ইনসাইড থট

ধন্য যে নেতা


প্রকাশ: 10/02/2022


Thumbnail

সে অনেককাল আগের কথা।

রাক্ষস কবলিত লঙ্কাদ্বীপে লীলাবতী নামে অনিন্দসুন্দরী রাজকুমারী ছিলেন। যদিও তিনি ক্ষনা নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। প্রচলিত ধারণা অনুসারে লীলাবতীর জন্ম হয়েছিল এক শুভক্ষণে। এখান থেকেই পরিবর্তিত হয়ে খনা নামটি এসেছিলো বলে ধারণা করা হয়ে থাকে। ৮০০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তার আবির্ভাব হয়েছিল। কিংবদন্তি অনুসারে তিনি বাস করতেন পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার বারাসাত মহকুমার দেউলিয়া গ্রামে। যদিও ক্ষনার এসকল পরিচয়ের জন্য ইতিহাস তাকে মনে রাখেনি। ক্ষনা বিখ্যাত হয়ে আছেন তার ভবিষ্যতবাণীগুলোর জন্য, যা 'খনার বচন' নামেই বহুল পরিচিত। 

খনা ছিলেন তার যুগের থেকেও বেশি আধুনিক। কারণ খনার এক একটি বচন আমাদের লোকসংস্কৃতির আকর্ষণীয় অংশ হয়েই থেকে গেছে। খনার বচনকে ভবিষ্যদ্ববাণী বলার আরেকটি কারণ হচ্ছে তার দ্বারা নির্ধারিত আবহাওয়ার পূর্বাভাসগুলো কৃষি ও রাষ্ট্রকার্যে অনেক সহায়ক ভূমিকা রেখেছিল। খনা তাই ছিলেন প্রাচীন ভারতের একজন আবহাওয়াবিদ- এ কথা বললেও ভুল হবে না। খনা তার এক ভবিষ্যৎবাণীতে বলেছিলেন যে “ যদি বর্ষে মাঘের শেষ, ধন্যি রাজা পুণ্যি দেশ। এই বচনের মর্মার্থও হচ্ছে মাঘ মাসের শেষের দিকে বৃষ্টি হওয়া দেশের ফসল ফলার জন্য উপকারী। কালে কালে খনার এই বিখ্যাত বচনের সত্যতাও মিলেছে। 

তবে খনার বচন অনুসারে শুধু মাঘ মাসের শেষে বৃষ্টি হলেই কিন্তু সব সময় দেশের জন্য মঙ্গল হবে এমনটা ভেবে নেওয়া ঠিক হবে না। এক্ষেত্রে একটি দেশ কার দ্বারা কিভাবে পরিচালিত হচ্ছে সেটিও বিবেচনার বিষয়। কারণ একজন অযোগ্য রাজা যদি দেশ পরিচালনার দায়িত্বে নিযুক্ত থাকেন তাহলে কখনই সেই দেশের মঙ্গল বা উন্নতি শুধুমাত্র মাঘের শেষের বৃষ্টি দিয়েই হওয়া সম্ভব নয়। 

আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যেন ক্ষনার বচনের সেই রাজা যিনি গত ১৩ বছর ধরে দেশের আপামর জনসাধারণের ভরসা এবং ভালবাসা নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। তিনি এমন একজন রাজা যিনি এদেশের আপামর জনসাধারণের স্বপ্নগুলোকে নিজের মধ্যে লালন করে একের পর এক পালক যুক্ত করে চলেছেন দেশের সফলতার মুকুটে। যার ফলে লাভবান হচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ আজ গোটা বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সল্যুশনস নেটওয়ার্ক (এসডিএসএন) দারিদ্র্য দূরীকরণ, পৃথিবীর সুরক্ষা ও সবার জন্য শান্তি-সমৃদ্ধি নিশ্চিতে উদ্যোগ গ্রহণের সার্বজনীন আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশকে সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যাবার পুরস্কারস্বরূপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেওয়া হয়েছে  “এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার”।

চলুন একটা ছোট্ট ফ্ল্যাশব্যাকে যাওয়া যাক। ২০০৮ সাল! নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং এদেশের জন্মে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ তার নির্বাচনী ইশতেহারের নাম দিয়েছিলো “দিন বদলের সনদ”। কারণ সেই ইশতেহার এদেশের মানুষকে দেখিয়েছিলো সেই স্বপ্ন যা এদেশের প্রতিটি মানুষ দেখতে চায়। নির্বাচনের পরে দেশের মানুষের সেবার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেবার পর থেকেই যেন আমাদের শেখ হাসিনার প্রতিটি ক্ষণ প্রতিটি মুহূর্ত কেটেছে দেশের মানুষের কল্যাণ চিন্তায়, কারণ তিনি যে গোটা দেশের মানুষের স্বপ্ন সারথি। ইশতেহার বাস্তবায়নে দেশকে করেছেন খাদ্য শস্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। শিক্ষা স্বাস্থ্য, জ্বালানি সুরক্ষা, দেশের রপ্তানি বৃদ্ধি, প্রবাসীদের কল্যাণে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া সহ বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে কাজ করেছে তার নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ সরকার। শুধু তাই নয় দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন থেকে বিশ্বব্যাংক সহ দাতা সংস্থাগুলো পিছিয়ে গেলে জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা বলিষ্ঠ কন্ঠে ঘোষণা দিয়েছিলেন আমাদের টাকায় নির্মিত হবে পদ্মাসেতু। অনেকে পিছিয়ে গেলেও শেখ হাসিনা দেশের মানুষকে তার দেওয়া সেই কথা রেখেছেন। গোটাবিশ্ব আজ অবাক হয়ে দেখছে কিভাবে আজ বাংলাদেশ আজ পদ্মা সেতুকে দৃশ্যমান করেছে। এইতো কিছুদিন পরেই পদ্মার বুকে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকা পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে এপার থেকে ওপারে যাবে দেশের মানুষের স্বপ্ন।

শেখ হাসিনা আছেন বলেই মেট্রোরেল, কর্নফুলি টানেল, রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, এক্সপ্রেসওয়ে সহ সকল উন্নয়ন দৃশ্যমান। দেশের তারুণ্যকে সাথে নিয়ে তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানের। সেই ফলাফলও আজ আমাদের চোখের সামনে। গড়ে উঠেছে ডিজিটাল বাংলাদেশ। দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছাড়িয়েছে আড়াই হাজার ডলার। মাথাপিছু জিডিপিতে আমরা ছাড়িয়েছি পার্শবর্তী দেশ ভারতকেও।

জাতির পিতা স্বাধীন বাংলাদেশে ভূমিহীনদের ঘর করে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু যে সাড়ে তিন বছর তিনি বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছিলেন তার সেই অসম্পূর্ণ স্বপ্নের সোনার বাংলাকেই যেন নিজ দক্ষতায় গড়ে তুলছেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষের আবাসন নিশ্চিতকল্পে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার অন্যতম উদ্ভাবন আশ্রয়ণ প্রকল্প। একটি ঘর একটি ছিন্নমূল পরিবারের দারিদ্র্য হ্রাসসহ সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার, এটি এখন প্রমাণিত। শেখ হাসিনা সেই রাজা যিনি তার দেশের প্রতিটি মানুষকে নিয়ে চিন্তা করেন। দেশের সুবিধাবঞ্চিত ও ছিন্নমূল প্রতিটি মানুষের আশ্রয়স্থল শেখ হাসিনা। তাই জাতির পিতার স্বপ্ন লালন করা শেখ হাসিনার হাতেই দেশ আজ নিরাপদ। এ দেশের প্রতিটি মানুষ তাই স্বপ্ন দেখতে পারছে।  সেদিন আর বেশি দূরে নয় যেদিন অর্থনীতি, রাজনীতি সহ সকল ক্ষেত্রে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছুবে।

এই লেখাটির শেষভাগের মতই মাঘ মাসের শেষভাগে চলে এসেছি আমরা। এইতো আর কয়েকতা দিন পরেই ঋতুরাজকে বরণ করে নেবে প্রকৃতি। মাঘ মাসের শেষের দিকে বৃষ্টি হলে তা ফসলের জন্য খুবই উপকারী বলে মনে করা হয়। তাই দেশের উপকার হয়, রাজাও স্বাচ্ছন্দে থাকেন। মাঘের এই বৃষ্টির পরশ যখন আমাদের ছুঁয়ে যায় তখন মনে হয় ইতিহাসের লীলাবতী ক্ষনার সেই বচনের মতো সামনের দিনগুলো হয়তো আমাদের গোটা দেশের জন্য সৌভাগ্য হয়েই আসবে। এবারের মাঘের শেষভাগের এই বৃষ্টি আমাদের দেশের কৃষি ব্যবস্থার জন্য মঙ্গল বয়ে নিয়ে আসুক। সেইসাথে শেখ হাসিনার হাত ধরে দেশ এগিয়ে যাক সম্ভাবনার আগামীর পথে। কারণ ধন্যি রাজার হাতে পরিচালত এই দেশ এবার দেখা পেয়েছে মাঘের শেষের বর্ষনের। তাই ক্ষনার বচনের সাথে সুর মিলিয়ে বলা যেতেই পারে “যদি বর্ষে মাঘের শেষ, ধন্যি রাজা পুণ্যি দেশ”।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭