ইনসাইড পলিটিক্স

ইউপি নির্বাচনের ফলাফল কি জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে?


প্রকাশ: 08/02/2022


Thumbnail

চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সপ্তম ধাপের ভোট গতকাল সোমবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিচ্ছিন্ন সহিংসতা, ব্যালট পেপার ছিনতাই, ভোটকেন্দ্র দখলের অপচেষ্টাসহ নানা অনিয়মের মধ্য দিয়ে শেষ হয় নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। স্থানীয় এমপি-মন্ত্রী ও জেলা-উপজেলার শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল, দ্বন্দ্ব ও বলয়ভিত্তিক রাজনীতির কারণে অনেক জেলায় প্রথম ছয় ধাপের মতো সপ্তম ধাপেও নৌকার ভরাডুবি হয়েছে। এসব ইউপিতে জয়লাভ করেছেন দলটির বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। অনেক জায়গায় হারিয়েছেন জামানতও। জাতীয় নির্বাচনে ইউপি নির্বাচনের প্রভাব পড়বে না, আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা এমনটি বললেও তৃণমূলে দলীয় কোন্দল বাড়তে থাকলে তার প্রভাব সরাসরি জাতীয় নির্বাচনে পড়বে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। পাশাপাশি বিজয়ের এই নিম্নমুখী হারের পেছনে দলের স্থানীয় পর্যায়ের দুর্বলতাকে দায়ী করছেন বিশ্লেষকরা।

বিএনপি নির্বাচনে না আসায় এবং সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি মাঠে তেমন সক্রিয় না থাকার কারণে এ নির্বাচনে বৃহৎ দল হিসেবে একমাত্র আওয়ামী লীগই অংশ নিয়েছে। মূলত আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক প্রাপ্ত এবং আওয়ামী লীগেরই বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে হচ্ছে এ নির্বাচন। ফলে অনেকেই এই নির্বাচনকে আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের নির্বাচন বলেই মনে করেন। দুই দিন আগের রাজপথের সাথী আজ ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চরম শত্রুতে পরিণত হয়েছে। শত্রুতার মাত্রা এতটাই ছাড়িয়েছে যে, বিরোধী প্রার্থীসহ তার সমর্থকদের প্রাণ নিতেও দ্বিধা নেই তাদের। এমনকি সপ্তম ধাপে নির্বাচনের উচ্ছৃঙ্খলা ঠেকাতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যেও দু’জন ব্যক্তি মারা গেছেন। এরকম পরিস্থিতিতে ইউনিয়নে-ইউনিয়নে তৃণমূলে আওয়ামী লীগের এ বিভক্তি যদি চলতে থাকে, তাহলে পরে তা জাতীয় নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব রাখবে। দুই দিন আগে যার সাথে সংঘর্ষ হয়েছে, তার সাথে একত্রিত হয়ে প্রচার-প্রচারণাসহ নির্বাচন করতে অনেকেই চাইবে না বলেই মনে করছেন তৃণমূল আওয়ামী লীগের কর্মীরা।  

নির্বাচনের ফলাফলের বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে না চাইলেও এটিকে নেতিবাচক হিসেবেই দেখছেন দলের নীতি নির্ধারকরা। ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একদিকে যেমন দলের মধ্যে তৃণমূল পর্যায়ে বিভেদ প্রকাশ পেয়েছে, তেমনি দলীয় প্রার্থীর বিজয়ের হারও কাঙ্খিত নয় বলে তারা মনে করছেন। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনের এই ফলাফল তাদের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নীতি নির্ধারকদের মতে, স্থানীয় পর্যায়ে কিছু দুর্বলতা থাকায় সংকট কাটিয়ে উঠতে দল ব্যর্থ হয়েছে। যার ফলে নির্বাচনের ফলাফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে এবং অনেক প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন।

নির্বাচনের এই ফলাফল সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, স্থানীয়ভাবে সব জায়গায়ই ব্যক্তি-গোষ্ঠীর মধ্যে দূরত্ব থাকে। আবার আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও আঞ্চলিকতার বিষয়ও রয়েছে। তাছাড়া আওয়ামী লীগ বিরোধী একটা গোষ্ঠী রয়েছে, বিএনপি-জামায়াতের ভোট রয়েছে। এগুলো সবই নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করেছে। এর ফলে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা পরাজিত হচ্ছেন।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বাংলা ইনসাইডারকে বলেন, মানুষ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা যে ঘটেনি, এমনটি নয়। অবশ্যই দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু তৃণমূলের প্রতিটি নির্বাচনেই এমনটি হয়। এমন কোনো আমল নেই, যে আমলে এরকম দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেনি। তৃণমূলে বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড়ানোর কারণ হচ্ছে, প্রার্থীরা মনে করে এ নির্বাচন ক্ষমতা পরিবর্তনের নির্বাচন নয়, এই নির্বাচনে ক্ষমতা পরিবর্তন হবে না। যার ফলে অনেক বিদ্রোহী প্রার্থী থেকে যায়। তারা নৌকা প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নেয়। পাশাপাশি বিদ্রোহীদেরও কিছু ভোট থাকে। তৃণমূলে আওয়ামী লীগের অনেক কর্মীও তাদের পক্ষে ভোট দেয়। এছাড়া যেসব সাম্প্রদায়িক শক্তি নৌকাকে পছন্দ করে না, বিএনপি-জামায়াতের সমর্থকরাও বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নেয়। এই সবকিছু মিলিয়ে অনেক সময় বিদ্রোহী প্রার্থী জিতে যায়। তারপরও আমরা মনে করি, নির্বাচন উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। জনগণ ভোট কেন্দ্রে গিয়েছে। গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে, এটিই বড় কথা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭