ইনসাইড আর্টিকেল

উচ্চশিক্ষায় আজও অবহেলিত বাংলা ভাষা


প্রকাশ: 07/02/2022


Thumbnail

ঘরে কিংবা অফিসে বাংলা ভাষার প্রচলন এখন সর্বস্তরেই। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের তিনটি দাবির মধ্যে একটি ছিলো ''রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই''। রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা স্বীকৃতি পেলেও, উচ্চশিক্ষায় বাংলা ভাষার ব্যাবহার নেই বললেই চলে। বায়ান্নর ভাষাভিত্তিক জাতীয় চেতনাই ছিল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা। যে মাতৃভাষা রক্ষায় এত ত্যাগ-তিতিক্ষা, উচ্চশিক্ষার মাধ্যম হিসেবে সেই ভাষা অনেকটাই অবহেলিত।

ফেব্রুয়ারি মাস আসলেই দেখা যায় ভাষার প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা এবং ভাষাকে নিয়ে নানা ধরনের কার্যক্রম। এছাড়া অন্য মাসগুলির দিকে তাকালে তেমনটা খুব বেশি নজরে পড়ে না। বাঙালির স্বদেশ চেতনা ও ভাষা চেতনার ঘাটতিকেই এর মূল কারণ বলে মনে করেছেন বিশিষ্টজনরা। 

এছাড়াও আমাদের দেশে বিদ্যালয় স্তরে মাতৃভাষা গুরুত্ব পেলেও উচ্চশিক্ষা বা অফিস আদালতের ক্ষেত্রে এখনও তা অবহেলিত। অনেকে যুক্তি দেখান, আমাদের মাতৃভাষায় উচ্চশিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় বইপত্রের একান্ত অভাব। সে কারণে বাধ্য হয়ে ইংরেজিকেই উচ্চশিক্ষার বাহনরূপে গ্রহণ করতে হয়। কিন্তু এই যুক্তি আসলে আলস্যজড়িত আগ্রহহীনতার নাম মাত্র। সদিচ্ছা থাকলে প্রয়ােজনীয় বইপত্র মাতৃভাষায় অনুবাদ করা অসম্ভব নয়। তা ছাড়া অনেক যোগ্য ব্যক্তি আছেন যারা অনায়াসে জ্ঞান বিজ্ঞানের দুরূহ বিষয়কে নিজের নিজের মাতৃভাষায় আলোচনা করতে সক্ষম। পৃথিবীতে এমন অনেক উন্নত দেশ আছে যেখানে উচ্চশিক্ষার মাধ্যম মাতৃভাষা। অন্য দেশের মানুষ যদি পারে, তবে আমরাই বা পারব না কেন? স্বীকার করি, প্রথম দিকে হয়তো কিছু কিছু সমস্যা দেখা দেবে। কিন্তু সমস্যার ভয়ে পিছিয়ে থাকলে কোনোদিনই আর এগোতে পারবো না। কাজে নেমে সমস্যাকে অতিক্রম করার প্রচেষ্টার মধ্যেই আছে যথার্থ প্রগতিশীলতা।

উচ্চ-শিক্ষালাভের ক্ষেত্রে অনেক শিক্ষার্থীর কাছে পরদেশি ভাষা একটা বিশেষ বাধা হয়ে দেখা দেয়। নিজের ভাষায় শিক্ষণীয় বিষয় যত ভালোভাবে আয়ত্ত করা সম্ভব, অন্য ভাষায় ততখানি সম্ভব নয়। যার ফলে অনেক সম্ভাবনাময় শিক্ষার্থী অনেক সময় ভাষাগত দুর্বলতার কারণে তাদের মেধার সম্পূর্ণ পরিচয় দিতে পারে না।

অথচ, এই ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে স্বাধীন হয়েছে বাংলাদেশ। ১৯৭২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমীতে সাহিত্য সম্মেলনে বক্তৃতায় সর্বস্তরে বাংলা প্রচলনের নির্দেশ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।

তবে, স্বাধীন দেশে মর্যাদা পায়নি বাংলা। সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড আর নামফলক সবখানেই ইংরেজির জয়জয়কার। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের নাম বাংলায় হলেও, সেটিও লেখা হয় ইংরেজিতে। ভাষা সৈনিক আহমদ রফিক মনে করেন, বাঙালির স্বদেশ চেতনা, ভাষা চেতনায় ঘাটতির কারণেই এমন অবস্থা বাংলা ভাষার।

ভাষা সৈনিক আহমদ রফিক বলেন, রাজনৈতিক প্রতারণার শিকার সাধারণ মানুষ। আমাদের স্বদেশ চেতনা, ভাষা চেতনার মধ্যে খাদ আছে। এছাড়াও সর্বস্তরে বাংলা প্রচলনের ক্ষেত্রে শিক্ষাক্ষেত্রে সঠিক বাংলা শেখানোর ওপর জোর দিলেন শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।

মাতৃভাষা এমন একটা মাধ্যম যার মাধ্যমে বাঙালি নিজের চিন্তা-ভাবনা, বিশ্লেষণী-শক্তি প্রকাশ করার সুযোগ পায় অনেক বেশি। আত্মপ্রকাশের যথার্থ স্বাচ্ছন্দ্যও আছে মাতৃভাষায়। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, “দূরদেশী ভাষার থেকে আমরা বাতির আলো সংগ্রহ করতে পারি মাত্র, কিন্তু আত্মপ্রকাশের জন্য প্রভাত-আলোক বিকীর্ণ হয় আপন ভাষায়।” উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়নে এই আপন ভাষার 'প্রভাত-আলো' অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭