ইনসাইড টক

‘সরকারের আশেপাশে যারা আছে, তাদের অনেকেরই সৃজনশীলতার অভাব রয়েছে’


প্রকাশ: 02/02/2022


Thumbnail

যশোর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিক্ষার্থীর ভর্তি নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা ও পরবর্তীতে ভর্তি নেওয়া প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেছেন, এখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একটু সমস্যা হয়েছে। করোনাকাল একটি অস্বাভাবিক সময়। এই অস্বাভাবিক সময়ে শুধু শিক্ষক না, আমাদের সবাইকে মানবিক হতে হবে। শিক্ষক তো বটেই, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা, অভিভাবক, সমাজ নিয়ন্ত্রক, রাজনীতিবিদ, সবাইকে এ অস্বাভাবিক সময়ে একটু মানবিক হওয়া প্রয়োজন। ওই ছেলের নিজের স্মার্ট ফোন ছিল না। রেজাল্ট অনলাইনে দেয়ায় সে যে পাস করেছে, তা দেখতে পারেনি।পরে যখন জেনেছে এবং ভর্তি হতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পথে ছিল, তখন ভর্তির সময় চলে যায়। তবে দেশব্যাপী ঘটনাটি সাড়া ফেলার কারণে পরে তার ভর্তি নেওয়া হয়েছে।  

যশোর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিক্ষার্থীর ভর্তি নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা, করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখাসহ নানা বিষয় নিয়ে বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এসব কথা বলেছেন অধ্যাপক আবদুল মান্নান। পাঠকদের জন্য অধ্যাপক আবদুল মান্নান এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর নিজস্ব প্রতিবেদক অলিউল ইসলাম।

অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, আমি নিজে গত দুই বছর ধরে গৃহবন্দী। যেখানে আমি দেশের বাহিরেও তিন মাসের বেশি থাকতে পারিনা, সেখানে দুই বছর ধরে স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছি না। এখন আমার বয়স হয়েছে। এ জন্য হয়তো আমি বাসায় থাকতে পারি। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তো তরুণ। তারা কেউ এসএসসি পাস করেছে, কেউ এইচএসসি পাস করেছে, আবার কেউ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া। এরা সবাই তরুণ। ফলে তাদের প্রতি তো একটু মানবিক হতেই হবে। 

করোনা প্রকোপের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রাখা ও শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা নিয়ে অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, পশ্চিমবঙ্গে কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও ধীরে ধীরে খুলবে। কোনো কোনো জেলায় স্কুলের বাচ্চাদের স্কুলের মাঠে ক্লাস নেয়ার ব্যবস্থা করেছে। আর বাকিগুলোতে স্কুলেই ক্লাস হচ্ছে। ইউনিসেফও স্কুল খুলে দেয়ার পক্ষে। বিশ্বে বাংলাদেশ হচ্ছে ১ নম্বর স্থানে আছে যেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সবচেয়ে বেশি সময় বন্ধ ছিল। আমাদের শিক্ষা  প্রতিষ্ঠান খুলতে হবে। ইতিমধ্যেই শিক্ষার্থীরা দুই বছর পিছিয়ে গেছে। স্বাস্থ্যগত সুরক্ষার ব্যবস্থা করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিন্তু খোলা সম্ভব। আমরা যদি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারি, তাহলেই শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরতে পারে। 

তিনি বলেন, বাণিজ্য মেলা হলো, প্রতিদিন লাখো মানুষ সেখানে ঘুরতে ও দেখতে গেল। সেখানে কিন্তু সামাজিক দূরত্ব বা করোনা নিয়ে এত তামাশা হয়নি। তারপর বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন তাদের প্রোগ্রাম করেছে, বিরোধী দল তাদের সমাবেশ করেছে বিভিন্ন জায়গায় নির্বাচন হয়েছে। সেখানে সামাজিক দূরত্ব কিংবা স্বাস্থ্যগত সুরক্ষা, কোনো কিছুরই বালাই ছিল না। এগুলোর আলোকে যখন আমরা দেখি করোনা প্রকোপের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, তখন এর পেছনে কি যুক্তি আছে, তা আমার বোধগম্য নয়। আসলে সরকারের আশেপাশে যারা আছে, তাদের অনেকেরই সৃজনশীলতার অভাব রয়েছে। শিক্ষা নিয়ে যারা কাজ করে তাদের আরেকটু বাস্তবমুখী হতে হবে। 

দেশে অনলাইন ক্লাস কেমন চলছে জানতে চাইলে অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, বাংলাদেশে যতগুলো পাবলিক ভার্সিটি আছে সেগুলোর মধ্যে ৮-১০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে ক্লাস নিতে পেরেছে। বাকিরা কিন্তু পারছে না অথবা করছে না। অনলাইনে পাঠদানে যদি শিক্ষকদের অভিজ্ঞতা না থাকে তাহলেও অনলাইনে ক্লাস করানো কঠিন। এই বয়সে অনেক শিক্ষকই নতুন করে কম্পিউটার চালানো শিখা এবং ডিজিটাল পদ্ধতিতে ক্লাস কিভাবে নিতে হয়, তা শিখতে চাচ্ছেন না।

তিনি বলেন, ভবিষ্যতে যখন করোনাকালে শিক্ষা ব্যবস্থা কোন দেশে কি অবস্থায় ছিলো নিয়ে গবেষণা করবে, সেখানে বিশ্বের যতগুলো দেশে শিক্ষাক্ষেত্রে ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে, তার মধ্যে নি:সন্দেহে বাংলাদেশ তালিকার শীর্ষে থাকবে। বিশেষ করে মেয়ে শিক্ষার্থীরা আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরবে না। খবরের কাগজে কিছুদিন আগে দেখেছি একটি ক্লাসের ৪০জন মেয়ে শিক্ষার্থীর ৩৯ জনের বিয়ে হয়ে গেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে। এই অস্বাভাবিক সময়ে অস্বাভাবিক সমস্যা হলে তা সমাধানের জন্য সৃজনশীল চিন্তা চেতনা দরকার। এই সৃজনশীল চিন্তা চেতনার বড্ড অভাব আমাদের।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭