মাঠের রাজনীতির প্রধান বিরোধীদল হিসেবে খ্যাত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। তবে কোনো দিক থেকেই সুখকর পরিস্থির মধ্যে নেই দলটি। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম জিয়া দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত এবং তিনি সরকারের অনুকম্পায় কারাগারের বাহিরে আছেন। এছাড়াও তিনি নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা নিয়ে দীর্ঘদিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে মাত্র কিছুদিন হলো তার বাসভবনে ফিরেছেন। বেগম খালেদা জিয়া নিজেই শারীরিকভাবে অসুস্থ এবং তিনি দলের কর্মকাণ্ডে থাকছেন না, দল পরিচালনায় তার কোনো ভূমিকাও নেই। অন্যদিকে দলটির সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক জিয়া লন্ডনে পলাতক অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন। তিনি সেখান থেকে দল চালানো ব্যাপারে নির্দেশনা দিলেও দেশে আসতে পারছেন না। এমনকি দলের অনেক সিনিয়র নেতার সঙ্গেও তার সম্পর্ক ভালো নয়। এই পরিস্থিতিতে যখন বিএনপি'র অবস্থা সংকটাপন্ন, সেই সময়ই নতুন কৌশল গ্রহণ করেছে দলটি।
একদিকে বিএনপি বলছে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তারা নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের কোন প্রক্রিয়ার মধ্যে নিজেদেরকে যুক্ত করেনি। কিন্তু বিএনপি'র ভেতরের খবর সম্পূর্ণ ভিন্ন। নতুন একটি কৌশল নিয়ে এগিয়ে চলেছে তারা। সব জায়গায় বিএনপি বলে বেড়াচ্ছে তারা নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়ার মধ্যে নেই এবং তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা আগামী নির্বাচনে যাবে না। কিন্তু ভেতরে ভেতরে তারা ঠিকই দল গোছাতে শুরু করেছে। তৃণমূল শক্তিশালী করার দিকে নজর দিয়েছে দলটি। তাদের এরই মধ্যে অর্ধশতাধিক উপজেলায় সম্মেলন হয়েছে। করোনা বিধিনিষেধ প্রত্যাহার হলে মার্চে জেলা সম্মেলন শুরু করবে দলটি। বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ৮১টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৪৪টিতে পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছে।
দল গোছানোর বিষয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, আন্দোলন কিংবা নির্বাচন যে পথ ধরেই তারা চলতে চান, সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। তাই তৃণমূল শক্তিশালী করার দিকে নজর দিয়েছেন তারা। ইউনিয়ন-ওয়ার্ড থেকে জেলা পর্যন্ত সম্মেলন শেষ হলে জাতীয় কাউন্সিল করা যায় কি না তা-ও ভাবনায় আছে। বিএনপির নীতিনির্ধারকদের ধারণা, চলতি মাসের মধ্যে করোনা বিধি-নিষেধ উঠে যাবে। তখন সাংগঠনিক কার্যক্রম গতি পাবে। গত শুক্র ও শনিবার ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি তাদের অধীন ৭১ সাংগঠনিক ওয়ার্ডের আহ্বায়ক ঘোষণা করেছে। কয়েক দিনের মধ্যে তারা ওয়ার্ড কমিটি ঘোষণা করবেন। গত ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ কমিটি করা হয়েছে। এর এক দিন আগে স্বেচ্ছাসেবক দল ঢাকা মহানগরের দুই অংশের কমিটি হয়েছে। বরিশাল জেলা পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও ৩০ মার্চ ঢাকা জেলা এবং ৫ মার্চ গাজীপুর জেলা ও মহানগরের নেতাদের সম্মলনের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যে আরো কয়েকটি জেলার সম্মেলন তারিখ নির্ধারণ হবে। এছাড়াও মার্চ ও এপ্রিলের মধ্যে সম্মেলন হওয়ার মতো প্রস্তুতি আছে বগুড়া, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, জয়পুরহাট, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম দক্ষিণ, খাগড়াছড়ি, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, শেরপুর, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার।
বিএনপি মনে করছে যে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় করার জন্য আন্দোলনের বিকল্প নেই। আর সেই আন্দোলন তারা তৃণমূল থেকেই শুরু করতে চায়। তাই তারা তৃণমূলকে শক্তিশালী করার দিকেই বেশি মনোযোগী। নির্বাচনী প্রচারণায় ঢাঁকঢোল না পিটিয়ে, নির্বাচনী মাঠে কোনো জৌলুসতা বা পোস্টার-লিফলেট কেন্দ্রীক প্রচারণা থেকে বিরত থেকে গোপনে তারা এই কাজগুলো করছে। আর যুক্তরাজ্য থেকে দলের সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন যা মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নের কাজ চলছে। এই নতুন কৌশলে তারা আওয়ামী লীগকে ঘায়েলে মাঠে নেমেছে। এখন দেখা যাক তারা এই নতুন কৌশলে সফল হতে পারে কিনা।