ইনসাইড পলিটিক্স

বেগম জিয়ার অন্যরকম লড়াই


প্রকাশ: 02/02/2022


Thumbnail

৮১ দিন হাসপাতালে থাকার পর বেগম খালেদা জিয়া গতকাল ফিরোজায় গেছেন। ফিরোজায় যাওয়ার সময় বেগম খালেদা জিয়াকে বেশ সুস্থ লাগছিল এবং তিনি হাত নেড়ে দু'পাশের উৎসুক জনতাকে অভিবাদন জানিয়েছেন এবং বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে সালাম বিনিময়ও করেছেন। এ থেকে বোঝা যায় যে, বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আর যাই হোক, সংকটাপন্ন নয়। যদিও বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের নেতা এফ এম সিদ্দিকী দাবি করেছেন যে, তিনি এখনো শঙ্কামুক্ত নন। কিন্তু তার এই বক্তব্যের সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার গতকাল এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গুলশানের বাসভবনে যাওয়ার চিত্রের মধ্যে কোনো মিল পাওয়া যায়নি।

বেগম খালেদা জিয়া নিজেই জোর করে বাড়িতে যেতে চেয়েছিলেন। বিএনপির একটি অংশ বিশেষ করে তারেক জিয়া চেয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া যেনো আরও কিছুদিন হাসপাতালে থাকে। তাতে করে আন্দোলনের একটা সুযোগ তৈরি হয়। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন পর স্বরূপে ফিরেছিলেন এবং তিনি তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের ধমক এবং হুমকি দিয়ে বলেছিলেন যে, তাকে যদি বাসায় না নিয়ে যাওয়া হয় তাহলে তিনি অন্যরকম ব্যবস্থা নিবেন। অন্যরকম ব্যবস্থা কি সেটা অবশ্য তিনি বলেননি। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার রুদ্রমূর্তি পরপরই বিএনপিপন্থী চিকিৎসকরা তাকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সম্মত হয় এবং এভারকেয়ার হাসপাতাল তার ডিসচার্জ করার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে। এর মধ্য দিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার অন্যরকম একটি লড়াই শুরু হলো বলে বিএনপির বিভিন্ন নেতারা মনে করছেন। বিশেষ করে খালেদাপন্থী বিএনপি নেত্রীবৃন্দ বলছেন যে, বেগম খালেদা জিয়া যে এখনো নেতৃত্ব দেয়ার মতো সক্ষম এবং দলের ভেতরেই তিনি একটি লড়াই করছেন এ ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হলো।

২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি বেগম খালেদা জিয়া একটি দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার হন এবং এরপর থেকেই বিএনপি নেতৃত্ব কার্যত তারেক জিয়ার হাতে চলে আসে এবং তারেক জিয়া একাই সব কিছু করা শুরু করেন এবং এক্ষেত্রে তিনি বিএনপিতে যারা বেগম খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ এবং বেগম জিয়াপন্থী ছিলেন তাদেরকেও কোণঠাসা করতে কার্পণ্য করেননি। এগুলো বেগম জিয়া নীরবে সহ্য করেছেন। জেলে থাকা, অসুস্থতা ইত্যাদি নানা কারণে এর প্রতিবাদও তিনি করতে পারেনি। কিন্তু বেগম জিয়ার সাম্প্রতিক হাসপাতালে যাওয়ার পর মনে হলো যে, বেগম জিয়া এখন বোধহয় দলের ভেতর কর্তৃত্ব সুরক্ষার লড়াই করবে। আর এই লাড়াইয়ে সরকারের একটি অংশও বেগম জিয়াকে সহায়তা দিতে পারে বলে একাধিক সূত্র জানাচ্ছে।

বেগম খালেদা জিয়ার সাথে সরকারের একটি সমঝোতার আলামত পাওয়া যাচ্ছে। যেখানে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়া বিএনপিকে নিয়ে যাবেন এবং বর্তমান সরকারের অধীনে সেই নির্বাচনে বিএনপি বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে অংশগ্রহণ করবে। আর এই নির্বাচনের পরপরই হয়তো বেগম খালেদা জিয়ার ব্যাপারে সরকারও নাটকীয় সিদ্ধান্ত নেবে। তবে বিএনপির অনেক নেতাই বলছেন যে, বেগম খালেদা জিয়া এরকম সিদ্ধান্ত নেবেন না। কারণ বিএনপি এখনই নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোন নির্বাচন নয় এরকম একটি অবস্থানে চলে গেছে। 

যদিও বিএনপির অনেক নেতাই বলছেন যে, বেগম খালেদা জিয়া যেভাবে সরকারের সঙ্গে একটি সমঝোতা করে মুচলেকা দিয়ে মুক্তি পেয়েছেন, যেভাবে তিনি তার জামিনের মেয়াদ বাড়িয়ে নিচ্ছেন, ঠিক তেমনিভাবে তিনি সরকারের আনুকূল্য লাভের জন্য বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়েও যেতে পারেন। আর এটি যদি তিনি শেষ পর্যন্ত করেন তাহলে বিএনপিতে কর্তৃত্বের একটা নতুন লড়াই শুরু হবে এবং এখনও বিএনপি'র তৃণমূলের মধ্যে তারেক জিয়ার চেয়ে বেগম খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। অনেকেই মনে করছেন, সেই হিসেব নিকেশ থেকেই সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে একদিকে যেমন জেলের বাইরে রাখছেন, অন্যদিকে তাকে বিদেশে যেতে দিচ্ছেন না। হাসপাতাল থেকে বাড়িতে যাওয়ার সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে বেগম খালেদা জিয়া সরকারকেই প্লাস পয়েন্ট দিলেন। কারণ এর মাধ্যমে এতদিন ধরে বিএনপি যা বলছিল তা অসত্য প্রমাণিত হলো এবং সরকারের অবস্থানই সত্য প্রমাণিত হলো।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭