ইনসাইড এডুকেশন

করোনায় শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই বন্ধ কেন?


প্রকাশ: 06/02/2022


Thumbnail

করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরু থেকেই দেশে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষার্থী। পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে কিনা তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশে ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর দীর্ঘ দেড় বছর বন্ধ থাকার পর ২০২১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ৪ মাস না যেতেই আবারও গত ২১ জানুয়ারি থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয় এবং তা আরও দুই সপ্তাহ বর্ধিত করা হয়েছে।

তবে বাংলাদেশে সবকিছুই স্বাভাবিকভাবেই চলছে। জারিকৃত ১১ দফা বিধিনিষেধও মানা হচ্ছে না। বিধিনিষেধে বলা আছে, অনধিক ১০০ জন মানুষ নিয়ে সভা-সমাবেশ করা যাবে। অন্যদিকে বাণিজ্য মেলা হয়েছে, বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছে, বিপিএলের খেলা হচ্ছে, হাট-বাজারে মানুষের সমাগম সবকিছুই হচ্ছে, শুধু হচ্ছে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে যে, ১০০ জন মানুষ নিয়ে যদি সভা-সমাবেশ করা যায় তাহলে কি ২৫-৩০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ক্লাস চালু রাখা যায়না?

বিশ্বের অন্যান্য দেশের করোনা পরিস্থিতির তুলনায় বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি অনেক ভালো। কিন্তু ভয়াবহ পরিস্থিতিতে থাকা দেশগুলো দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় রাখার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপের সবকয়টি দেশ, চীনসহ সকল দেশই তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রেখেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও বলেছে, করোনা পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হবে না। এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে।

জাতিসংঘের শিক্ষাবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বাংলাদেশে ৩ কোটি ৯৯ লাখ ৩৬ হাজার ৮৪৩ শিক্ষার্থী সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিকে ১ কোটি ১৮ লাখ ৫ হাজার ৮২৫, প্রাথমিকে ৮৭ লাখ ৯৯ হাজার ৩৩, মাধ্যমিকে ৮৩ লাখ ৫৩ হাজার ৮৪৬ ও উচ্চশিক্ষায় ১২ লাখ ৭৬ হাজার ৮৮৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন।

গত ২৮ জানুয়ারি ইউনিসেফ এক বিবৃতিতে জানায়, করোনার ‘ওমিক্রন’ ধরনটি ছড়িয়ে পড়ায় স্কুল পুরোপুরি বা আংশিক বন্ধ থাকার কারণে বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৬১ কোটি ৬০ লাখ শিশু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। করোনা যেন শিশুদের পড়াশোনাকে আর ব্যাহত করতে না পারে সেজন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়ে সরকারগুলোর প্রতি স্কুল খোলা রাখার আহ্বান জানায় প্রতিষ্ঠানটি।

সবকিছু বিবেচনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকেই। সাধারণ মানুষের মনে একটাই প্রশ্ন, সবকিছু খুলে রেখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখাটা কতটা যুক্তিগত। করোনাভাইরাস কি কেবলই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে? দীর্ঘদিন বন্ধ রাখার ফলে শিক্ষার্থীদের অপূরণীয় ক্ষতি সাধন হচ্ছে। কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে আত্মহত্যা, টিকটক, গেইমে আসক্তি সহ বিভিন্ন ধরণের অপরাধ প্রবণতা প্রখর হচ্ছে। শুধু শিক্ষার্থী যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাই নয়, শিক্ষকরাও হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি, হতাশা থেকে একজন শিক্ষক আত্মগোপনে চলে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। সব মিলিয়ে সবকিছু চালু রেখে এবং কাগজে-কলমে বিধিনিষেধ জারি করে কেবলমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ কতটা যৌক্তিক সে প্রশ্ন উঠছেই। পুরোপুরি না হলেও অন্তত সীমিত আকারে হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে মত বিশেষজ্ঞদের। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের যেন এই ব্যাপারে কোন ভ্রূক্ষেপই নেই। যদি সংশ্লিষ্টদের বোধোদয় না ঘটে তাহলে শিক্ষাহীন একটি ভয়ঙ্কর প্রজন্ম অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের জন্য!


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭