ইনসাইড পলিটিক্স

সার্চ কমিটি নিয়ে বিএনপি'র এতো গাত্রদাহ কেন?


প্রকাশ: 07/02/2022


Thumbnail

নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির নির্দেশক্রমে শনিবার সুপ্রিমকোর্ট আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে প্রধান ছয় সদস্যের একটি সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে। সার্চ কমিটিতে রাষ্ট্রপতি মনোনীত দুজন বেসরকারি সদস্যের মধ্যে রয়েছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন এবং বিশিষ্ট চিকিৎসক, মনোবিজ্ঞানী এবং কথা সাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক। সার্চ কমিটির অন্যান্য সদস্যরা কারা হবেন সেটি নির্বাচন কমিশন গঠন আইনেই উল্লেখিত ছিল। বাংলাদেশ কর্ম কমিশনের সভাপতি, হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতি, মহা-হিসেব নিরীক্ষক এই কমিটির সদস্য। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এই কমিটিতে সাচিবিক দায়িত্ব পালন করছে। সার্চ কমিটি এরই মধ্যে গতকাল তাদের প্রথম বৈঠক সম্পন্ন করেছে এবং তারা এই বৈঠক থেকে দেশের সকল রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে নাম চেয়েছেন। কিন্তু সার্চ কমিটির কাছে নাম না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মাঠের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি। 

বিএনপি বলেছে, সার্চ কমিটি লোক দেখানো, এতে কোনো নাম প্রস্তাব করবে না তারা। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনও জনগণ হতে দেবে না। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই নির্বাচন দিতে হবে। আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে আরেকটি হুদা কমিশন করার জন্যই সার্চ কমিটি কাজ করছে। তাই সার্চ কমিটি নিয়ে কোনো আগ্রহ বা প্রত্যাশাও নেই বিএনপির। এ অবস্থায় বোঝাই যাচ্ছে সার্চ কমিটি গঠন হওয়ার পর থেকেই তাদের গাত্রদাহ শুরু হয়েছে। তাদের এই গাত্রদাহতে জনগণের বিরক্তির পর্যায়ে চলে গেছে। 

যদিও দেখা গেছে, বিএনপি'র এই সার্চ কমিটি নিয়ে বিপরীতমুখী আচরণ নতুন নয়। এর আগের বারও নির্বাচন কমিশন গঠনে যে সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছিল, সেই সার্চ কমিটি নিয়েও বিএনপি নেতারা নানা ধরনের কাথা বলেছিল। সে সময় দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেছিলেন, বাংলাদেশের মানুষ প্রত্যাশা করে, রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসন করতে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য একটি নিরপেক্ষ সার্চ কমিটি সত্যিকার অর্থেই নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দিয়ে গঠন করা হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সার্চ কমিটির যারা সদস্য হয়েছেন, তারা প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সে ক্ষেত্রে তাদের দ্বারা গঠিত নির্বাচন কমিশন কতটুকু নিরপেক্ষ হবে, সে সম্পর্কে আমরা সন্দেহ প্রকাশ করছি। এই সন্দেহ তাদের এবারও হয়েছে। কারণ সার্চ কমিটি গঠনের পর পরই গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এবং আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, সার্চ কমিটিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভোট চুরির নতুন প্রজেক্ট। এই সার্চ কমিটি গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। জনগণ ও গণতন্ত্রের কল্যাণে আসবে না এই সার্চ কমিটি। ফলে এই কমিটি নিয়ে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগের যেকোনো কাজে বিরোধীতা এটা নতুন কোনো বিষয় নয় বিএনপি'র জন্য। ভালো বা খারাপ সেটা পর্যবেক্ষণ না করেই তারা শুধু বিরোধীতা করার জন্য সব সময়ই আওয়ামী লীগের যেকোনো কাজের বিরোধীতা করে। কিন্তু তাদের এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা উচিৎ। কারণ শুধু বিরোধীদল জন্য বিরোধীতা করতে হবে বিষয়টি এমন হওয়া উচিৎ নয়। এসব ক্ষেত্রে নিজেদের বোধ-বুদ্ধিরও প্রয়োগ করা উচিৎ। কারণ সার্চ কমিটির প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান একজন সৎ এবং দক্ষ বিচারপতি হিসেবে পরিচিত। সুপ্রিমকোর্টে তার আলাদা একটা ইমেজ রয়েছে। বিশেষ করে ব্যক্তিত্ববান বিচারপতি হিসেবে তিনি আলাদাভাবে একটি জায়গা করে নিয়েছেন। আর সে কারণেই তার নেতৃত্বে সার্চ কমিটি যে খুব বড় ধরনের বিতর্ক তৈরি করবে না এটি অনেকেই আশা করেন। অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নূন্যতম সমঝোতায় দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ আরো সুন্দর হবে। বিএনপি'র উচিৎ হবে এই সার্চ কমিটির ওপরে আস্থা রাখা এবং তাদের কাজে সহযোগীতা করা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭