ইনসাইড সাইন্স

১৯ বছর আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল প্রথম নারী মহাকাশচারী কল্পনার স্বপ্ন


প্রকাশ: 06/02/2022


Thumbnail

২০০৩ সালের ১ লা ফেব্রুয়ারী, আমেরিকান স্পেস এজেন্সি নাসার স্পেস শাটল কলম্বিয়া পৃথিবীতে ফিরে আসার সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। সেই ঘটনা নাড়িয়ে দেয় সমগ্র বিশ্বকে। সেই সঙ্গে শেষ হয়ে যায় কল্পনা চাওলার স্বপ্ন। ওই দুর্ঘটনার সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছিল নাসার ওপর। ১৯৮৬ সালে চ্যালেঞ্জারের পর এটি ছিল আমেরিকার দ্বিতীয় স্পেস শাটল দুর্ঘটনা। এরপর আমেরিকা থেকে মহাকাশে নভোচরদের পাঠানো বন্ধ হয়ে যায়। কলম্বিয়া দুর্ঘটনার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে কোনো স্পেস শাটল ফ্লাইট চালানো হয়নি। তারপর নাসাকেও তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় অনেক পরিবর্তন আনতে হয়েছে।
  
সেই সাথে স্পেস শাটলের সঙ্গে সাতজন নভোচরীর জবনাবসান। তাদেরই একজন কল্পনা চাওলা। ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রথম নারী মহাকাশচারী তিনি। ভারত সহ সারা বিশ্বের নারীদের আইকন ছিলেন কল্পনা। কল্পনার জন্ম ১৯৬২ সালের ১৭ মার্চ হরিয়ানার কারনাল জেলায়। সেখানকার ঠাকুর বাল নিকেতনে প্রাথমিক পড়াশোনা শেষ করেন কল্পনা। মজার ব্যাপার হচ্ছে, স্কুলে ভর্তি হওয়ার আগে কল্পনার কোনো আনুষ্ঠানিক নাম ছিল না। তাকে তার বাবা-মা আদর করে ডাকতেন মন্টু বলে। স্কুলে ভর্তির সময় যখন নামের দরকার তখন তারা বাবা সেখানে তার নাম দেন কল্পনা চাওলা।

স্কুল শেষ করার পর চণ্ডীগড় থেকে অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং করেন। ১৯৮২ সালে আমেরিকায় পাড়ি দেন। ১৯৮৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তি হন।

সেখানে মহাকাশ প্রকৌশলে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন তিনি।এরপর কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডক্টর অফ ফিলোসফি (পিএইচডি) ডিগ্রি অর্জন করেন।

১৯৯৫ সালের মার্চে NASA মহাকাশচারী কর্পস দলে যোগ দেন কল্পনা। শৈশবকাল থেকেই কল্পনার হাইকিং এবং পড়ার পাশাপাশি আগ্রহ ছিল বিমানের প্রতি। বয়স যখন ছয় বছর। তখন প্রথম আকাশে বিমান দেখেন। তখন থেকেই বিমানের প্রতি আগ্রহ জন্মায় ছোট্ট কল্পনার মনে।সেদিন মিশন সফল হওয়ার পর ফিরছিলেন কল্পনা ও তার সঙ্গীরা। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে পুনঃপ্রবেশের সময় দক্ষিণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর তাদের মহাকাশযান ভেঙে পড়ে।
 

১৯৯৭ সালে প্রথম মহাকাশ ফ্লাইটের জন্য নির্বাচিত হন। সেই যাত্রায় কল্পনা মহাকাশে ৩৭২ ঘন্টা কাটিয়েছিলেন। তার দ্বিতীয় মহাকাশ যাত্রা ছিল ২০০৩ সালের ১৬ জানুয়ারি। কিন্তু মহাকাশযানটি ১ ফেব্রুয়ারি পৃথিবীতে ফিরে আসার সময় হঠাৎ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এই দুর্ঘটনায় কল্পনা চাওলা সহ আরও ছয়জন মহাকাশচারী মারা যান।

মাত্র ১৬ দিনের মিশন ছিল তাদের। উড্ডয়নের আগে নাসার স্পেস শাটল কলম্বিয়া পরীক্ষা করা হয়েছিল ৮০ বার। সেসময় পুরো বিশ্বে জড়িয়ে পড়ে কল্পনার নাম। কল্পনা চাওলাকে জানতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন মানুষ। ভারত, আমেরিকা সহ বিশ্বের সব নারীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে ওঠেন।


তার জনপ্রিয়তার পরিপ্রেক্ষিতে NASA তার একটি সুপার কম্পিউটারের নামকরণ করেছে কল্পনা চাওলা। বিশ্বের অনেক স্কলারশিপ প্রোগ্রাম এবং ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞান শাখার নাম কল্পনা চাওলার নামে রাখা হয়েছে।

নাসার মতে, মহাকাশযানটি নির্ধারিত অবতরণ থেকে মাত্র ১৬ মিনিট দূরে ছিল। সেই মহাকাশযানের ধংসাবশেষ ও যাত্রীদের দেহাবশেষ পাওয়া গিয়েছিল টেক্সাসে। মিশন সফল হলেও পৃথিবীতে আর ফিরে আসতে পারেননি কল্পনা ও তার সঙ্গীরা। ওই দুর্ঘটনা নাসাকে কাজ করার পদ্ধতি পরিবর্তন করতে বাধ্য করেছিল।

কলম্বিয়া স্পেস শাটল ২০০৬ সালে আবার চালু করা হয়েছিল। কিন্তু তার আগে ২৬ জুলাই, ২০০৫-এ স্পেস শাটল ডিসকভারির মাধ্যমে সাতজন আমেরিকান যাত্রীকে মহাকাশে পাঠানো হয়েছিল। এর পর ২০০৭ সালে স্পেস শাটল অ্যান্ডোভার এবং ২০১১ সালে স্পেস শাটল আটলান্টিসের মাধ্যমে যাত্রীদের মহাকাশে পাঠানো হয়েছিল। আটলান্টিস ছিল মার্কিন মাটি থেকে মহাকাশে নাসার পাঠানো সর্বশেষ ক্রু যুক্ত যান। এরপর থেকে রাশিয়ান সুয়োজ রকেটে করে মার্কিন মহাকাশচারীদের আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) পাঠানো হয়েছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭