ইনসাইড পলিটিক্স

বিএনপি কেন দূরে থাকছে?


প্রকাশ: 13/02/2022


Thumbnail

নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, সেই প্রক্রিয়া থেকে বিএনপি নিজেকে গুটিয়ে রেখেছে। এ সমস্ত প্রক্রিয়ার মধ্যে বিএনপির আনুষ্ঠানিকভাবে নেই। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে প্রথমে রাষ্ট্রপতি সংলাপ আহ্বান করেছিলেন, সেই সংলাপে বিএনপি অংশগ্রহণ করেননি। এরপর আইন প্রণীত হয়। এই আইনকেও বিএনপি প্রত্যাখ্যান করেছে। যদিও এই আইনের ব্যাপারে বিএনপির সংসদ সদস্যরা জাতীয় সংসদে সংশোধনী প্রস্তাব দিয়েছেন এবং এই আইন পাস প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেছেন। কিন্তু সংসদের বাইরে বিএনপি নেতৃবৃন্দ এই আইনকে প্রত্যাখ্যান করেন। সর্বশেষ নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে অনুসন্ধান কমিটি গঠিত হয়েছে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে। কিন্তু এই অনুসন্ধান কমিটির প্রক্রিয়া থেকেও বিএনপি নিজেকে গুটিয়ে রেখেছে। অনুসন্ধান কমিটি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে নাম চেয়েছিল, কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো নাম পাঠানো হয়নি। তারা বলেছেন যে, এই প্রক্রিয়ায় তারা অংশগ্রহণ করবে না। সর্বশেষ আজ অনুসন্ধান কমিটি বিএনপিকে আগামীকাল বিকেল পাঁচটার মধ্যে নাম দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, তারা সার্চ কমিটির কাছে কোন নাম দেবে না। অর্থাৎ পুরো নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া থেকে বিএনপি নিজেদেরকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। কেন বিএনপির এই অবস্থান, এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানামুখী আলাপ-আলোচনা চলছে।

উল্লেখ্য যে, এর আগে দুটি নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়াতেই বিএনপি অংশগ্রহণ করেছিল। গতবার নির্বাচন কমিশন গঠনে বিএনপি নামও দিয়েছিলো এবং তাদের নামের তালিকা থেকে মাহবুব তালুকদার নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি যতটা নির্বাচন কমিশনার ছিলেন তার চেয়ে বিএনপির মুখপাত্র হিসেবেই নির্বাচন কমিশনে ভূমিকা রেখেছিলেন। কিন্তু বিএনপি এবার সেই সুযোগটাও হারাচ্ছে কেন, এই প্রশ্নের উত্তরে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বিভিন্ন রকম মতামত দিয়েছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে-

প্রথমত, তারা ধারণা করছে যে আগামী নির্বাচনকে বিতর্কিত এবং প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রথম ধাপ হলো নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখা। বিএনপি মনে করছে যে এই প্রক্রিয়ার মধ্যে যদি তারা থাকে তাহলে নির্বাচন কমিশন নিয়ে আন্দোলন করা বা নির্বাচন কমিশন নিয়ে জাতীয়-আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্ন তোলাটা কঠিন হয়ে পড়বে। এ কারণেই তারা এখন নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া থেকে তারা নিজেদেরকে দূরে সরিয়ে রেখেছে।

দ্বিতীয়ত, বিএনপি মনে করছে যে তারা যে দাবি অর্জন করতে চায় নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের, সেই দাবি অর্জন করার জন্য তাদেরকে নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া থেকে দূরে থাকতে হবে। বিএনপি প্রমাণ করতে চায় যে, নির্বাচন কমিশন গঠন কোনো বিষয় নয়, আসল বিষয় হলো নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার।

তৃতীয়ত, বিএনপি মনে করছে যে যদি নির্বাচন কমিশন না খারাপ হয় তাহলে বিএনপির জন্য এটি একটি প্লাস পয়েন্ট হবে এবং বিএনপি এটি নিয়ে সহজেই আন্দোলন-সংগ্রাম করতে পারবে।

চতুর্থত, বিএনপি ধারণা করছে যে, এবার নির্বাচনের আগে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়বে এবং একটি পরিস্থিতি তৈরি হবে যে পরিস্থিতির ফলে সরকার হয়তো শেষ পর্যন্ত বিএনপির অনেক দাবি মানতে বাধ্য হবে। তাই সেরকম একটি চাপ সৃষ্টির কৌশল হিসেবে বিএনপি এখন সবকিছু থেকে নিজেদেরকে গুটিয়ে রাখছে। তা ছাড়া বিএনপির নেতারা মনে করছেন যে, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যে ঘটনাপ্রবাহ গুলো ঘটছে সেই ঘটনা প্রবাহের ফলে দিনগুলোতে এই নির্বাচন কমিশন প্রশ্নবিদ্ধ হবে এবং বিএনপির অনেক নেতাই শেষ পর্যন্ত বিশ্বাস করেন যে আগামী নির্বাচনে হয়তো এই নির্বাচন কমিশন নাও থাকতে পারে। এরকম একটি চিন্তা থেকেই হয়তো বিএনপি নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছে।

বিএনপির নেতারা স্বীকার করছেন যে, আগামী নির্বাচনে বিএনপির জন্য ডু অর ডাই। কাজেই, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রক্রিয়ার কোন পর্যায় তারা যুক্ত হতে চান না। কারণ, তারা মনে করছেন এবার বাইরে থেকে কেউ এসে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করবে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭