ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

ন্যাটো: একটি পশ্চিমা সামরিক জোট


প্রকাশ: 19/02/2022


Thumbnail

দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ কেবল শেষ হয়েছে। ইউরোপের দখল চলে গেছে সেই সময়ের দুই পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের হাতে। সাম্যবাদের নামে বামপন্থী সোভিয়েতের বাড়-বাড়ন্ত আগ্রাসনে ইউরোপের দেশগুলো যখন জুজুর ভয়ে ক্লান্ত, ঠিক তখন ত্রাতার মত ইউরোপের কাঁধে ভরসার হাত রাখে যুক্তরাষ্ট্র। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অর্থনৈতিকভাবে যখন ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত ইউরোপ, তখন লাল ফৌজ সোভিয়েতকে রুখে দেওয়ার কোন সামর্থ্য ছিলো না তাদের। আর তাই যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে উত্তর আমেরিকার দুটি দেশ ও ইউরোপের ১০টি দেশ মিলে একে অপরকে রাজনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে রক্ষার অঙ্গীকার নিয়ে ৪ এপ্রিল, ১৯৪৯ তারিখে ওয়াশিংটন ডিসির বিভাগীয় অডিটোরিয়ামে গঠিত হয় বিশ্বের প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক বৈশ্বিক সামরিক জোট ন্যাটো (The North Atlantic Treaty Organization) বা ‘উত্তর আটলান্টিক নিরাপত্তা জোট’।

ন্যাটো গঠনের মূল উদ্দেশ্য ছিলো সোভিয়েত ইউনিয়নের হাত থেকে ইউরোপের দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে রক্ষা করা। সংগঠনটির মূল নীতির ভেতরে রয়েছে সদস্য কোন দেশ যদি সামরিক দিক থেকে বহিঃশক্তি দ্বারা আক্রান্ত হয় তবে সংগঠনটির সকল দেশ এটিকে নিজ দেশের উপর হামলা হিসেবে বিবেচনা করবে এবং এক সাথে আক্রান্ত দেশকে রক্ষা এগিয়ে আসবে। 

ন্যাটো ৪ টি প্রধান ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে,

১. রাজনৈতিক ও সামরিক সহযোগিতা
২. সমন্বিত প্রতিরক্ষা
৩. দ্য ট্রান্সআটলান্টিক লিংক
৪. কৌশলগত ধারণা

NATO (The North Atlantic Treaty Organisation) জন্মলগ্নে ১২টি দেশ নিয়ে গঠিত হয়েছিলো। ন্যাটোর প্রতিষ্ঠাকালীন দেশগুলো হল- যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি, কানাডা, নরওয়ে, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস, পর্তুগাল, আইসল্যান্ড এবং লুক্সেমবার্গ। প্রাথমিকভাবে ন্যাটোর সদরদফতর স্থাপন করা হয় যুক্তরাজ্যর রাজধানী লন্ডনে। এরপর ১৯৫২ সালে এটি সরিয়ে নেওয়া হয় প্যারিসে। ১৯৬৭ সালে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে এটির স্থায়ী সদর দফতরে প্রধান কার্যালয় সরিয়ে নেওয়া হয়। প্রাথমিকভাবে ২০ বছরের চুক্তিতে সংগঠনটি গঠিত হলেও ১৯৫২ সালে তুরস্ক এবং গ্রিস যোগ দিতে চাইলে, দেশ দুটিকে সদস্য করার মাধ্যমে জোটটি আরও প্রসার লাভ করে। এরপর ১৯৫৫ সালে যুক্ত হয় পশ্চিম জার্মানি যা বর্তমানে জার্মানি নামে পরিচিত। 

পশ্চিম জার্মানি ন্যাটোতে যোগদান করার পর একটা দীর্ঘ সময় জোটটিতে আর কোন সদস্য নতুন করে যোগদান করেনি। কোল্ড ওয়ার চলাকালীন নতুন কোন সদস্য ন্যাটোতে যোগদানের ব্যাপারে বেশ শঙ্কার ভিতর থাকতো। একদিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের ন্যাটোতে যোগ না দেওয়া চাপ যেমন ছিলো তেমনি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক লোভনীয় প্রস্তাবগুলো থেকে নিজেদের গুটিয়ে রাখাও ছিলো বেশ কষ্টকর। এরপরেও দীর্ঘ ২৭ বছর পর ১৯৮২ সালে ন্যাটোতে নতুন করে যুক্ত হয় স্পেন। আবার একটা দীর্ঘ বিরতি পায় সামরিক এই জোটটি। 

১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাবার পর ১৭ বছরের বিরতিতে ১৯৯৯ সালে সাবেক সোভিয়েতভুক্ত পূর্বাঞ্চলীয় রাষ্ট্রগুলো ন্যাটোতে যোগদান করে। ১৯৯৯ সালে তিনটি দেশ- চেক রিপাবলিক, হাংগেরি এবং পোল্যান্ড যোগ দেয়। ন্যাটো প্রতিষ্ঠার পর ২০০৪ সালে সবচেয়ে বেশি সদস্য গ্রহণ করে। 

২০০৪ সালে ৭ টি দেশকে ন্যাটোর সদস্যপদ দেওয়া হয়। ২০০৪ সালে যে সকল দেশ ন্যাটোর সদস্য হয় সে দেশগুলো হলো- বুলগেরিয়া, এস্তোনিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, রোমানিয়া, স্লোভাকিয়া এবং স্লোভেনিয়া। 

২০০৯ সালে আলবানিয়া ও ক্রোয়েশিয়া ন্যাটোর সদস্যপদ লাভ করে এবং ২০১৭ সালে সদস্যপদ পায় মন্টিনেগ্রো। ২০২০ সর্বশেষ নতুন সদস্য হিসেবে ন্যাটোতে যোগদান করে উত্তর মেসিডোনিয়া।

বর্তমানে ন্যাটো জোটভুক্ত মোট দেশ ৩০ টি দেশ রয়েছে।

ন্যাটোর ৩০ সদস্য দেশ হল— আলবেনিয়া, বেলজিয়াম, বুলগেরিয়া, কানাডা, ক্রোয়েশিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, ডেনমার্ক, এস্তোনিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস, হাঙ্গেরি, আইসল্যান্ড, ইতালি, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, লুক্সেমবার্গ, মন্টিনেগ্রো, নেদারল্যান্ডস, উত্তর মেসিডোনিয়া, নরওয়ে, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, রোমানিয়া, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া, স্পেন, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭