এডিটর’স মাইন্ড

এভাবে চলে যাওয়া ঠিক নয়


প্রকাশ: 05/02/2022


Thumbnail

বুধবার সকালে উঠেই পীর হাবিবের লেখা পেলাম না বাংলাদেশ প্রতিদিনে। একটু চিন্তিত হলাম। বাংলাদেশ প্রতিদিনের মেহেদীকে ফোন করে জানলাম যে পীর হাবিবের কি অবস্থা। মেহেদী জানালো পীর হাবিব অসুস্থ। এরপর জানলাম পীর হাবিব করোনা পজিটিভ হয়েছে, বিএসএমইউতে ভর্তি হয়েছেন। আজ ভোরে পীর হাবিবের ছেলের একটা মেসেজ পেলাম আমার হোয়াটসঅ্যাপে। তাতে জানলাম যে, পীর হাবিবকে ল্যাবএইডের আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়েছে। তারপর ল্যাবএইডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম আহমেদের সাথে ফোনে কথা বললাম। তিনি জানালেন যে, পীর হাবিবের অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন। পীর হাবিব একজন যোদ্ধা। কলমযোদ্ধাই শুধু নন, তিনি তার বেঁচে থাকার জন্য এক যুদ্ধ করেছিলেন, কঠিন যুদ্ধ। কিন্তু সেই যুদ্ধে তিনি হেরে গেলেন। বড্ড অসময়ে চলে গেলেন আমার বন্ধু পীর হাবিব। এভাবে চলে যাওয়া ঠিক নয়। আমাদের অনেক হিসেব-নিকেশ বাকি ছিল, অনেক কথা বাকি ছিল। সেসব হিসেব-নিকেশ না মিটিয়েই পীর হাবিব চলে গেলেন, এটা ঠিক করেননি পীর হাবিব আপনি।

পীর হাবিবের সঙ্গে আমি একসাথে কখনো কাজ করিনি। কিন্তু আমাদের বন্ধুত্ব হয়েছিল স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে, সাংবাদিকতার মধ্য দিয়ে, নীতি-আদর্শের প্রশ্নে। পীর হাবিব বাংলাদেশে সাংবাদিকতায় একজন অনন্য অসাধারণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে থাকবেন। তার নীতি-আদর্শের সঙ্গে আমার নানা সময়ে মত পার্থক্য হয়েছে, বিরোধ হয়েছে। কিন্তু তার আদর্শকে আমি সবসময় শ্রদ্ধা করি, সালাম জানাই। পীর হাবিবের সাথে আমার সাংবাদিকতা জীবনে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয় ওয়ান-ইলেভেনের সময়, যখন পীর হাবিব ওয়ান-ইলেভেনে একটি প্রেক্ষাপটে একটি অবস্থান গ্রহণ করেছিল। আর আমি আমার প্রেক্ষাপটে মাইনাস ফর্মুলার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলাম। আমরা দুইজন কলমযুদ্ধ শুরু করি নাঈমুল ইসলাম খান সম্পাদিত আমাদের সময় পত্রিকায়। এই দুইজনের কলমযুদ্ধ পাঠকরা পছন্দ করেছিল। কিন্তু পীর হাবিব মাইনাস ফর্মুলাকে সমর্থন করেছিলেন কি করেননি, সেই বিতর্কে আমি যাব না। তিনি তাঁর বিশ্বাস, চিন্তা থেকেই ওই অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। এতে আমাদের দুজনের সম্পর্কের কোনো অবনতি ঘটেনি। ওই সময় আমরা একে অন্যের বিরুদ্ধে লিখতাম কিন্তু তারপর আমাদের মধ্যে কথা হতো। এটাই হওয়া উচিত সাংবাদিকতার নীতি। পীর হাবিব তার আদর্শ এবং নীতির ব্যাপারে অটল ছিলেন। এরপর পীর হাবিব যুগান্তর ছেড়ে দেন, বাংলাদেশ প্রতিদিনে যোগ দেন এবং সেখানে তিনি ক্রমশ একজন পরিণত কলাম লেখক হিসেবে নিজেকে উদ্ভাসিত করেন। বাংলাদেশ প্রতিদিনের লেখায় তার পরিপক্বতা, তাঁর গভীরতা এবং তার দেশ-দশ চিন্তা সকলকে মুগ্ধ করে। এ সময় তিনি অন্যতম জনপ্রিয় একজন কলাম লেখক হিসেবে পরিণত হন।

বাংলাদেশ প্রতিদিনই সম্ভবত দেশের একমাত্র পত্রিকা যেখানকার কলামগুলো মানুষ গভীর মনোযোগ দিয়ে পড়েন। আর সেই কলামগুলোর মধ্যে পীর হাবিবের কলাম ছিল অন্যতম জনপ্রিয়। ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা পীর হাবিবুর রহমান ছিলেন একটু ভিন্ন ধরনের। তার বিশ্বাস এবং চিন্তা প্রকাশে তিনি কখনো আপস করতেন না, সমঝোতা করতেন না। যেটি তিনি বিশ্বাস করতেন, সেটি লিখতেন। আমাদের মধ্যে মাঝে মাঝে দেখা হতো। কিছুদিন আগে যখন তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হলেন, তখন আমাদের কথাবার্তা আরও বাড়ছিল, আমি তাকে বারবার সাবধান করছিলাম ক্যান্সার আক্রান্ত হলে কিভাবে চিকিৎসা করতে হবে, কিভাবে তাকে থাকতে হবে, সে সম্পর্কে তাকে আমি বিভিন্ন সময় সতর্ক করছিলাম। যখন পীর হাবিব ভারত থেকে ক্যান্সারের চিকিৎসা করে ফিরে আসলো, তখন আমরা সবাই তাঁর জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলাম। আমরা মনে করলাম যে, পীর হাবিবের যুদ্ধটা বোধহয় শেষ হয়ে গেছে। এরপর বাংলাদেশ প্রতিদিনে এক আড্ডায় তার সাথে দীর্ঘক্ষণ কথা হলো। তাকে আমি এবং নঈম নিজাম দুজনই বললাম তিনি যেন বেশি বাহিরে না যান, তিনি নিজেও আমাদেরকে কথা দিলেন যে তিনি বের হবেন না। নঈম নিজাম তার জন্য বাংলাদেশ প্রতিদিনে সবকিছু আলাদা করে দিয়েছিলেন, তার সঙ্গে যেন কেউ দেখা-সাক্ষাৎ না করে সেটি নিশ্চিত করেছিলেন।

পীর হাবিব-নঈম নিজাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এক অনন্য জায়গায় নিয়ে গেছেন, বাংলাদেশ প্রতিদিনকে সর্বাধিক জনপ্রিয় দৈনিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এর ফলে নঈম নিজাম একা হয়ে গেলো। শুধু নঈম নিজাম না, পীর হাবিবের মৃত্যু আমাদের সবাইকে একা করে দিলো। এখন যখন সাংবাদিকতার আকাল, এখন যখন লেখার মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর, এখন যখন রাজনীতি, চিন্তা-চেতনা নিয়ে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন, বিশ্লেষণ করেন, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার, ঠিক সেই সময় পীর হাবিব চলে গেলেন। আমাদের কথা ছিল, আমরা দুইজন আবার কলাম বাহাস করবো, আমরা দুজন আবার লিখবো একসাথে। একসাথে বসে ঝুম আড্ডা দেওয়ার কথা ছিল কোন অলস বিকেলে। কিন্তু পীর হাবিব চলে গেলেন। পীর হাবিব আমাকে বলেছিলেন আরেকটু সুস্থ হলে একদিন দিনভর আড্ডা হবে, নঈমও তাতে সায় দিয়েছিল। কিন্তু পীর হাবিব আপনি কথা রাখলেন না, এভাবে চলে যাওয়া ঠিক নয়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭