ইনসাইড বাংলাদেশ

শিক্ষার প্রতি এত অবহেলা কেন?


প্রকাশ: 02/02/2022


Thumbnail

বাংলাদেশে এখন সবকিছু চলছে। অফিস-আদালত, সভা-সমাবেশ, উৎসব-পার্বণ, বিয়ে-শাদী সবকিছুই। শুধু বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। করোনা মোকাবেলার জন্য শুধুমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ কেন এই প্রশ্ন উঠেছে। বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দেশ, যারা দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছিল। সবে কয়েক মাস আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সীমিত আকারে খুলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু করোনার প্রকোপ বাড়ার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং আজ এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের মেয়াদ আরো দুই সপ্তাহ বৃদ্ধি করা হলো। পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোতে দেখা যায়, যেকোনো মূল্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে খোলা রাখার চেষ্টা করেছে শেষ পর্যন্ত। সবার আগে তারা শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ যেনাে উল্টো পথে চলছে। বাংলাদেশ বিয়ের অনুষ্ঠান, বাণিজ্য মেলা ইত্যাদি বন্ধ করেনি। শুধুমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দিচ্ছে। 

ঢাকার রাস্তায় যানজট হয়ে যায়। ঢাকায় সংক্রমণ হলো সবচেয়ে বেশি। এটিকে রেড জোনে অন্তর্ভুক্ত করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মানুষ গাদাগাদি করে বাজার ঘাটে যাচ্ছে। অফিস-আদালতে মানুষের ভিড় এবং সরকার যে সমস্ত বিধিনিষেধ নিয়ে দিয়েছে সে সব বিধিনিষেধ মানার কোনো বালাই নেই। এইসবের মধ্যেই যখন করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে তখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকেই শুধু বন্ধ করা হয়েছে। বাসে, ট্রেনে, লঞ্চে মানুষের উপচেপড়া ভিড়। ভিড় রেখে, মানুষের অবাধ চলাচল বন্ধ না করে স্বাস্থ্যবিধি মানার ওপরে গুরুত্ব না দিয়ে শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে কি করোনা কমবে? ইউনিসেফ সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে বলছেন যে, আর এক মুহূর্তও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করা উচিত না। 

বাংলাদেশ নিয়ে এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, বাংলাদেশের প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী এখন শিক্ষা জীবনে ফিরে যেতে পারবে কিনা সেই ঝুঁকিতে রয়েছে। শুধু তাই নয়, এই সময়ের মধ্যে আত্মহত্যা বেড়েছে, বেড়েছে বাল্যবিবাহ। অনলাইন শিক্ষার নামে যেই কার্যক্রম, সেই কার্যক্রম এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে মুষ্টিমেয় একটি জনগোষ্ঠীর জন্য। বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠী এই অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় আসতে পারছে না। ফলশ্রুতিতে যেটি হয়েছে যে, আমাদের একটা ব্যাপক শিক্ষার সংকটের পটভূমি তৈরি হচ্ছে। গত দুই বছর ধরে আমাদের শিক্ষার্থীরা একরকম শিক্ষাজীবন থেকে বঞ্চিত। এর ফলে ড্রপ আউটের হার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। সেশনজট তৈরি হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে যে, যারা উচ্চশিক্ষায় আছে তাদের চাকরির বয়স চলে যাচ্ছে এবং সুযোগ হারাচ্ছে।

একটি জাতির শিক্ষা হলো মেরুদন্ড। শিক্ষাকে সচল না রেখে আমরা যা কিছুই করি না কেন সেটা সফল হবে না। কিন্তু আমরা যেন করােনা প্রকোপের শুরু থেকেই উল্টো পথে হাঁটছি। শিক্ষা কার্যক্রমকে বন্ধ রেখে আমরা অন্যদিকে মনোযোগ দিচ্ছি। কিন্তু আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার কঠিন মাশুল আমাদেরকে দিতে হবে। এমনকি ইউরোপের দেশগুলোতে যখন করোনা প্রকোপ হু হু করে বারছিল তখনো তারা সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছিল শিক্ষাকে। কিভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলা রাখা যায়। এখন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা টিকার আওতায় এসেছে এবং শিক্ষকরাও টিকার আওতায় এসেছে। এরকম একটি বাস্তবতা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আর এক মুহূর্তও বন্ধ রাখা উচিত নয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা এবং এটি যদি রাখা হয় তাহলে বাংলাদেশের শিক্ষার এক অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হবে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭