ইনসাইড টক

‘ডোনাল্ড ট্রাম্প যে পলিসি নিয়েছিল, সেটাই জো বাইডেন করছে’


প্রকাশ: 10/02/2022


Thumbnail

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ন্যাটোর প্রয়োজনীয়তা এখন আছে কিনা ইউরোপে সেটা এখন প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, আমেরিকা বা ইউরোপের হয়তো একজন দুইজন দেখাতে চাচ্ছে ন্যাটোর প্রয়োজনীয়তা আছে। কারণ রাশিয়া ইউক্রেন দখল করে ফেলবে ইত্যাদি। ইউরোপে আমেরিকার অনেক মিলিটারি বেইজ আছে। জার্মানিতেই আছে ১১৯টির মতো মিলিটারি বেইজ। এখন প্রশ্ন দুইদিক থেকেই উঠেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় থেকে শুরু হয়েছে। কারণ, ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিল যে এতগুলো মিলিটারি বেইজ রাখা হয় এবং এর যে খরচ হয় সেটি তো আমেরিকা বহন করে। তারা প্রশ্ন করেছে, ইউরোপ কেন সেটি বহন করবে না। এখন ইউরোপ চাচ্ছে না আমেরিকার মিলিটারি বেইজকে সে পয়সা দিক, স্বাভাবিকভাবে সে এটা চাচ্ছে না। এখন সেই জায়গায় সমস্যা দাঁড়িয়েছে।

আমেরিকা-রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেন নিয়ে চলমান সঙ্কটের বিভিন্ন বিষয়ে বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ এসব কথা বলেছেন। পাঠকদের জন্য অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর নিজস্ব প্রতিবেদক মাহমুদুল হাসান তুহিন।

অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, জার্মানি নিয়েই এখন একটি বিরাট সমস্যা। জার্মানির যে ১১৯টি মিলিটারি বেইজ, ইউকেতে আছে ২৫টির মতো, ইতালিতে আছে ৪০টির উপরই। এই যে মিলিটারি বেইজগুলো, এগুলো যদি এখন সরিয়ে নেয় তাহলে তো আমেরিকার যে ​আধিপত্য ইউরোপে সেটি থাকবে না। সেখানে তারা চিন্তিত রাশিয়ার সাথে জার্মানির যে সম্পর্ক এখন এবং চীনের যে সম্পর্ক হচ্ছে বিভিন্ন ইউরোপের দেশের সাথে সেটি নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই আমেরিকা চিন্তিত। সেই জায়গায় থামানোর এখন একমাত্র উপায় হলো এই ধরণের একটি অবস্থা যদি দেখানো যায় যে, ইউক্রেন রাশিয়ার দিকে চলে যাচ্ছে। কারণ, সমস্যা হলো যে রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে একটা চুক্তি হয়েছে যে চুক্তিতে ন্যাটো সেখানে থাকবে না। কারণ, এই চুক্তি ভাঙ্গতে চাচ্ছে ইউক্রেনের কিছু রাজনীতিবিদ, এমনকি বর্তমান যে সরকার আছে তারা। সেই বিষয়ে তো রাশিয়া বলছে এটা গ্রহণযোগ্য না।

তিনি আরও বলেন, গ্রহণযোগ্য নয় বলে কি রাশিয়া ভিতরে ঢুকবে? আমর মনে হয়না রাশিয়া সেটি করবে। রাশিয়া আবার এটাও চাইবে না যে ন্যাটো ইউক্রেনে পৌঁছায়। কারণ, ইউক্রেনে যাওয়া মানে একেবারে সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছাকাছি বা পূর্ব ইউরোপে চলে যাওয়া। এটাই হলো সমস্যাটা। এই সমস্যাটা হয়েছে অনেকে কারণেই। কারণ, মহামারীর সময় আমেরিকার অর্থনীতির অবস্থা ভালো না, এদিকে আফগানিস্তান থেকে আবার প্রত্যাহার করেছে, সেখানেও তাকে প্রশ্ন করেছে যে, আমেরিকার আধিপত্য পৃথিবীতে কমে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে এমন একটা অবস্থায় এই ঘটনাটা ঘটছে যখন পুরো জিনিসটা এখন ইউরোপিয়ানদের ওপরই সমাধান বলে আমার মনে হয়। যদি আমেরিকার সাথে এখানে সমঝোতায় আসে বা কোন ফর্মুলা যদি বের করতে পারে তাহলে আমার মনে হয় ইউক্রেন সমস্যা অতখানি থাকবে না। এখন জার্মানি, ফ্রান্স কি পদক্ষেপ নিবে এ নিয়ে দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়েছে। ফ্রান্সের ম্যাক্রো রাশিয়া যেয়ে পুতিনের সাথে কথা বলেছে, ওইদিকে আবার জার্মানি বলছে এখানে কোন যুদ্ধের অবস্থাই নেই। কারণ, ইউরোপিয়ানরা তো এই যুদ্ধ চাইবে না।

চীন প্রসঙ্গে অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, চীন মোটামুটি ইউরোপে ঢুকে পড়েছে ইউরোপে ঢুকে পড়েছে, সেখানে সে তাঁর ব্যবসা বাড়াতে চেষ্টা করবে। চীন রাশিয়ার সাথেই থাকবে, এতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ, চীনও আমেরিকার যে আধিপত্য সেটা কমাতে চাইবে।

তিনি বলেন, এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে, জার্মানি প্রস্তুত কিনা ওখান থেকে আমেরিকার মিলিটারি বেইজগুলো সরানোর জন্য, এটা বিশাল একটা বিষয়। এগুলো সব দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে হয়েছে। তারপরে ইতালিতেই আছে ৪০টার উপরে, স্পেনে আছে। এগুলো কি সরাবে, সেটাই এখন প্রশ্ন। অনেকে তো ভেবেছিল যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পর জো বাইডেন এসে নতুন চিন্তাভাবনা করবে। কিন্তু এখন তো দেখা যাচ্ছে যে, ওই একই পলিসি জো বাইডেনও নিচ্ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প যে পলিসি নিয়েছিল সেটাই জো বাইডেন করছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, তাদের যে মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স আছে, সেখানে একটি ঐক্যমত্য আছে এবং সেটি যেন থাকে। সেই সাথে আমেরিকার আধিপত্য যেন থাকে এবং খরচটা যেন ইউরোপ বহন করে। তো সেটা ইউরোপ কেন চাইবে। সেই জায়গায় হলো সমস্যা। এটা যতখানি রাশিয়ার সঙ্গে সমস্যা, একইসাথে এটা আমেরিকার সাথে ইউরোপের। এখানে কেউ নজর দিচ্ছে না। এটা কীভাবে সমাধান হবে সেটি দেখা দরকার।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭