ইনসাইড টক

‘নামের তালিকা প্রকাশ বক্স অব প্যান্ডোরা খুলে দেওয়ার সামিল’


প্রকাশ: 15/02/2022


Thumbnail

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ বলেছেন, গত ৩ দশক ধরে দেশে-বিদেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের কাজ করি। এটা আমার আগ্রহের জায়গা। একজন নাগরিকের তাগিদ থেকেই আমি এই কাজটা করে থাকি। ফলে আমার বিভিন্ন দেশের নির্বাচন কমিশনের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা হয়েছে, এই বিষয়ে আমি গ্রন্থও রচনা করেছি। ১৯৯৫ সাল থেকে টানা দেশের সকল নির্বাচন মাঠ পর্যায়ে পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার। আমি মনে করে এমন ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন হওয়া উচিৎ যাদের এই বিষয়ে অভিজ্ঞতা আছে এবং যারা পরিপূর্ণ নিরপেক্ষতা বজায় রেখে কাজ করবেন। বস্তুনিষ্ঠতার সঙ্গে তাদের কাজগুলো প্রতিফলিত হবে, তাদের বক্তব্যগুলো তারা সেভাবে হাজির করবেন। আর মাঠে যেতে হবে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে ফাইল ওয়ার্ক করে দায়িত্ব সম্পাদন করলেই চলবে না।

সার্চ কমিটির প্রস্তাবিত নাম, বিদায়ী নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন এবং এর গ্রহণযোগ্যতাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ। পাঠকদের জন্য প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর নিজস্ব প্রতিবেদক মাহমুদুল হাসান তুহিন।

প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ বলেন, আমি চাইবো বাংলাদেশে এমন কমিশনার দায়িত্ব পালন করবেন যাদের খ্যাতি রয়েছে বিশ্বজুড়ে। প্রফেসর জগা, লিজেন্ডারি চিফ ইলেকশন কমিশনার অব নাইজেরিয়া, আমাদের পাশের দেশ ভারতের টিএন সেশন বা ড. গিল, এই ধরণের ব্যক্তিবর্গ যাতে স্থান পান। যে কথাটি প্রায়ই বলা হয়, মেরুদণ্ডহীন ব্যক্তিবর্গ। এই কথা সাথে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বললো যে না আমি দাঁড়াতে পারি, আমি সেটা বুঝাই নি। আমি মনে করি, লিটারারি যেটাকে মেরুদণ্ড বলা হয় সেই বিষয়টার বহিঃপ্রকাশ যেন থাকে। আর কোন অবস্থায় দিনকে রাত আর রাতকে দিন বানানো, শাক দিয়ে মাছ ধরার চেষ্টা করার ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন, এই ধরণের ব্যক্তিবর্গ দিয়ে কমিশন যদি গঠন করা হয় তাহলে আমাদের অতীত ইতিহাসে আছে আমাদের জাকারিয়া সাহেবদের মতো লোক খুব কম সময়ের জন্য কমিশনে একটা স্থান পেয়েছিল। তখন হয়তো দেখা যাবে নির্বাচনের আগে আবার বঙ্গভবনে চায়ের নিমন্ত্রণ করা হচ্ছে এবং তাদেরকে বড়িতে পাঠিয়ে দিতে হচ্ছে। নতুন করে কমিশন গঠন করতে হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় কোষাগারের ট্যাক্স পেয়ারের টাকা খরচ করে এই ধরণের কাজ করাটা ঠিক হবে না। অনৈতিক কাজ হবে।

সিইসি নুরুল হুদা এবং ইসি মাহবুব তালুকদারের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি নতুন কিছু না। শেষ দিনে এমন চেহারা দেখেছি, তা কিন্তু নয়। প্রথম থেকেই মাহবুব তালুকদার মহোদয় এবং নুরুল হুদা মহোদয় একে অপরের সঙ্গে বাকযুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন। এটি শুধুমাত্র কমিশনের বৈঠকেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তাদের এই বাকবিতণ্ডা অনেকবারই প্রকাশ্যে এসেছে। এর সূত্র কিন্তু সার্চ কমিটিতে নিহিত। সার্চ কমিটির যারা সদস্য ছিলেন তাদের এই জিনিসটি খেয়াল করার দরকার ছিল। তারা এমন দুইজন ব্যক্তিকে নিয়োগ করার জন্য সুপারিশ করেছেন, যাদের আগে থেকেই চাকরি সূত্রে একে অপরকে চিনতেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত নুরুল হুদা সাহেব চাকরি জীবনে ছিলেন যুগ্ম সচিব। আর মাহবুব তালুকদার ছিলেন অতিরিক্ত সচিব। এখন আমাদের আমলাতন্ত্রের নিয়মে অতিরিক্ত সচিব যুগ্ম সচিবের থেকে পদে বড়। মাহবুব তালুকদারের অধীনে নুরুল হুদা চাকরি করেছেন। এই জিনিসটি খেয়াল না করাতে এই সমস্যাটি তৈরি হয়েছে। এটি একটি ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব। তাই পত্রপল্লবে বিকশিত হয়েছে নানান রকমের ডাইমেনশন এখানে যুক্ত হয়েছে। 

সুশীল সমাজের দাবির প্রেক্ষিতে প্রস্তাবিত নামের তালিকা প্রকাশ করার বিষয়ে প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ বলেন, তিন শতাধিকের চেয়েও বেশি জনের নামের তালিকা আমরা দেখেছি। এটা বক্স অব প্যান্ডোরা খুলে দেওয়ার সামিল এবং তাতে চিত্র অভিনেতা থেকে শুরু করে ফ্যাশন ডিজাইনার পর্যন্ত স্থান পেয়েছে। এখন যার যেই কাজ না, তাকে এনে যদি বক্সে টিক চিহ্ন দেওয়ার মতো করে পাঁচটি শূন্য স্থান পূরণ করে দিলাম, তাহলে তো কিছুই হবে না। এখন সার্চ কমিটি এটাই বলতে পারবে যে, আমরা খোলামেলা খোলাখুলিভাবে কাজ করেছি। সবার জন্য নামের তালিকা উন্মুক্ত করে দিয়েছি। নাগরিক হিসেবে আগে যেই অবস্থাটি ছিল, নির্বাচন কমিশনারদের যোগ্যতা কি হবে, সেটি কিন্তু বলা ছিল না। কিন্তু এইবার বলে দেওয়া হয়েছে। ফলে যেকোনো রাম-সাম, যদু-মধুকে দিয়ে কমিশন গঠন করা যাবে না। কিন্তু সেই সমস্যাটি রয়ে গেছে। যাদের নির্বাচন নিয়ে পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই, যারা সঠিক অবস্থান নিতে জানে না, তাদেরকে নিয়োগ দেওয়া যাবে না। এই বিষয়টি খেয়াল করা দরকার।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭