ইনসাইড পলিটিক্স

বিএনপির অডিট রিপোর্ট প্রতারণা


প্রকাশ: 02/02/2022


Thumbnail

বিগত ১০ বছরে নির্বাচন কমিশনে দাখিলকৃত অডিট রিপোর্টে তথ্য গোপনসহ জালিয়াতির প্রমাণ মিলেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) বিরুদ্ধে। বিশেষ করে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ ও কোটি কোটি টাকা খরচের বিষয়টি নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া রিপোর্টের হিসাবে যুক্ত নেই। ফলে এই প্রশ্ন অবধারিতভাবেই ওঠে যে, এই টাকা বিএনপি কোথায় পেল? বিদেশি ফার্মগুলোকে কিভাবে তারা এত টাকা পেমেন্ট করলো? এই টাকার উৎস নিয়ে ইতোমধ্যে জনমনে ব্যাপক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে বিষয়টি দেশের প্রচলিত আইন ও একটি রাজনৈতিক দলের নৈতিকতার প্রশ্নে কতটুকু যুক্তিযুক্ত তা নিয়ে নাগরিক মহলে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। 

গত কয়েকদিন ধরেই বিএনপি-জামাতের দেশবিরোধী ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বিদেশি লবিস্ট নিয়োগের বিষয়টি বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচিত হয়েছে। গণমাধ্যম থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সর্বত্র এটি টক অফ দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মহান জাতীয় সংসদে বিষয়টি আলোচনা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেছেন, লক্ষ লক্ষ ডলার খরচ করে দেশের ভাবমূর্তি ও আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই বিএনপি বিদেশি লবিষ্ট নিয়োগ করেছে। 

২০২০ সালে বিএনপির নির্বাচন কমিশনে বিএনপির জমা দেওয়া আয়-ব্যয়ের হিসাব থেকে জানা যায়, ওই বছরে দলটির আয় ছিল এক কোটি ২২ লাখ ৫৩ হাজার ১ শত ৪৯ টাকা টাকা। বিপরীতে দলটি ব্যয় ধরেছে ১ কোটি ৭৪ লক্ষ ৫২ হাজার ৫ শত ১৩ টাকা। এ থেকে বুঝা যায় ঐ বছরে আয়ের ঘাটতি ছিল ৫১ লক্ষ ৯৯ হাজার ৩ শত ৬৪ টাকা। আবার ২০১৯ সালে দাখিলকৃত হিসাবে দেখা যায়, দলটির আয় ছিল ৮৭ লক্ষ ৫২ হাজার ৭ শত ১০ টাকা। অপরদিকে ওই বছরে ব্যয় ছিল ২ কোটি ৬৬ লক্ষ ৮৬ হাজার ১ শত ৩৭ টাকা। এ থেকে বুঝা যায় ওই বছরে আয়ের ঘাটতি ছিল এক কোটি ৭৯ লাখ ৩৩ হাজার ৪ শত ২৭ টাকা। ২০১৮ সালে আয় ছিল ৯ কোটি ৮৬ লক্ষ ৫৬ হাজার ৩ শত ৮০ টাকা, ব্যয় ছিল ৩ কোটি ৭০ লক্ষ ২৯ হাজার ১ শত ৪৩ টাকা। ২০১৭ সালে আয় ছিল ৯ কোটি ৪৬ লক্ষ ২৪ হাজার ৯ শত ২. টাকা, ব্যয় ছিল ৪ কোটি ১৯ লক্ষ ৭১ হাজার ৯ শত ৫৪ টাকা। ২০১৬ সালে আয় ছিল ৪ কোটি ১৩ লক্ষ ৬৮ হাজার ৭শত ৩০ টাকা, ব্যায় ছিল ৩ কোটি ৯৯ লক্ষ ৬৩ হাজার ৮ শত ৫২ টাকা। 

বিগত বছরগুলোর রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত ১০ বছরে নির্বাচন কমিশনে বিএনপির দাখিলকৃত আয়-ব্যয়ের হিসাবে লবিষ্ট নিয়োগে ব্যয়ের বিষয়টি উপস্থাপন করেনি এবং ব্যয় বিবরণীতে লবিষ্ট নিয়োগের কোন খাত বা উপ-খাত দেখানো হয়নি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর সংসদে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বিএনপি ২০১৮ সালে ২টি এবং ২০১৫ সালে ১টিসহ মোট ৩টি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মালিকানাধীন ফার্মকে দেশ ও সরকারবিরোধী প্রচারণার জন্য লবিষ্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়। 

গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম শ্রেণীর উচ্চ ফি ক্যাটাগরির ফার্ম Akin Gump এর সাথে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা (২৮ভিআইপি রোড, নয়াপল্টন) ব্যবহার করে বিদেশি রাজনৈতিক দল শ্রেণীতে চুক্তিবদ্ধ হয়। ওই চুক্তিতে দেখা যায়, তাদের মাসিক ফি'র পরিমাণ ছিল ৮০,০০০ থেকে ১০০,০০০ মার্কিন ডলার এবং চুক্তির মেয়াদ ছিল ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ২০ তারিখ থেকে ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত। যার রেজিস্ট্রেশন নাম্বার ছিল ৩৪৯২। এতে দেখা যায়, বিএনপি ২০১৭ সালে Akin Gump কে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা, ২০১৬ সালে ১০ কোটি ২০ লক্ষ এবং ২০১৫ সালে ৮ কোটি ৫০ লক্ষ সব মিলিয়ে ৩ বছরে ২২ কোটি ১০ লক্ষ টাকা পরিশোধ করে। 

অন্যদিকে ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানায় Rasky Partners এবং Blue Star নামে মার্কিন লবিষ্ট ফার্মের সাথে ২০২০ সালের মে মাস পর্যন্ত চুক্তিবদ্ধ হয়। যার রেজিস্ট্রেশন নাম্বার যথাক্রমে ৬৫৮৬ ও ৬৫৮৭৷  চুক্তি মেয়াদে তাদের ফি’র পরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ৯ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা। ৩টি ফার্মকেই বাংলাদেশি মুদ্রায় সর্বমোট ৩১ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়।

বিএনপি গত ১০ বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব বিবরণী ও লবিষ্ট নিয়োগের বিশাল ব্যয় থেকে এটা স্পষ্ট যে, লবিস্টদের ফি প্রদানের এই বিপুল পরিমাণ টাকা বিএনপির হিসাব বিবরণীতে প্রদর্শন করেনি। অর্থাৎ এই টাকা অবৈধভাবে হুন্ডির মাধ্যমে পাঠিয়েছে অথবা তাদের তরফ থেকে বিদেশের কোন সংস্থা বা ব্যক্তি পরিশোধ করেছে। উল্লেখ্য, বিএনপি'র গত দশ বছরের হিসাব বিবরণী পর্যালোচনা করে দেখা যায় লবিষ্ট নিয়োগে তারা যে পরিমাণ অর্থ (৩১কোটি ২৮ লক্ষ টাকা) ব্যয় করেছে তা বিএনপি'র প্রায় ১৮ বছরের মোট ব্যয়ের সমান।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭