আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ক্রমশ চাপের মুখে পড়ছে বাংলাদেশ। একদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা, অন্যদিকে অন্যান্য দেশগুলোর নানা রকম শর্ত, ভারতের এক ধরনের নীরবতা, সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি যে সঠিক পথে নেই তা বলাই বাহুল্য আর এ কারণেই বাংলাদেশ নানারকম আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে পড়ছে বলে কূটনৈতিক মহল মনে করছে। গত ১৩ বছরে এই প্রথম বাংলাদেশ ভিন্ন বিষয়ে আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে এবং এই চ্যালেঞ্জগুলো যদি এখনই মীমাংসা না করা যায় তাহলে সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশের জন্য আরও বড় সংকট দেখা দিতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। বাংলাদেশের কূটনীতি এখন যে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে তার মধ্যে:
১. মার্কিন চাপ: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেই স্বীকার করেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বিভিন্ন রকম চাপ দিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৭ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে প্রশ্ন উঠেছে যে, এই নিষেধাজ্ঞা যখন আরোপ করা হলো তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস কি করলো? এই প্রশ্ন সাধারণ মানুষেরও। এই প্রশ্নের কোন উত্তর নেই। দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের দূতাবাস গুলোর নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। তার ফলাফল এখন বাংলাদেশ ভোগ করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সংশোধিত লেহি আইনে চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের চুক্তি স্বাক্ষর করেনি। এই চুক্তি স্বাক্ষর না করলে সামনের দিনগুলোতে দু'দেশের সম্পর্কের টানাপোড়ন আরো বাড়তে পারে বলে বিভিন্ন মহল মনে করছে।
২. চীনের সঙ্গে সম্পর্ক: চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়েও এখন আর পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের এক ধরনের অস্বস্তি তৈরি হচ্ছে বলে বিভিন্ন মহল মনে করছে। বিশেষ করে যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপানসহ বিভিন্ন দেশ এখন চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়ে এক ধরনের অস্বস্তি প্রকাশ করছে। এর ফলে সামনের দিনগুলোতে এই দেশগুলো বাংলাদেশের ওপর আরো চাপ সৃষ্টি করতে পারে বলে একাধিক মহল মনে করছে।
৩. ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের শীতলতা: গত এক দশক ধরে বাংলাদেশের প্রধান মিত্র রাষ্ট্র ছিল ভারত। কিন্তু ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়ে নানা রকম কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে। যদিও দুই দেশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে বলা হয় যে, দু'দেশের সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো। কিন্তু এই সম্পর্কের টানাপোড়েন যে আছে, তা দুই দেশেরই বিভিন্ন নেতাদের কথাবার্তাতেই সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায়। আর এই সম্পর্ক যদি ঠিক না করা হয় তাহলে সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশের বন্ধুহীন হয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।
৪. রোহিঙ্গা ইস্যু: রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ এক ধরনের নিষ্ক্রিয়তা অবলম্বন করছে। ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ শরণার্থী হিসবে রেখেছে। এতে বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর চাপ তৈরি হয়েছে এবং রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে না।
৫. জাতিসংঘে বাংলাদেশের অবস্থান: জাতিসংঘে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়েও এখন নানা রকম প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে ১২টি মানবাধিকার সংগঠন জাতিসংঘের কাছে জাতিসংঘের শান্তি মিশনে র্যাবকে নিষিদ্ধ করার যে দাবি করেছে এই দাবি করার পর বাংলাদেশ কী করলো, সেটি নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
সবকিছু মিলেই বাংলাদেশের কূটনীতি কোন পথে পরিচালিত হচ্ছে তা নিয়ে একধরনের বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের কূটনীতির যে আদি বাণী, ‘সকলের সঙ্গে মিত্রতা কারো সাথে বৈরিতা নয়’ সেটি এখন সংকটের মুখে পড়েছে বলেই অনেকে মনে করছেন।