ইনসাইড থট

দুধ উৎপাদনে ভারতের উত্থান এবং বাংলাদেশের অভিযাত্রা (প্রথম পর্ব)


প্রকাশ: 18/02/2022


Thumbnail

ক) পার্শ্ববর্তী দেশের উদাহরণঃ

১। ডক্টর ভার্গিস কুরিয়েন

ডক্টর ভার্গিস কুরিয়েন কেরালার ক্যালিকট, বর্তমানে কোজিকোড-এর একটি সমৃদ্ধ সিরিয়ান খ্রিস্টান পরিবারে ১৯২২ সালের ২রা নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার বাবা পুতেনপাড়কল কুরিয়েন ছিলেন ব্রিটিশ কোচিনের সিভিল সার্জন এবং তার মা একজন উচচ শিক্ষিত মহিলা ছিলেন। জনাব কুরিয়েন মাদ্রাজের লয়োলা কলেজ থেকে পদার্থবিদ্যায় বিএসসি ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি সরকারি বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এবং সেখানে তিনি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে ডিস্টিংশনসহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। পড়াশোনা শেষে তিনি ভারতে ফিরে আসেন এবং ১৯৪৯ সালের ১৩ই মে তিনি গুজরাটের কয়রা জেলার আনন্দ অঞ্চলে চলে যান। তিনি সেখানে দেখতে পেলেন যে, ‘পেস্টনজি এডুলজি’ নামে পরিচিত চতুর ব্যবসায়ীদের দ্বারা দুধ উৎপাদনকারী কৃষকরা শোষিত হচ্ছে। এই ‘পেস্টনজি এডুলজি’ নামক প্রতিষ্ঠানটি পোলসন মাখন বাজারজাত করছিলেন সে সময়। কৃষকদের বেঁচে থাকার লড়াইয়ের দিকে তাকিয়ে তাদের নেতা ত্রিভূবনদাস প্যাটেল সেসময় কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ করে শোষনের বিরূদ্ধে একটি আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করছিলেন। এই ত্রিভূবনদাস প্যাটেলের ব্যক্তিত্ব দ্বারা ড. কুরিয়েন বিমোহিত হলেন এবং সরকারি চাকুরী ছেড়ে প্যাটেলের সাথে যোগ দিলেন। তারা যৌথভাবে কয়রা জেলা সমবায় দুগ্ধ উৎপাদনকারী ইউনিয়ন লিমিটেড (কেডিসিএমপিইউএল) নামে সমবায় নিবন্ধন নিয়ে ডেইরী খামারীদের ভাগ্যোন্নয়নে আন্দোলন শুরু করলেন, যা পরবর্তীকালে বর্তমানে জনপ্রিয় ‘আমূল’ নামে পরিচিতি পায়।  
 
ড. কুরিয়েন ১৯৫৩ সালে ১৫ই জুন সুসান মলি পিটারকে বিয়ে করেছিলেন। ড. কুরিয়েন এমন একজন মানুষ যিনি দুধের ঘাটতি দেশ ভারতকে বিশ্বে বৃহত্তম দুধ উৎপাদনকারী দেশে পরিণত করেছিলেন। তার অনুপ্রেরণামূলক নেতৃত্বে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান যেমনঃ গুজরাট সমবায় মিল্ক বিপণন ফেডারেশন লিমিটেড (জিসিএমএমএফ) এবং জাতীয় দুগ্ধ উন্নয়ন বোর্ড (এনডিডিবি) গড়ে উঠেছিল, যা সারা ভারতে দুগ্ধ সমবায় আন্দোলন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলছে। 

ড. কুরিয়েন সর্বদা নিজেকে কৃষকদের কর্মী হিসেবে বিবেচনা করতেন এবং ৫০ বছরেরও বেশী সময় ধরে তার কর্মের জন্য তিনি ১৫টি সম্মানসূচক ডিগ্রী অর্জন করেছিলেন। তার ব্যক্তিত্ব, চেতনা, অবিচ্ছিন্ন ক্যারিশমা এবং অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলার বিশ্বাস তাকে বহু নেতৃত্বের সম্মান দিয়েছিল। তিনি কমিউনিটি নেতৃত্বের জন্য রামন ম্যাগসেসে পুরস্কার -১৯৬৩, পদ্মশ্রী-১৯৬৫, পদ্মভূষণ-১৯৬৬, কৃষকরত্ন পুরস্কার-১৯৮৬, বিশ্ব খাদ্য পুরস্কার-১৯৮৯, পদ্ম বিভূষণ-১৯৯৯, কর্পোরেট এক্সিলেন্সের জন্য ইকোনমিক টাইম পুরস্কার-২০০১, ইত্যাদি অর্জন করেছিলেন। তবে দেশের মানুষ তাকে সেরা পুরস্কার দিয়েছিল ‘ভারতের মিল্কম্যান’ খেতাব দিয়ে। ২০১২ সালে সেপ্টেম্বর মাসে এই মহান শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। ড. কুরিয়েন সেই ব্যক্তি হিসেবে স্মরণে থাকবেন যিনি দুধের অর্থকে দেশের অর্থনৈতিক বিকাশে শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে পূণঃসংজ্ঞায়িত করেছিলেন।

২। আমূলের সূচনাঃ 

ভারতের আহমেদাবাদ থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে আনন্দ নামে একটি ছোট্ট শহর রয়েছে। আমূল ভারতের একটি বিখ্যাত ডেইরী ব্রান্ড। গুজরাটের পোলসন ডেইরী যা ১৯৩০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, এই প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের কাছে মানসম্মত দুগ্ধজাত পণ্য সরবরাহ করেছিল সে সময়। যেসব খামারী পোলসন ডেইরীর নিকট দুধ বিক্রি করত, তাদের অন্য কারও নিকট দুধ বিক্রির অনুমতি ছিল না। এভাবে দুগ্ধ খামারীগণ শোষিত হচ্ছিলেন। ভারতের জাতীয় নেতা সরদার ত্রিভূবন প্যাটেল শোষিত খামারীদের পাশে দাড়িয়েছিলেন এবং পাশে পেয়েছিলেন ড. কুরিয়ানকে। প্রাথমিকভাবে দুধ ও অন্যান্য দুগ্ধজাত পণ্য বিন্যাস ছাড়াই সমবায় নেটওয়ার্ক তৈরী করেছিলেন এবং প্রাথমিকভাবে প্রতিষ্ঠিত সমবায় মাত্র ২৪৭ লিটার দুধ দিয়ে সমিতির যাত্রা শুরু করেছিল।  

৩। ড. ভার্গিস কুরিয়েন ও আমূলঃ

ড. কুরিয়েন মি: প্যাটেলকে সাথে নিয়ে যে সমবায় আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন সেখানে সমবায়ীদের ভূমিকা ছিল খামারীদের কাছে থেকে দুধ সংগ্রহ করা এবং দুধের গুণমান অনুযায়ী তাদের যথাযথ মূল্য প্রদান করা। ড. কুরিয়েন কয়রা জেলা সমবায় দুগ্ধ উৎপাদনকারী ইউনিয়ন লিমিটেডকে একটি অনন্য নাম দিতে চেয়েছিলেন যা সহজেই উচচারণ করা যায় এবং এটি ইউনিয়েন বৃদ্ধিতেও সহায়তা করতে পারে। বিভিন্ন কর্মচারী ও খামারীদের নিকট থেকে পরামর্শ চাওয়া হয়েছিল। জনৈক কোয়ালিটি কন্ট্রোল তত্ত্বাবধায়ক ‘আমূল’ নামটি সুপারিশ করেছিলেন, যা সংস্কৃত শব্দ এবং এর অর্থ অমূল্য এবং এটি অপরিবর্তনীয় শ্রেষ্ঠত্বকে বুঝায়। পাশাপাশি আনন্দ মিল্ক ইউনিয়ন লিমিটেড সংক্ষেপে আমূল হিসেবে মেনে নেয়া হয়।

আগামীকাল দ্বিতীয় পর্ব প্রকাশিত হবে...


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭