ইনসাইড এডুকেশন

করোনার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা ব্যবস্থা


প্রকাশ: 02/02/2022


Thumbnail

করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরু থেকেই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষার্থী।পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনিও বলেন,আগে আমার শিক্ষার্থীদের সুস্থতা নিশ্চিত করতে হবে।  

যুক্তরাষ্ট্র, চীনসহ উন্নত বিশ্বের বিরূপ অভিজ্ঞতায় এ সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলাকে হুমকি হিসেবে  দেখছেন শিক্ষাবিদ ও অভিভাবকরা। তারা বলছেন, কিছুদিনের শিক্ষা কার্যক্রমের চেয়ে জীবনের নিরাপত্তাই গুরুত্বপূর্ণ। তাই ক্লাসে শারীরিকভাবে উপস্থিত হয়ে পাঠদানের চিন্তা পরিহার করে ভিন্ন উপায় নিয়েই ভাবতে হবে। কারণ যত কিছুই করা হোক ক্লাসে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিক দূরত্বসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। তা ছাড়া একজন শিক্ষার্থী আক্রান্ত হলে তার মাধ্যমে ক্লাসের অন্য শিক্ষার্থীদের ও পরিবারের মধ্যেও বাড়বে সংক্রমণ। তাই তাদের আশঙ্কার ঊর্ধ্বে রাখতে হবে। সবকিছু বিবেচনায় আপাতত বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে অনলাইন পাঠদানের কোনো বিকল্প নেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘শিক্ষার প্রয়োজন রয়েছে, কিন্তু শিক্ষার চেয়েও জীবনের মূল্য অনেক। জীবনের ঝুঁকি রেখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যাবে না। করোনাভাইরাস সংক্রমণের এ সময়ে কোনোভাবেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সুযোগ নেই। এটা ঠিক, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সামনাসামনি পাঠদানের সঙ্গে ভিন্ন কোনো কিছুর তুলনা হয় না। তার পরও তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে যা বর্তমানে যা চলছে তা বিকল্প সম্পূরক প্রক্রিয়া।’ তিনি বলেন, ‘মরণব্যাধি করোনাভাইরাসে পুরো বিশ্বই থমকে গেছে। সংগত কারণেই বিশ্বব্যাপী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। আমাদের দেশেও কোনো বিকল্প ছিল না। এখনো বিকল্প নেই। করোনাভাইরাস সংক্রমণের এ সময়ে কোনোভাবেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সুযোগ নেই। দেশে শ্রেণীকক্ষের আকার ও শিক্ষার্থী সংখ্যা হিসেবে কোনোভাবেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা যাবে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের ক্লাসে 

নেওয়ার সুযোগ নেই। যেসব দেশে ক্লাসে শিক্ষার্থী সংখ্যা কম তারা স্কুল খুলে দিয়েছিল, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, চীনসহ বিভিন্ন দেশ স্কুল খুলে দিয়ে ফের বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। যতক্ষণ না করোনা সংক্রমণের নিম্নমুখী যাত্রা হবে ততক্ষণ পর্যন্ত স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় খোলা সমীচীন হবে না। কারণ, নতুন প্রজন্ম আগামীর নেতৃত্ব দেবে। তাদের সংক্রমণের মধ্যে ফেলা ঠিক হবে না। যতটুকু পারা যায় অনলাইন পাঠদানের মাধ্যমেই যুক্ত রাখতে হবে।’

আমেরিকান একাডেমী অব পেডিয়াট্রিক্স বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে স্কুল খুলে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রায় ১ লাখ শিক্ষার্থী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। জুলাইয়ের মাঝামাঝি দুই সপ্তাহের মধ্যেই করোনা আক্রান্ত হয়েছে ৯৭ হাজার শিশু। স্কুলে যাতায়াতের পথেই যে সংক্রমণ, প্রতিবেদনে তা নিশ্চিত করে বলা হয়েছে। ওই দুই সপ্তাহে করোনায় আক্রান্ত হয়ে কমপক্ষে ২৫ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মাত্র দুই সপ্তাহে যদি প্রায় ১ লাখ শিশু কোভিডে সংক্রমিত হতে পারে, তা হলে স্কুল চালু রাখলে সংখ্যাটা গিয়ে কোথায় পৌঁছবে তা নিয়ে শঙ্কিত সংগঠনটি।

বাংলাদেশে গতবছর ৮ মার্চ প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাধ্যমে পাঠদান চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বেতারের মাধ্যমেও শুরু হয়েছে প্রাথমিকের বিভিন্ন শ্রেণির পাঠদান। আর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশনার পর দেশের পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার করে পাঠদান চালু রয়েছে। ৩১ আগস্ট পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সেপ্টেম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকে। জাতিসংঘের শিক্ষাবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বাংলাদেশে ৩ কোটি ৯৯ লাখ ৩৬ হাজার ৮৪৩ শিক্ষার্থী সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিকে ১ কোটি ১৮ লাখ ৫ হাজার ৮২৫, প্রাথমিকে ৮৭ লাখ ৯৯ হাজার ৩৩, মাধ্যমিকে ৮৩ লাখ ৫৩ হাজার ৮৪৬ ও উচ্চশিক্ষায় ১২ লাখ ৭৬ হাজার ৮৮৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের সাবেক পরিচালক কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আগে বাঁচতে হবে, তারপর শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। না বাঁচলে ছাত্র-ছাত্রীরা পাঠগ্রহণ করবে কীভাবে?’ তিনি বলেন, ‘কারিকুলাম আংশিক সম্পন্ন করে ওপরের ক্লাসে উত্তীর্ণ করে দিলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে লার্নিং গ্যাপ তৈরি হবে। ক্রমে এ গ্যাপ বাড়তে থাকবে।

তবে অনেকেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সাধারণ মানুষের মনে একটাই প্রশ্ন সবকিছু খুলে রেখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখাটা কতটা যুক্তিগত। ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা বর্ধিত করা হবে কিনা এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কিছু জানা যায় নি।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭