ইনসাইড পলিটিক্স

আইভী যুগে প্রবেশ করলো নারায়ণগঞ্জ


প্রকাশ: 09/02/2022


Thumbnail

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে তৃতীয়বারের মতো শপথ নিলেন সেলিনা হায়াৎ আইভী। এর মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে একক কর্তৃত্ববান ব্যক্তিতে পরিণত হলেন আইভী বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এর ফলে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আইভী যুগের সূচনা হলো বলেও কেউ কেউ মনে করছেন। সেলিনা হায়াৎ আইভী নারায়ণগঞ্জে অসম্ভব জনপ্রিয় নেতা এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সারাজীবন রাজনীতিতে তাকে লড়তে হয়েছে দলের বিরুদ্ধেই। কারণ এই নারায়ণগঞ্জ মানেই একটা সময় মনে করা হতো শামীম ওসমানের নারায়ণগঞ্জ এবং নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগে শামিম ওসমান ছিলেন অবিসংবাদিত নেতা। তার কথায় নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ উঠত বসত। এরকম একটি বাস্তবতায় সেলিনা হায়াৎ আইভীর টিকে থাকা এবং উত্থান এক বিস্ময়কর ঘটনাই বটে। ২০০৩ সালে সেলিনা হায়াৎ আইভীকে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার মেয়র পদে আওয়ামী লীগ নমিনেশন দিয়েছিল এক কঠিন সময়ে। সেই সময় শামীম ওসমান বিদেশে পলাতক ছিলেন। আর সে কারণেই দলের অভ্যন্তরে কোনো বিরোধের মুখোমুখি হননি। বিএনপি'র প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করে সেই দুঃসময়ে তিনি আওয়ামী লীগের মুখে হাসি ফুটিয়েছিলেন।

কিন্তু নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন হওয়ার পর প্রথমবারের মতো নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের সমর্থন পাননি। নির্দলীযয় প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি শামীম ওসমানকে লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। যদিও তারপর তাকে আওয়ামী লীগ থেকে এর জন্য বহিষ্কার করা হয়নি। কিন্তু লক্ষাধিক ভোটে বিজয়ী হওয়ার পরও নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের চাবি কখনোই আইভীর হাতে আসেনি। বরং তিনি আওয়ামী লীগে সবসময় অনাহুত ছিলেন। এই নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পরও শামীম ওসমানের ক্ষমতা, দাপট নারায়ণগঞ্জে বাড়ে। এরপর দ্বিতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আর ভুল করেনি। তখন দলীয় প্রতীকে নির্বাচন শুরু হয় এবং ওই নির্বাচনে আইভীকে দলীয় প্রতীক দেওয়া হয় এবং দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করে আইভী বিএনপির প্রার্থীকে বিপুল ভোটে পরাজিত করেন। এবার যখন আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেয় তখন শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জে আইভীকে নির্মূলের এক নীলনকশা রচনা করেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন যে, নির্বাচন এমনভাবে হবে যেখানে আইভী হেরে যাবেন এবং তার রাজনীতির জীবনাবসান ঘটবে। আর এ কারণেই তৈমুর আলম খন্দকারকে প্রার্থী করা হয় এবং তাকে বিপুল পরিমাণ অর্থ এবং অন্যান্য সহযোগিতা দেওয়া হয়।

কিন্তু নারায়ণগঞ্জ নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয় জাহাঙ্গীর কবির নানকের নেতৃত্বে ৫ জন আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে। তারা এই নির্বাচন পরিচালনা করতে গিয়ে বুঝতে পারেন যে, শামীম ওসমান শুধু আইভীরই ক্ষতি করতে চাইছেন না, নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগকেও পঙ্গু করে ফেলছেন। এই অবস্থায় নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমানের খুঁটি নড়বড়ে হয়ে পড়ে এবং সেই সময়ে নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমানের সিন্ডিকেটকে নষ্ট করার প্রক্রিয়া শুরু করেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। আওয়ামী লীগ সভাপতিকে প্রকৃত অবস্থা বিশ্লেষণ করেন। বাইরে থেকে শামীম ওসমান আইভীকে সমর্থন করলেও ভেতরে ভেতরে যে তিনি আইভীর ক্ষতি করার জন্যই কাজ করেছেন এটা স্পষ্ট হয় কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে। আর তারপর তাদের তৎপরতার কারণেই শেষ পর্যন্ত শামীম ওসমানের নীলনকশা বাস্তবায়িত হয়নি। আইভী ওই নির্বাচনে বিপুল বিজয়ী হন এবং বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে পরিচিত এই নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন। এই নির্বাচনের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ এবং আওয়ামী লীগ নিয়ে শামীম ওসমানের আবেগ অনেকটাই ফ্যাকাশে হয়ে যায় এবং এই সমস্ত ভালোবাসা আবেগ এবং কথার ছলচাতুরির মধ্য দিয়ে তিনি যে আসলে দলকে নিজের মুঠোর মধ্যে রাখতে চান, সেটি প্রমাণিত হয়। ফলে নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমান কোণঠাসা হয়ে পড়েন। আজ আইভীর শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আইভী যুগের সূচনা হলো বলেও অনেকে মনে করছেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭