বিপিএল মানেই যেন সাকিব আল হাসানের রাজত্ব। এবারের বিপিএল নানা কারণে সমালোচিত হলেও তারকাবহুল বিপিএলের সময়ও সাকিব ছিলেন সকলের রাজা। একসময় আমাদের বিপিএলে খেলে গিয়েছেন ফর্মে থাকা ক্রিস গেইল, ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, ওয়ার্নার, ডেভিড মালান, স্টিভেন স্মিথের মত তারকা ক্রিকেটাররা। এসব বড় বড় তারকাদের সময়েও সাকিব ছিলেন সেরা, এখনও সাকিবই সেরা। এই সাকিব যেন অপ্রতিরোধ্য, দূর্বার।
বিপিএলের ইতিহাসে অনেক বিদেশি ক্রিকেটারই খেলেছেন। তবে সব সময়ের সেরা সফল খেলোয়াড়টি কিন্তু আমাদেরই। তিনি আর কেউ নন, এক মাত্র সাকিব আল হাসান।
বিপিএলের ইতিহাসে এবারের আগ পর্যন্ত অন্তত পাঁচ বার সেরা খেলোয়াড় হওয়ার দৌড়ে ছিলেন। তিন বার টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন। আর এবার চলতি বিপিএলে ব্যাট-বলে যেভাবে কথা বলতে শুরু করেছেন, তাতে তার কাছ থেকে সেরা খেলোয়াড়ের পুরষ্কারটা নেওয়া খুবই কঠিন হবে। মানে, চতুর্থবারের মতো সাকিবের টুর্নামেন্ট সেরা হওয়া যেন কেমন সময়ের ব্যাপার। আর সেটি হলে ‘টেট্রা লোডিং’ তো আমরা বলতেই পারি!
তবে সাকিবের এই পারফরম্যান্সকে স্রেফ এই চারটে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টের দৌড় দিয়ে বোঝা যাবে না। বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য তার এবারের পারফরম্যান্সটা ভয়াবহ গুরুত্বপূর্ন একটা ঘটনা। এটা বাংলাদেশের জন্য একটা অশনি সংকেত কাটিয়ে ওঠার মত খবর।
প্রথম দুই বিপিএলে সেরা খেলোয়াড় ছিলেন সাকিব। ২০১৮-১৯ মৌসুমেও সেরা খেলোয়াড় হয়েছিলেন তিনি। তখন এটা চোখ বড় করার কোনো ব্যাপার ছিলো না। কারণ, সাকিব তখন বিশ্বেরই সেরা অলরাউন্ডার ছিলেন। কিন্তু গত বছর দুই মনে হচ্ছিলো, সাকিবের ডিক্লাইনিং পর্ব শুরু হয়ে গেছে। বল হাতে যেমন তেমন, ব্যাট হাতে কিছুতেই সাকিবকে খুজে পাওয়া যাচ্ছিলো না।
সাকিব টি-টোয়েন্টিতে যে কোনো পর্যায়ে সর্বশেষ ফিফটি করেছিলেন ২০১৯ সালে। ২০১৯ বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে অতিমানবীয় পারফরম্যান্সের পর থেকে নিষেধাজ্ঞা, ইনজুরি মিলিয়ে অনেকদিন খেলায় ছিলেন না। যা খেলেছেন তাতে কোনো ফরম্যাটেই কার্যত খুব একটা রান পাচ্ছিলেন না। ফলে মনে হচ্ছিলো, তিন-চারে উঠে আসা সাকিব একটা বিপদের কারণ হয়ে যাচ্ছেন।
সাকিব এমনিতেই বাংলাদেশের বোলিং-ব্যাটিং দুটোতেই সেরা ভরসা। বোলিংয়ে সার্ভিসটা দিচ্ছিলেন। কিন্তু ব্যাটিংয়ে তার এই করুন দশা দেশকে দুশ্চিন্তায় ফেলেছিলো। বিশেষ করে বছর দুই আগেই তিনি অনেকটা জোর করে লিমিটেড ওভার ক্রিকেটে ৩-৪ নম্বরে উঠে এসেছিলেন। এখানে সাকিব নিয়মিত ব্যর্থ হলে দলের ঘোরতর বিপদ।
এমন দুশ্চিন্তা নিয়েই শুরু হলো বিপিএল। আর বিপিএলেই সাকিব বুঝিয়ে দিলেন, তিনি ফুরোননি; অনেকটা বাকী রয়ে গেছে।
চলতি বিপিএলে দুটি ফিফটিসহ সাকিব টুর্নামেন্টের চতুর্থ সর্বোচ্চ রান স্কোরার। এটাই বলে দিচ্ছে, সাকিব আছেন। ব্যাট হাতে এখনও তিনি যে নিজের দিনে বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারেন সেটির সর্বশেষ আভাস দিলেন বরিশালের পক্ষে ৩৭ বলে ৫০ রান করে। ওদিকে বল হাতেও সাকিব ছুটছেন। গতকালের ম্যাচে বোলিং করার আগ পর্যন্ত ৬ ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টের তৃতীয় সেরা উইকেট শিকারী।
সব মিলিয়ে সাকিব যেভাবে ছুটে চলছেন, এই সাকিবকে কে আটকাবে? আর এই সাকিবের কাছ থেকে টেট্রা কে কেড়ে নেবে? অপ্রতিরোধ্য সাকিব ছুটে চলুক আপন গতিতে।