ইনসাইড বাংলাদেশ

আজ ভাষা সৈনিক গাজীউল হকের জন্মবার্ষিকী


প্রকাশ: 13/02/2022


Thumbnail

ভাষা সৈনিক গাজীউল হক। যিনি ১৯৫২ সালে বাংলা ভাষা আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। বাংলা ভাষার দাবিতে রাজপথে তিনি মিছিল করেন, স্লোগান দেন। আজ এই সাহসী ভাষা সৈনিকের জন্মবার্ষিকী। তিনি ১৯২৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালী জেলার ছাগলনাইয়া থানার নিচিন্তা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম মওলানা সিরাজুল হক, কর্মজীবনে তাঁর বাবার ছিলেন কংগ্রেস ও খেলাফত আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী।

ছেলেবেলায় গাজীউল হক ছিলেন অনেক দুরন্ত, সাহসী এবং জেদি। হাতের কনুই দিয়ে নারকেল ভেঙ্গে ফেলতেন। একবার কোনো কাজ করার সিদ্ধান্ত নিলে তা তিনি করেই দেখাতেন। তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় নোয়াখালী জেলার ছাগলনাইয়া থানার নিচিন্তা গ্রামের বাড়ির সামনে একটি মক্তবে। শিক্ষাজীবনে তাঁর প্রথম শিক্ষক ছিলেন জমিরউদ্দিন। মক্তবের পড়াশুনা শেষ করে তিনি কাশিপুর স্কুলে ভর্তি হন। এই স্কুল থেকে তিনি উচ্চ প্রাইমারি বৃত্তি লাভ করেন। ১৯৪১ সালে গাজীউল হক বগুড়া জেলা স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হন। গাজীউল হক ছিলেন ক্লাসের একমাত্র মুসলিম ছাত্র। 

প্রতি বছরই বিদ্যালয়ে বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে একটি সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হত। একবার তিনি এই সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বির্তক, আবৃত্তি এবং গানে অংশ নিয়ে পুরস্কার পান। আর চার লাইনের একটি ছড়া লিখে তিনি বেশি আলোচিত হন। ছড়াটি ছিল – আমি গাইব গান মুক্ত কন্ঠে, জীবন দীপের আলো জ্বেলে, সুর ছড়াবো, রং ছড়াবো, পুড়বো আমি, আলো ছড়াবো।

বিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পরই ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবস উদযাপন করার জন্য ছাগলনাইয়ায় মিছিল বের হয়। গাজীউল হক এই মিছিলে অংশ নেয়।এতেই থেমে রইলেন না তিনি। সে সময়ে কয়েকজন ছাত্র মিলে ‘বিদ্রোহী’ নামে একটি হাতে লেখা ম্যাগাজিন বের করতেন। 

১৯৪৭ সালের ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় অসাম্প্রদায়িক যুব প্রতিষ্ঠান গণতান্ত্রিক যুবলীগের দুদিনব্যাপী কমী সম্মেলনের আয়োজন করে। গাজীউল হক বগুড়ার পাঠচক্র ‘শিল্পায়নে’র সদস্যদের সঙ্গে অংশ নেন। এই সম্মেলনে নেতৃত্ব দেয় তাসাদ্দুক হোসেন, মোহাম্মদ তোয়াহা, শামসুল হক প্রমুখ। সম্মেলনে প্রস্তাব পাঠ করেন শেখ মুজিবুর রহমান। যার অন্যতম প্রস্তাব ছিল ‘মাতৃভাষাই হবে শিক্ষার বাহন, অফিস আদালতের ভাষা হবে বাংলা।’ এভাবেই তিনি ভাষা আন্দোলনের একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে কাজ করেন।

১৯৪৮ সালে তিনি বগুড়া কলেজ থেকে আই.এ. পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিষয়ে অর্নাসে ভর্তি হন। এরপরই সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের আবাসিক ছাত্র হন। লেখাপড়ার পাশাপাশি ভাষা আন্দোলনে অংশ নেন। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে কারাবরণ করেন। ১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিম্ন বেতন কর্মচারিগণ ধর্মঘট আহবান করলে ছাত্রনেতাদের সঙ্গে তিনিও এর সমর্থন করেন। ৪৯ এর  ধর্মঘট আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার জন্যই বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা ও নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে। 

১৯৪৮ সালে পূব-পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের বগুড়া জেলা শাখার সভাপতি হন। এ বছরই প্রথম বাংলা ভাষার দাবিতে প্রদেশব্যাপী আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়। ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ তাঁকে বগুড়ার ছাত্রদের ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণে নেতৃত্বদানের জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। বগুড়াতে কবি আতাউর রহমানকে আহ্বায়ক করে একটি ‘বাংলা ভাষা সংগ্রাম কমিটি’ গঠন করা হয়। ১৯৫৬ সালে তাঁর ছাত্রজীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে। 

গাজীউল হক এসিব কিছুর পাশাপাশি লেখালেখিও করতেন। তাঁর লেখালাখির  শুরুটা হয় ছাত্রজীবন থেকে। কারাগারে বসে তিনি অনেক কবিতা, গান রচনা করেন। কর্মজীবনে শত ব্যস্ততার মাঝেও তাঁর লেখালেখি থামেনি। সময় সুযোগ পেলেই তিনি লিখতেন। তাঁর চিন্তা চেতনাকে প্রকাশ করতেন লেখনীর মাধ্যমে। এই লেখাগুলো পরবতীতে বই আকারে প্রকাশিত হয়। তাঁর বইয়ের সংখ্যাও কম নয়।

সাহসী ভাষা সৈনিক গাজীউল হক ২০০৯ সালের ১৭ জুন মৃত্যুবরণ করেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭