ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

মুসলিম উম্মাহর ঐক্য কোথায়?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 12/12/2017


Thumbnail

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী স্বীকৃতি দেয়ার পরই প্রতিবাদে উত্তাল হয়েছে ফিলিস্তিন। আরব এবং মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোর নেতারা মার্কিন এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন কঠোর ভাষায়। তবে মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোর বক্তব্য বা সমালোচনা খুব বেশি ফলদায়ক হবে না বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকেরা।

সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরার জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক মারওয়ান বিশরা বলেন, আরব দেশগুলোর বক্তব্য বুলি সর্বস্ব। তাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার সম্ভাবনা খুবই সীমিত।

শেষ পর্যন্ত ফিলিস্তিনিদের অধিকারের আন্দোলন আরবের রাজপথেই চলবে। আরব দেশগুলোর কোনো ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার তেমন সম্ভাবনা নেই। আরব দেশগুলোর অবস্থান শেষ পর্যন্ত সম্মেলন এবং বক্তব্য-বিবৃতিতে সীমাবদ্ধ হয়ে থাকবে এমন আশঙ্কা করছেন ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আন্দোলনের কর্মীরা।

ফিলিস্তিন অধিকার আন্দোলনের একজন কর্মীর মতে আরব দেশগুলো এমন বক্তব্য বিবৃতি শুধু জনতুষ্টির উদ্দেশ্যেই দেওয়া হচ্ছে, কেননা জেরুজালেম প্রশ্নে আরব এবং মুসলিম বিশ্বের সাধারণ মানুষ আজ ক্ষুদ্ধ। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে- সৌদি আরব, বাহরাইন, জর্ডান এবং মিশরের মত দেশগুলো ইসরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ। ফলে বিবৃতি দেওয়া ছাড়া তারা আর কিছুই করবে না।

মুসলিম বিশ্ব তথা ‘মুসলিম উম্মাহর’ মধ্যেই এই যে স্ববিরোধিতা এবং অনৈক্য- এর মূল কারণ কি? মুসলিম বিশ্বের এমন অনৈক্য ‘একক এবং ঐক্যবদ্ধ মুসলিম উম্মাহ’র ধারণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক স্বার্থ আর ক্ষমতার দ্বন্দ্ব খুব নতুন কিছু নয়। আরব সাম্রাজ্য বিস্তারের সময় থেকেই এই দ্বন্দ্ব চলে আসছে। তৃতীয় খলিফা উসমানের হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে দিয়ে যেঅভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংঘাতের সূত্রপাত তা আজও চলছে।

সম্ভবত মুসলিম বিশেষত আরব দেশগুলোর মধ্যে ‘একক’ ঐক্য বা আনুগত্য কখনোই ছিলো না। আরব দেশগুলোর বিভিন্ন জাতি, গোত্র বা গোষ্ঠী, পারিবারিক আনুগত্যকে ছাপিয়ে ইসলাম ধর্মের বিশ্বাস ও শিক্ষার ওপর ভিত্তি করে একতাবদ্ধ চেতনা, ঐক্য গড়ে উঠতে পারেনি। আরবরা আজও কয়েকশত বছর আগের মতই নিজেদের গোত্র ও স্বার্থগত দ্বন্দ্বে ব্যস্ত রয়েছে। এ কথা তাই সত্য যে মুসলিম বিশ্ব কখনোই একটি একক ফ্রন্ট গঠন করতে পারেনি।

মুসলিম শাসকরা বহু আগে থেকেই পশ্চিমা শক্তিগুলোর সাথে মিলিত কাজ করে আসছেন। আজকের আরবের যত স্বাধীন দেশ যেমন সৌদি আরব, জর্ডান, মিশর, ইত্যাদি ব্রিটিশ উপনিবেশকদের সহায়তায় অটোমান সাম্রাজ্য থেকে স্বাধীনতা লাভ করেছিলো। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়েও সামরিক, অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তা প্রশ্নে তারা পশ্চিমাদের ওপর নির্ভরশীল। ফলে ফিলিস্তিন প্রশ্নে পশ্চিমা শক্তি এবং তাদের সৃষ্ট ইসরায়েলের স্বার্থবিরোধী কোন পদক্ষেপ তারা গ্রহণ করবেন না, সেটাই স্বাভাবিক।

শিয়া ইরানের সঙ্গে সুন্নি (এবং ওয়াহাবি) সৌদি আরবের যে আঞ্চলিক ক্ষমতার দ্বন্দ্ব তার পেছনেও এমন ভূ-রাজনীতি কাজ করছে। আর এই দুই দেশের এই ধর্মীয় মতাদর্শগত দ্বন্দ্ব এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, তা পুরো মুসলিম বিশ্বকেই প্রভাবিত করেছে। লিবিয়া, ইয়েমেন ও সিরিয়ায় যে রক্তক্ষয়ী সংঘাত চলছে তার পেছনের অন্যতম কারণ দেশ দুটির ক্ষমতার দ্বন্দ্ব।

আর ফিলিস্তিন সংকটেও এই বিভেদ ও দ্বন্দ্বের ছায়া পড়েছে। যেখানে আদর্শের প্রতি আনুগত্যের পরিবর্তে ঘৃণার মাধ্যমে মানুষকে এক করা সহজ, সেখানে মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের কথা কেবল নিজ স্বার্থ উদ্ধারের অস্ত্র হিসেবেই ব্যবহার হবে, সেটাই স্বাভাবিক।

কাজেই বিবদমান এবং আপাত মিত্রতায় আবদ্ধ এই দেশগুলো যতদিন এই ধারা থেকে বেরিয়ে না আসছে, মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ততদিন অধরাই থেকে যাবে। মুসলিম দেশগুলোকে বুঝতে হবে তাদের নিজেদের স্বার্থেই ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংকট শান্তিপূর্ন সমাধান এবং সংঘাত বন্ধ করে শান্তি ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন। ফিলিস্তিনের ন্যায্য অধিকারকে প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই কেবল মধ্যপ্রাচ্যে প্রকৃত শান্তির সূচনা হতে পারে। কিন্তু এই ঐক্যমত প্রতিষ্ঠা করার কাজটিই এই মুর্হূতে সবচেয়ে দুঃসাধ্য।

 

আল জাজিরা ও নিউইয়র্ক টাইমস অবলম্বনে

বাংলা ইনসাইডার/কেএইচ/টিবি



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭