ইনসাইড থট

সার্চ কমিটির কাছে প্রস্তাবিত নাম ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা


প্রকাশ: 15/02/2022


Thumbnail

নির্বাচন কমিশনের জন্য নতুন মুখের সন্ধানে নেমে পড়েছে সার্চ কমিটি। দশ কর্মদিবসের মধ্যে তাঁরা সেরা দশ নির্বাচন করবে। কমিটি আইনের বিধান মেনেই রাজনীতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠনগুলোর কাছ থেকে নাম আহ্বান করেছিল। নাম জমা পড়েছে ৩২৯ জনের। অনেকে বলছেন, এত নাম কেন? অমুকের নাম কেন, তমুকের নাম কেন? নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের কোন যোগ্যতা আছে কিনা, থাকলে সেগুলো প্রকাশ ও প্রচার করা হয়েছিল কিনা? এত দ্রুত সময়ে সেরা দশ যাচাই বাছাই করা সম্ভব কিনা? আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে পক্ষে বিপক্ষে। 

প্রশ্ন হলো, আসলেই কি বেশি নাম জমা পড়েছে? নির্বাচন কমিশনার হবার যোগ্য ব্যক্তির সংখ্যা হাজার হাজার হলেই বা ক্ষতি কি?  ১৭ কোটি লোকসংখ্যার দেশে যোগ্য ব্যক্তির কি অভাব রয়েছে? চাকুরীর ক্ষেত্রে যোগ্য প্রার্থীর অভাব কোন কালেই ছিল না। সর্বশেষ ৪৩ তম বিসিএস পরীক্ষার কথাই ধরা যাক। সেবার  ১৮১৪ পদের বিপরীতে আবেদনপত্র জমা পড়েছিল ৪ লাখ ৩৫ হাজার। একটি পদের বিপরীতে ২৪০ জন। প্রিলিমিনারি টেস্টের মাধ্যমে সরকারি কর্মকমিশন তিন ভাগ পরীক্ষার্থীর দুভাগকে ‘নাই’ করে দিলো। এ পর্যায়ে টিকে রইলো ১৫ হাজার, প্রতি পদের বিপরীতে সাড়ে ৮ জন। নির্বাচন কমিশনার পদের জন্য নামের প্রস্তাব পড়েছে ৩২৯ জনের। পদ ৫। কমিটি সুপারিশ করবে সেরা দশ জনকে। প্রতি ৩৩ জনের জন্য একজন। সার্চ কমিটি চাইলে একটা প্রিলিমিনারি টেস্ট নিয়ে তিন ভাগের এক ভাগকে ‘নাই’ করে দিতে পারে। তাতে তাদের কাজটা একটু সহজ হয়ে যাবে । সেক্ষেত্রে বিপত্তি হলো, অনেকেই জানেনই না যে, তাঁর নাম প্রস্তাবিত হয়েছে।তিনি হয়তো প্রিলিমিনারী টেস্ট দিতে রাজি হবেন না। সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে নাম প্রস্তাবের ফর্দের সাথে একটা সম্মতি পত্র গেঁথে দেয়ার কথা বলা যেতে পারে। 

এবার আসা যাক, যাদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে তাঁরা কি সবাই যোগ্য? সদ্য পাশকৃত আইনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনারের যোগ্যতার কথা বলা হয়েছে। তাঁকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। বয়স ন্যূনতম ৫০ বছর হতে হবে এবং কোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা-সরকারি বা বেসরকারি পদে তার অন্যূন ২০ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

অযোগ্যতা হিসেবে বলা হয়েছে- প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগদানের জন্য কোন ব্যক্তিকে সুপারিশ করা যাবে না, যদি তিনি কোন উপযুক্ত আদালত কর্তৃক অপ্রকৃতিস্থ ঘোষিত হন। তিনি দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার পর দায় হতে অব্যাহতি লাভ না করে  থাকেন। তিনি কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করেন বা কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করেন। এছাড়া তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন ২ বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে, International Crimes (Tribunals) Act, 1973 Act No. XIX of 1973) বা Bangladesh Collaborators (Special Tribunals) Order, 1972 (President's Order No. 8 of 1972) এর অধীন যে কোনো অপরাধের জন্য দণ্ডিত হলে বা প্রজাতন্ত্রের কর্মে কোনো লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকলেও পদের যোগ্য হবেন না।

যোগ্যতা অযোগ্যতার মাপকাঠি যদি এগুলোই হয়, তাহলে মোটা দাগে প্রস্তাবিত নামগুলোর অনেকেই অযোগ্য নয়, যদিও সবার যোগ্যতা অযোগ্যতা বিষয়ে পুরাপুরি নিশ্চিত নই। তবে যে সব নাম নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথাবার্তা হচ্ছে সেগুলো আইনের মাপকাঠির নিরিখে অযোগ্য নয়। শিক্ষাগত যোগ্যতা বা সততার কথা আইনে বলা নেই। অনেকেই বলছেন, যেদেশে প্রধান মন্ত্রী হতে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা লাগে না, জন্মসনদ দেয়া লাগে না বা সঠিক জন্মতারিখ উল্লেখ করা লাগে না, সেদেশের নির্বাচন কমিশনার হতে আবার এসবের প্রয়োজন কেন?


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭