বর্তমান মন্ত্রিসভা নিয়ে অনেক সমালোচনা আছে। মন্ত্রিসভার অনেক সদস্যদের অপরিপক্বতা এবং নির্লিপ্ততা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন রয়েছে। কিন্তু এর মধ্যেই কিছু কিছু মন্ত্রী তাদের কর্মক্ষেত্রে সফল হয়েছেন এবং সরকারের লক্ষ্য অর্জনের জন্য নিরলসভাবে কাজ করছেন। মজার ব্যাপার হলো যে, এই সমস্ত মন্ত্রীদেরকে এখন টার্গেট করা হয়েছে। নির্বাচনের আর দুই বছরেরও কম সময় বাকি আছে। এই সময় যে সমস্ত মন্ত্রীরা অপেক্ষাকৃত উজ্জ্বল, যাদের রাজনৈতিক মনস্কতা রয়েছে এবং যারা সরকারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে সরব তাদেরকে টার্গেট করা হচ্ছে। আর এরকমই টার্গেটের সর্বশেষ শিকার হয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম হলেন মন্ত্রিসভার সেই সদস্যদের একজন যিনি নিয়মিত বিভিন্ন টকশোতে অংশগ্রহণ করে সরকার সম্পর্কে সঠিক তথ্যগুলো উপস্থাপন করছেন এবং বিভিন্ন ইস্যুতে তিনি নীতিনির্ধারণী বক্তব্য রাখছেন। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী হিসেবে তিনি বর্তমান মন্ত্রিসভার সবচেয়ে সফল মন্ত্রীদের একজন।
তিনি মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু পরবর্তীতে তাকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এখানে দায়িত্ব পেয়ে তিনি একের পর এক সাফল্যের নজির স্থাপন করেছেন। গতকালই মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রীর উদ্যোগে প্রাণিদের জন্য ভ্রাম্যমান অ্যাম্বুলেন্স উদ্বোধন করা হয়। এই অ্যাম্বুলেন্সগুলোকে বলা হয় এমভিসি বা মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক। এটির মাধ্যমে প্রত্যন্ত এলাকায় কোনো প্রাণী অসুস্থ হলে তার চিকিৎসার জন্য এই ভ্রাম্যমান ক্লিনিকটি তার বাড়ির দোরগোড়ায় পৌঁছে যাবে এবং তার সেবা দেবে। এছাড়াও বর্তমান মন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণের পর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে অনেকগুলো যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে যখন করোনার প্রকোপ বেড়ে গিয়েছিল সেই করোনা প্রকোপের সময় খামারিরা একটি কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল। বিশেষ করে তাদের উৎপাদিত ডিম, দুধ ইত্যাদি বিক্রি নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। এগুলো নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল। সেই সময় প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী একটি উদ্ভাবনী উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি ভ্রাম্যমান বিক্রয়কেন্দ্র চালু করেন এবং এই বিক্রয়কেন্দ্রগুলোর কাজ ছিল খামারিদের কাছ থেকে দুধ, ডিম ইত্যাদি সংগ্রহ করবে এবং সেটি মানুষের কাছে বিক্রি করবে। লকডাউনের সময় এই উদ্যোগ যদি গ্রহণ না করা হতো তাহলে পরে বাংলাদেশের ডেইরি এবং প্রাণিসম্পদ খাতে বিপর্যয় নেমে আসত।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী সেই বিপর্যয় কাটানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং এইজন্য তিনি ভূয়সী প্রশংসিত হয়েছিলেন। এই সময় প্রাণিসম্পদ খাতে উন্নয়নের জন্য বিশেষ করে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মন্ত্রীর উদ্যোগে প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হয় এবং এই প্রণোদনার জন্য খামারিদেরকে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা প্রদান করা হয়। এছাড়াও করোনার সময় কাটাবনে বিক্রির জন্য যে পশুপাখিগুলো ছিল, সেগুলো যেনো সঠিকভাবে খাবার পায় তার উদ্যোগ নিয়েছিলেন মন্ত্রী। সম্প্রতি তিনি চিড়িয়াখানায় আকস্মিক পরিদর্শনে যান এবং সেখানকার প্রাণীগুলোর খোঁজখবর নেন। আর এভাবেই তিনি প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় হিসেবে আলোচনায় নিয়ে এসেছেন। এই প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এমন একটি মন্ত্রণালয়, যার কার্যক্রম তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত এবং যেটি নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিকটি প্রান্তিক পর্যায়ে বিপ্লব তৈরি করবে বলে অনেকে মনে করছেন। এরকম পরিস্থিতিতে তার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন করার অর্থই হলো যে, সরকারের অর্জনগুলোকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার নীলনকশা।