারণত আমরা গল্পের তালে দুই-একটি মিথ্যে কথা বা অপ্রয়োজনীয় কথা বলে ফেলি,  যেটা কোনোভাবেই সঠিক নয়। কিন্তু অধ্যাপক আব্দুল্লাহর ভিতরে সেটা দেখিনি। 

অনেকেই বলেন অধ্যাপক আব্দুল্লাহর মতো ব্যক্তিত্ববান মানুষ এ সমাজে আরও দরকার। শত শত অধ্যাপক আব্দুল্লাহ দরকার। কিন্তু আসলে তা হয় না। এ রকম অধ্যাপক আব্দুল্লাহ একেক সমাজে একেক সময় একজনই আসে। আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি যেন সে দীর্ঘ জীবন পায়। নেত্রী যে দায়িত্ব দিয়েছেন, সে দায়িত্ব নিশ্চয়ই পালন করবে। পাশাপাশি দেশের জন্য, জনগণের জন্য সে যেনো আরও অবদান রাখে, এটি আামর বিশেষ দাবি। বিশেষ করে কমিউনিটি ক্লিনিকের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি হিসেবে তার প্রতি আমি আরও কৃতজ্ঞ যেহেতু  মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অধ্যাপক আব্দুল্লাহকে কমিউনিটি ক্লিনিকের এডভাইজারি বোর্ডেরও সদস্য করেছেন। পাশাপাশি ট্রাস্টি বোর্ড আমাকে সভাপতি করায় আগামী তিন চার দিনের মধ্যে আশা করি গেজেট হবে। যেহেতু কমিউনিটি ক্লিনিকের উপদেষ্টা পরিষদে অধ্যাপক আব্দুল্লাহ একজন সদস্য, সেহেতু আমাদের কার্যকরি কমিটির সভায় অতিথি হিসেবে সে আসবে এবং তার দ্বারা কমিউনিটি ক্লিনিকও উপকৃত হবে। সুতরাং তার দ্বারা মেডিকেলের ছাত্র-ছাত্রী, তরুণ প্রজন্ম, সর্বোপরি সাধারণ জনগণ উপকৃত হবে। নেত্রীর হৃদয়ে খুবই কাছের একটি প্রতিষ্ঠান হলো কমিউনিটি ক্লিনিক। এই কমিউনিটি ক্লিনিকেও অধ্যাপক আব্দুল্লাহর অবদান থাকবে। 

আমরা দোয়া করি আল্লাহ্‌ যেন সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে স্বর্গের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ স্থানে জায়গা দেন। কারণ তার জন্যই আমরা স্বাধীন দেশ পেয়েছি , তার জন্যেই আমরা বিভিন্ন জন বিভিন্ন পদে  বসতে পেরেছি। এ জন্যই  অধ্যাপক আব্দুল্লাহ নিজেও যখন ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে সম্মানিত হয়েছেন, তিনিও বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করেছেন এবং একই সাথে বঙ্গবন্ধু কন্যা, রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। আমরাও চাই রাষ্ট্র নায়ক দীর্ঘজীবি হউক এবং রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিয়ে আমাদের দেশ উন্নত দেশ না হওয়া পর্যন্ত তিনি দেশ পরিচালনা করুক। তাতে যতদিন-ই লাগুক,তাকে এই কষ্টটা করতে হবে। সকলে অধ্যাপক আব্দুল্লাহর জন্য দোয়া করবেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭