ইনসাইড পলিটিক্স

সার্চ কমিটি নিয়ে কী ভাবছে রাজনৈতিক মহল?


প্রকাশ: 07/02/2022


Thumbnail

নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্যে গত শনিবার ছয় সদস্য বিশিষ্ট সার্চ কমিটি বা অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এ সার্চ কমিটিই বিচার বিশ্লেষণ করে নির্বাচন কমিশনার হওয়ার মতো যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের তালিকা করবেন এবং রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবেন। তবে অন্যান্য ইস্যুর মতো অনুসন্ধান কমিটি নিয়েও বিপরীতমুখী অবস্থান নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি । 

দেশের বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কবে কোন বিষয়ে একাত্মতা প্রকাশ করেছে, তা দেশের অধিকাংশ জনগণই বলতে পারবে না। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের ভোটারদের এ দুই দলের বৈরিতা দেখে দেখেই বড় হতে হচ্ছে। এর পাশাপাশি অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও নূন্যতম সমঝোতা নেই। এরকম পরিস্থিতিতে গত ২৭ জানুয়ারি বহু তর্ক-বিতর্ক ও নাটকীয়তার পরে সংসদে পাশ হয় ’প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনার নিয়োগ আইন ২০২২’ এবং এ আইন মোতাবেকই অনুসন্ধান কমিটি গঠিত হয়। একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের পূর্বশর্ত হলো এই অনুসন্ধান কমিটি। ফলে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ করণীয় কাজ হলো অনুসন্ধান কমিটির কাছে নিরপেক্ষ ও যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নাম প্রস্তাব করা, এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে যথাসম্ভব জনকল্যাণমুখী করতে সচেষ্ট হওয়া, যাতে সঠিক ব্যক্তিদের নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ দেওয়ার পথ কিছুটা হলেও প্রশস্ত হয়। কিন্তু এই কমিটি ঘোষণা মাত্রই রাজনৈতিক দলগুলোসহ সুশীল সমাজ কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। 

নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়ন ও অনুসন্ধান কমিটিতে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের। দলটির নেতারা বলছেন,অনুসন্ধান কমিটির সদস্যদের আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকে নির্মোহভাবে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করে দায়িত্ব পালনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বাংলা ইনসাইডারকে বলেন, সার্চ কমিটি নিয়ে বস্তুত বলার কিছুই নেই। নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে জাতীয় সংসদে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি অনুসন্ধান কমিটি নিয়োগ দিয়েছেন এবং রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে। ফলে সার্চ কমিটি নিয়ে ভালো-মন্দ হিসেব নিকেশ করার কিছুই নেই বলে মনে করেন তিনি।

একই বিষয়ে আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম বাংলা ইনসাইডারকে বলেন, নির্বাচন কমিশন আইনের আলোকে, সংবিধানের আলোকে যে অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে, আমি মনে করি দেশে এটিই প্রথম উদ্যোগ। এই আইনকে আরও পরিশীলতা দিবে আগামী প্রজন্ম। এই আইনের আলোকে যে অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে, এই কমিটি বাংলাদেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশা অনুযায়ী একটি শক্তিশালী নির্বাচান কমিশন গঠনে কাজ করবে এবং সহযোগিতা করবে। তারা যে সহযোগিতা করবেন, তার আলোকেই মহামান্য রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনারদের নিয়োগ দিবেন এবং আগামী দিনে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক এবং প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন উপহার দিবে। যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র আরও শক্তিশালী হবে বলে মনে করেন তিনি।

অন্যদিকে, মাঠের বিরোধী দল বিএনপিতে অনুসন্ধান কমিটি এবং নির্বাচন কমিশন নিয়ে দুই ধরণের বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে। একটি পক্ষ বলছে সার্চ কমিটিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভোট চুরির নতুন প্রজেক্ট। তবে আরেকটি পক্ষ দেখতে চাচ্ছেন নির্বাচন কমিশনে কারা নিয়োগ পায়। যদি তাদের কাছে নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের অপেক্ষাকৃত নিরপেক্ষ এবং স্বাধীনচেতা মনে হয়, তাহলে তারা নির্বাচন নিয়ে ইতিবাচক অবস্থানে যাবে। এখন এ সার্চ কমিটির মাধ্যমে কি ধরনের নির্বাচন কমিশন গঠিত হয় সেটি দেখতে চাচ্ছেন তারা।

বামদলগুলোর মধ্যে অনুসন্ধান কমিটি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। এদের মধ্যে একটি অংশ আদর্শিকভাবে আওয়ামী লীগের সাথে যুক্ত। আরেকটি অংশ বিএনপির সাথে যুক্ত এবং আরেকটি অংশ এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না তারা কোন দিকে যাবেন। যেহেতু বাম দলগুলো ছোট এবং ভোটের মাঠেও তাদের খুব একটা প্রভাব নেই, সেহেতু রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মতামতের উপরই সবকিছু নির্ভর করবে।

অন্যদিকে সুশীল সমাজেও ভিন্ন ভিন্ন মত পাওয়া যাচ্ছে। একটি পক্ষ অনুসন্ধান কমিটিকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন এবং অনুসন্ধান কমিটির অনুসন্ধান যেন স্বচ্ছ হয় এ প্রত্যাশা করছেন। আরেকটি পক্ষ বলছেন, নির্বাচন কমিশন গঠন আইনে নতুনত্ব কিছু নেই, মূলত এর মাধ্যমে অতীতের অনুসন্ধান কমিটি গঠনের প্রজ্ঞাপনকেই আইনের পোশাক পরানো হয়েছে মাত্র। পাশাপাশি আইনটির উপযোগিতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন কেউ কেউ। এরকম পরিস্থিতিতে নিয়োগ প্রাপ্ত অনুসন্ধান কমিটি মেরুদণ্ড ওয়ালা লোকদের খুঁজে বের করতে পারে কি না, এ দিকেই লক্ষ রাখছে সুশীল সমাজসহ রাজনৈতিক সচেতন মহল।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭