ইনসাইড থট

করোনা রোধে লকডাউন নয়, প্রয়োজন স্বাস্থ্যবিধির যথাযথ বাস্তবায়ন ও দ্রুত টিকা প্রদান নিশ্চিতকরণ


প্রকাশ: 03/02/2022


Thumbnail

২০২২ সালের বাণিজ্য মেলা শেষ হয়ে গেল । পূর্বাচল উপশহরের ৪ নং সেক্টরে নতুন এক্সিভিশন হলে অর্থাৎ বদ্ধ ঘরে অনুষ্ঠিত এই মেলায় ৩১ জানুয়ারি শেষ দিনেও ছিল উপচে পড়া ভিড়। পত্রিকান্তরে জানা গেছে করোনা সংক্রমণের বৃদ্ধি পেলেও মেলা স্থলে স্বাস্থ্যবিধির কোন বালাই ছিল না।  অন্যদিকে বিবাহ ও অন্যান্য সকল সামাজিক অনুষ্ঠান স্বাভাবিকভাবেই চলছে। শহরের কমিউনিটি সেন্টারগুলো খালি নেই। উপাসনালয়গুলোতে স্বাভাবিক নিয়মেই লোকসমাগম হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করার ক্ষেত্রে ব্যত্যয়ও ঘটছে, যদিও মসজিদের খতিব, মন্দিরের পুরোহিতগণ স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে পালন করতে অনুরোধও করছেন।

আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে বই মেলা। টিকা সনদ, স্বাস্থ্যবিধির শর্ত জুড়ে দেয়া থাকলেও ভবিতব্যই বলে দেবে শর্ত কতটুকু মেনে চলা সম্ভব হবে।

মহামারী করোনাভাইরাসের নতুন ধরণ ওমিক্রনের সংক্রমণ হার দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্ধ করে দেওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটির মেয়াদ আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে আরো দুই সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে। 

কিন্তু করোনা রোধে, লকডাউন বা স্কুল-কলেজ বন্ধ কী একমাত্র সমাধান?

সকালে প্রাতঃভ্রমণকালে ধানমন্ডির রাস্তায় দুই রিকশাওয়ালার কথোপকথন শুনছিলাম।

এক রিকশাচালক বলছেন, ‘কি অবস্থা? ক্ষ্যাপ পাইছো?‘ উত্তরে দ্বিতীয়জন বললেন, ‘ক্ষ্যাপ পামু কেমনে, স্কুলতো বন্ধ’। 

স্কুল বন্ধ থাকলে শুধুমাত্র ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়া ক্ষতি হয় তাই নয়, সমাজের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের  অর্থনৈতিক অবস্থার উপরও প্রভাব বিস্তার করে।


শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। স্কুলের সাথে  নতুন প্রজন্মের শিক্ষা ও মেধা বিকাশের সম্পর্ক রয়েছে। গত দুই শিক্ষা বছরে মহামারী করোনা রোধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে  ‘অটোপাশ‘ এর মাধ্যমে বা সীমিত সংখ্যক বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে উপরের ক্লাসে উত্তীর্ণ করানো হলেও মেধাবী হওয়ার সুযোগ নেই। এ অবস্থা চলতে থাকলে একটি প্রজন্ম মেধাহীন হয়ে পরবে। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ ঝরে পরছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী শহর ছেড়ে গ্রামে বাড়িতে গিয়েছিল। মেয়েরা মায়ের কাজে সহায়তা করতে থাকে। একজন স্কুল/কলেজ পড়ুয়া মেয়ে দীর্ঘদিন গ্রামে অবস্থান করার কারণে গ্রামের প্রভাবশালী পরিবারের ছেলেদের নজরে পরে, বিয়ের প্রস্তাব দেয়। ছেলেটি ভাল হলে মেয়ের অভিভাবকরা ভাল পাত্র পেয়ে বিয়ে দিয়ে দেয়। ছেলেটি বখাটে হলে, ওর হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য মেয়ের অভিভাবকরা উপযুক্ত পাত্র খুঁজে মেয়ে বিয়ে দিয়ে দেয়। উচ্চ মাধ্যমিক, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্রীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এভাবেই বিবাহিত জীবনে পদার্পণ করায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে  আর ফিরতে পারেনি। এছাড়া বাল্যবিবাহের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী করোনাকালের বন্ধ শেষে স্কুল খোলার পর কোন একটি স্কুলের শতভাগ ছাত্রী অনুপস্থিত ছিল। তাঁদের সকলেই বিবাহিত জীবনযাপন শুরু করেছে।

এছাড়া স্কুল কলেজের ছোট ছোট ছেলেরা কৃষক বাবাকে মাঠে সহায়তা করেছে, ছোট ব্যবসায়ী বাবাদের ব্যবসা কাজে সহায়তা করেছে। এক পর্যায়ে ঐ ছেলেরগুলো শিক্ষা জীবনে ফিরে আসতে পারেনি।

আমরা কোচিং বন্ধ করতে বিভিন্ন নিয়মকানুন প্রবর্তন করার চেষ্টা করছি। অথচ করোনা মহামারী রোধে স্কুল কলেজ বন্ধ থাকলেও কোচিং বন্ধ থাকেনি, বরং প্রসার লাভ করেছে। উদাহরণস্বরূপ, আমার ফুফাতো বোনের মেয়ের বয়স ৪ বছর পূর্ণ হয়েছে। যথাসময়ে স্কুলে ভর্তি করাতে হবে। কিন্তু স্কুল বন্ধ থাকার কারণে, প্রাথমিক শিক্ষার জন্য স্কুলের বিকল্প হিসেবে স্থানীয় কোচিং সেন্টারে ভর্তি করেছে। 

করোনা মোকাবেলায় স্কুল বন্ধ রাখা কোন সমাধান নয়। করোনা যেন শিশুদের পড়াশোনাকে আর ব্যাহত করতে না পারে সেজন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়ে সরকারগুলোর প্রতি স্কুল খোলা রাখার আহ্বান জানিয়েছে ইউনিসেফ। গত ২৪ জানুয়ারি ২০২২ তারিখ COVID-19: Scale of education loss ‘nearly insurmountable’, শিরোনামে ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর এর দেওয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, প্রথম সারির স্বাস্থ্যকর্মী এবং উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে কোভিড-১৯ এর টিকাদানের পরপরই এই টিকাদানের ক্ষেত্রে শিক্ষক এবং স্কুল কর্মীদের সম্পূর্ণরূপে সমর্থন ও অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। ... কোভিড-১৯ টিকা প্রাপ্তি সাপেক্ষে সশরীরে স্কুলে যাওয়ার শর্ত আরোপ করলে তা শিশুদের শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ না পাওয়া এবং ক্রমবর্ধমান বৈষম্যের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে ফেলে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ইউনিসেফ শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের টিকাদান ছাড়াই স্কুলগুলো খোলা রাখার এবং কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ কৌশল যাতে পড়াশোনা ও সামাজিক জীবনের অন্যান্য দিকগুলোতে শিশুদের অংশগ্রহণকে সহজতর করে তা নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছে।

স্কুল বন্ধ না করে, স্বাস্থ্য মেনে চলা এবং টিকা প্রদানের উপর গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ভাষ্য অনুযায়ী ৯ কোটি টাকা মজুদ রয়েছে। তাহলে টিকা প্রদানকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি করে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিকা প্রদান নিশ্চিত করা যেতে পারে।  অনেক দেশ, এমনকি পাকিস্তানও মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিকা প্রদান শুরু করেছে । আমাদের সকলের নিশ্চয়ই মনে আছে গুটি বসন্ত নির্মূল করার ক্ষেত্রে মানুষ টিকা গ্রহণে ভীত ছিল। আমরা পালিয়ে বেড়িয়েছি। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি, টিকা গ্রহণ করতেই হয়েছে। এখনও আমাদের হাতে সেই গুটি বসন্ত টিকার দাগ রয়েছে। ঠিক একইভাবে সকল নাগরিকের জন্য করোনা টিকা প্রদান নিশ্চিত করে এবং স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে বজায় রেখে শিক্ষা ও অর্থনীতির স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখা প্রয়োজন। সকল নাগরিকের জন্য করোনা টিকা প্রদান নিশ্চিত করতে সমাজের সকল স্তরের মানুষ কে কাজে লাগাতে হবে যেন এটি একটি সামাজিক আন্দোলনে রূপ নেয়, তাহলে আমরা সফল হতে পারব ইনশাআল্লাহ ।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭