ইনসাইড টক

‘ভারত পারলে আমরা কেন পারবো না’


প্রকাশ: 05/02/2022


Thumbnail

বহুল আলোচিত নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে অনুসন্ধান কমিটির ছয় সদস্যের নাম ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে আজ। অনুসন্ধান কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। কমিটির সদস্যরা হলেন— বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, বাংলাদেশের মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন ও কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক। সদ্য গঠিত এ অনুসন্ধান কমিটি, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটসহ বিভিন্ন বিষয়ে অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বাংলা ইনসাইডারের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। পাঠকদের জন্য অধ্যাপক আব্দুল মান্নান এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর নিজস্ব প্রতিবেদক অলিউল ইসলাম

বাংলা ইনসাইডার: কেমন হলো এবারের অনুসন্ধান কমিটি?

অধ্যাপক আব্দুল মান্নান: নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য অনুসন্ধান কমিটি গঠিত হয়েছে। এটি সুষ্ঠু নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রথম ধাপ। এই সার্চ কমিটির কাজ হচ্ছে নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় লোকদের খোঁজে বের করা এবং তাদের নামের তালিকা করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো। এই কমিটি অনেকগুলো নাম প্রস্তাব করবে। এর মধ্যে থেকে সবচেয়ে যোগ্য পাঁচজনকে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দিবেন রাষ্ট্রপতি।

বাংলা ইনসাইডার: এর আগের দুইটি নির্বাচন কমিশনও অনুসন্ধান কমিটির পাঠানো তালিকা থেকেই নিয়োগ দেয়া হয়েছিল এবং এ দুইটি কমিশন নিয়েই বিতর্ক হয়েছে। এরকম বাস্তবতায় এবারের অনুসন্ধান কমিটি কি নিরপেক্ষ ও মেরুদণ্ড ওয়ালা লোক খোঁজে বের করতে পারবে?

অধ্যাপক আব্দুল মান্নান: নিশ্চয় পারবে। হয়তো আমরা জানি না, কিন্তু দেশে অনেক মেরুদণ্ড ওয়ালা লোক আছে। অতএব  না পাওয়ার কোনো কারণ নেই। নির্বাচন কমিশনের কাজ হচ্ছে একটি সুষ্ঠ নির্বাচন পরিচালনা করা। আর এর আগেও দেশে সুষ্ঠ নির্বাচন হয়েছে। এর জন্য অনুসন্ধান কমিটিও করতে হয়নি। ৭০ সালের নির্বাচন নিয়ে তো কোনো বিতর্ক নেই। সেই নির্বাচন কমিশন তো অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে গঠিত হয়নি। তারপরেও কিন্তু নির্বাচনটি সুষ্ঠু হয়েছিল। এরপর শামসুল হুদা কমিশনও আমাদের সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিয়েছে। ফলে দেশে অনেক মেরুদণ্ড ওয়ালা লোক আছে। অনুসন্ধান কমিটির দরকার তাদের খোঁজে বের করা।

বাংলা ইনসাইডার: দেশে নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিতর্ক ঠিক কবে থেকে শুরু হয়েছে?

অধ্যাপক আব্দুল মান্নান: ৭০ সালের নির্বাচন নিয়ে কোনো বিতর্ক ছিল না। ৭৩ সালের নির্বাচন নিয়েও তেমন বিতর্ক নেই। বিতর্ক শুরু হয়েছে জিয়াউর রহমানের আমল থেকে। জিয়াউর রহমানের আবিষ্কার করা হ্যাঁ, না ভোটের মাধ্যমে এটি শুরু হয়। তার এই তামাশা এবং তার পরবর্তী তামাশাপূর্ণ সংসদীয় নির্বাচন থেকে নির্বাচন কমিশন নিয়ে ওই যে বিতর্ক শুরু হলো, তা এখনো চলছে। যেদিন নির্বাচন হবে সেদিনই ভোট গণনা শুরু হবে। সেটির ব্যত্যয় ঘটেছে জিয়াউর রহমানের সময়, এরশাদের সময়। ভোট গণনা চলছিলো, মাঝপথে ভোট গণনার কিছুই জানলাম না। টেলিভিশন চ্যানেলের তখন একটাই ছিলো বিটিভি। গণনার রেজাল্ট বন্ধ করে দিলো। দুইদিন পর বললো যে, সরকারি দল এত আসন পেয়েছে, আওয়ামী লীগ এত আসন পেয়েছে। সার্চ কমিটি নাম প্রস্তাব করবে এবং সেই নাম চার-পাঁচ জনের না, হয়তো দশ জনের করবেন। সেখান থেকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিবেন।

বাংলা ইনসাইডার: সুশীল সমাজের দাবি ছিলো যে সার্চ কমিটি যে সমস্ত নাম প্রস্তাব করবে সেটি যেন সকলেই জানতে পারেন। এই বিষয়ে আপনার মতামত কি?

অধ্যাপক আব্দুল মান্নান: সুশীল সমাজ অনেক কিছুই বলে, যেগুলো বাস্তবের সাথে কোন মিল নেই। এটা পৃথিবীর কোন দেশে আছে যে সবকিছু জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে? রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, রাষ্ট্রের স্বার্থ বলে একটা জিনিস আছে। সেটাকে মনে রেখে করলে করবে, না করলে করবে না। তাহলে বাংলাদেশে আগামী ১০০ বছরেও কোন নির্বাচন কমিশনও হবে না এবং তথাকথিত সকলের গ্রহণযোগ্য কমিশন হবে না। আমাদের একটা সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রয়োজন এবং এই নির্বাচন কমিশনকে সংবিধানে অনেকগুলো ক্ষমতা দেওয়া আছে, সেই ক্ষমতাগুলো তারা যেন সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারে। ভারতের মত বিশাল দেশে নির্বাচন নিয়ে কোন প্রশ্ন উঠে না, হয়তো কোন কোন স্থানীয় পর্যায়ে ছোট ছোট জায়গায় প্রশ্ন উঠে কিন্তু সারা দেশে নির্বাচন নিয়ে কোন প্রকার প্রশ্ন উঠে না। তাহলে আমরা কেন পারবো না? 

বাংলা ইনসাইডার: সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে সকল রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত প্রতিষ্ঠা নিয়ে আপনার কোন পরামর্শ আছে কি? 

অধ্যাপক আব্দুল মান্নান: বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এটি কখনই সম্ভব নয়। এখন যদি আপনি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে নির্বাচন কমিশনের প্রধান বানান তবেও এটি সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। আপনি কখনই একটি বিষয় সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারবেন না। তাই আপনি যাদের নিয়োগ দিচ্ছেন তাদের পাবলিক ইমেজ যাতে ভালো থাকে সেই দিকে নজর রাখতে হবে সব সময়। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন চায় বাংলাদেশে এরকম প্রচুর মানুষ রয়েছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭