ইনসাইড পলিটিক্স

‘ছাত্র ইউনিয়ন করতেন কাদের মোল্লা’: এ কি বললেন জাফরুল্লাহ?


প্রকাশ: 05/02/2022


Thumbnail

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দল করেন না। তবে রাজনৈতিক মহলে বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী হিসেবেই পরিচিত তিনি। ব্যক্তিগতভাবে অনেকে তার রাজনৈতিক ভাবনার বিপরীতে অবস্থান করলেও তার ভাল কর্ম-উদ্যোগের প্রশংসা করেন, শ্রদ্ধা জানান। তবে বিভিন্ন সময় নিজের রাজনৈতিক অবস্থান যৌক্তিক করার জন্য তার দেওয়া বক্তব্যগুলো সমাজে বিতর্কের জন্ম দেয়। সম্প্রতি মানবতাবিরোধী যুদ্ধঅপরাধী কাদের মোল্লা, দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে নিয়ে তার করা এক মন্তব্য দেশে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী গত বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে একটি সমাবেশে দাবি করেছেন, কাদের মোল্লা মুক্তিযুদ্ধের সময় ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। তিনি আরও দাবি করেন, কাদের মোল্লা এবং দেলোয়ার হোসেন সাঈদী সঠিক বিচার পাননি। ছাত্র ইউনিয়ন তার আগের জায়গায় নেই, সেটা ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক ও বর্তমান অনেক নেতাই বলেন। কিন্তু কাদের মোল্লা ছাত্র ইউনিয়ন করতেন, এ তথ্য জাফরুল্লাহ চৌধুরী কোথায় পেলেন, এর চুলচেরা বিশ্লেষণ দরকার।

কাদের মোল্লা ১৯৬৮ সালে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘ করতেন। ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ছাত্রসংঘ শহিদুল্লাহ হল শাখার সভাপতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি, ঢাকা মহানগরীর সেক্রেটারি এবং কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ফলে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর এ মন্তব্য কাদের মোল্লা বেঁচে থাকতে করলে তিনি ব্যাপক লজ্জা পেতেন বটে। তাই কাদের মোল্লা ১৯৭১ সালে ছাত্র ইউনিয়ন করতেন মর্মে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বক্তব্য ইতিহাস বিকৃতির সামিল এবং তার বক্তব্য মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলেই মনে করছেন ইতিহাসবিদরা।

অন্যদিকে, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে বলেছেন, কাদের মোল্লা ও সাঈদীদের প্রতি সুবিচার করা হয়নি। তার ভিত্তিহীন এ মন্তব্যকে ঘিরেও সমাজে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। বিশেষ করে স্বীকৃত শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে তার এই অনভিপ্রেত মন্তব্য কোনোভাবেই মানতে পারছেন না নেটিজেনরা। একজন মহান মুক্তিযোদ্ধা, যিনি রণাঙ্গনে ফিল্ড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে প্রাণ বাঁচিয়েছেন অসংখ্য আহত ও অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের, সেই তিনি কিভাবে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার, আলবদরের পক্ষ নেন, তা অনেকের কাছেই বোধগম্য নয়।

রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, যারা মানুষের সামনে কথা বলেন, তাদের কথা বলার সময় কোথায় থামতে হয়, সে জ্ঞান থাকতে হয়। বয়সের কারণে হয়তো ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর চিন্তা করার ক্ষমতা-কাণ্ডজ্ঞান কমে গেছে। সেটা না হলে মতান্ধতায় তিনি চূড়ান্ত ঈমান এনেছেন। যার ফশ্রুতিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিষয়েও সাফাই গাইছেন। এর পাশাপাশি বিভিন্ন সভা-সমাবেশে তিনি বার বার বলেছেন যে, আলেম ওলামাদের সরকার বিনা কারণে জেলে আটকে রেখেছেন। কিন্তু কথাটি তো ঠিক না। ক্ষমতার খেলায় শাসকদলের রাজনীতির নানা সমীকরণ আছে সত্য, কিন্তু ধর্মান্ধরাও এই খেলার শরীক ও অংশীদার। তাদেরকে ডা. জাফরুল্লাহ যতটা নিরীহ-নাদান মনে করেন, ততটা নিরীহ-নাদান তো তারা নয়। ফলে ডা. জাফরুল্লাহ সমাজে সংঘাত সৃষ্টি করতে চাচ্ছেন কিনা, বিষয়টিকে খতিয়ে দেখা দরকার বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭