ইনসাইড বাংলাদেশ

কেন রাশিয়া-চীনমুখী বাংলাদেশ


প্রকাশ: 04/02/2022


Thumbnail

ইউক্রেন ইস্যু নিয়ে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার মধ্যে এক ধরনের উত্তেজনা, ঠিক সেই সময় বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ এর জন্য চুক্তি করলো রাশিয়ার সাথে। এর আগে রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে বড় ধরনের চুক্তি করেছিল বাংলাদেশ। রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। যে সময় চীন-রাশিয়ার স্নায়ুযুদ্ধের যুগ আবার ফিরে এসেছে, সেই সময় বাংলাদেশে কেন রাশির সাথে নতুন করে চুক্তি করল এই নিয়ে কূটনৈতিক অঙ্গনে নানা প্রশ্ন উত্থাপন হয়েছে। বাংলাদেশ এর মাধ্যমে কি বার্তা দিলো? সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের কূটনীতি যদি গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা যায় তাহলে দেখা যাবে যে, বাংলাদেশ অনেকটাই রাশিয়া এবং চীনমুখী কূটনীতির দিকে এগুচ্ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এই দুটি দেশ ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয়ান ইউনিয়নসহ পশ্চিমা দেশগুলোর ভূমিকা বাংলাদেশের অর্থনীতির ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসছে। আর এটির ফলেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয়ান ইউনিয়নে বাংলাদেশের উপর নানারকম চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে রাশিয়া এবং চীনকে পশ্চিমা বিশ্ব মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী দেশ হিসেবে চিহ্নিত করে। পশ্চিমা বিশ্ব মনে করে যে, এই দুটি দেশে কর্তৃত্ববাদী শাসন রয়েছে, গণতন্ত্র নেই। চীনের সঙ্গে মার্কিন বিরোধী নতুন বিষয় নয়। দীর্ঘদিন ধরেই এই দুটি দেশের মধ্যে থেমে থেমে অর্থনৈতিক স্নায়ুযুদ্ধ চলে। সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়ার সঙ্গেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতবিরোধ তীব্র আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে ইউক্রেনে কথিত রাশিয়ার আগ্রাসন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নানা রকম প্রশ্ন উত্থাপন করছে এবং ইউরোপের দেশগুলোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এক ধরনের যুদ্ধাবস্থা তৈরি করেছে। ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছেন জো বাইডেন। এরকম পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ কেন রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করলো এ ব্যাপারে সরকারের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য খুবই স্পষ্ট। সরকার মনে করছে যে, তার অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে এবং এই কাজটি সঠিক মূল্যে এবং ভালোভাবে যারা করতে পারবে তাদের সঙ্গেই বাংলাদেশ চুক্তি করেছে।

১৯৭১ এ রাশিয়া বাংলাদেশের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু। ভারতের পরই তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের অবদান অনস্বীকার্য। আবার ১৯৭১ এ চীনের ভূমিকা সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী ছিল। চীন ছিল পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীদের পক্ষে। কিন্তু বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এখন চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বৈরীভাবাপন্ন দুটি দেশ হয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো বাংলাদেশ রাশিয়া-চীনের সঙ্গে সম্পর্ক করে কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে একটা বার্তা দিতে চেয়েছে? বাংলাদেশ এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ইউরোপের উপর আর নির্ভরশীল নয়, বরং বাংলাদেশের নতুন অর্থনৈতিক নীতিও রয়েছে এবং বিশ্ব রাজনৈতিক বলয়ে যে মেরুকরণ হচ্ছে সেই মেরুকরণেও বাংলাদেশ চীন-রাশিয়ার পক্ষে এরকম একটি অবস্থান ঘোষণা করে বাংলাদেশ কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর পাল্টা চাপ ফেলতে চেয়েছে ? এই প্রশ্নগুলি কূটনৈতিক অঙ্গণে আলোচিত হচ্ছে। 

একটি দেশের উপর যদি চাপ সৃষ্টি করতে হয়, তাহলে সেই দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে হয়। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মার্কিন ভূমিকা ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে উঠেছে। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র র‌্যাবের বর্তমান এবং সাবেক সাত কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি। কিন্তু এসব নিয়ে সুধীসমাজের যত না উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, আলাপ-আলোচনা, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সেটির কোনো প্রভাব পড়েনি। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন বিশ্বের যেকোনো দেশের চেয়ে অত্যন্ত সংহত অবস্থায় রয়েছে। বিশেষ করে আমাদের অভিবাসীদের রেমিটেন্স এবং পোশাক শিল্পে রপ্তানি আয় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বাংলাদেশের একটি বড় বাজার রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে। সেই বাজারের উপর কি রাশিয়া-চীনের সঙ্গে সম্পর্ক কোনো প্রভাব ফেলবে?

কূটনীতিকরা মনে করছে, সেটি করবেন না। কারণ বাংলাদেশ থেকে পোশাক ইউরোপে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যায় এর গুণগত মান এবং মূল্যের কারণে। বাংলাদেশকে রপ্তানি দিয়ে চাপে ফেলা খুব কঠিন হবে। তবে বিভিন্ন কূটনৈতিক মহল মনে করছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এখনো প্রভাবশালী এবং সম্পর্কের অবনতি ঘটলে তারা বড় ধরনের চাপ দিতে পারে। তবে দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশে যে ভারসাম্যের কূটনীতি অনুসরণ করছে সেই ভারসাম্যের কূটনীতির ধারায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর অবস্থানে যাবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। কিন্তু রাশিয়া এবং চীনমুখী বাংলাদেশের কূটনীতি সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে একটা কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে বলে কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭