ইনসাইড পলিটিক্স

ভঙ্গুর বিএনপি'র বহিষ্কার রাজনীতি


প্রকাশ: 20/02/2022


Thumbnail

নানা সংকটে বিপর্যস্ত বাংলাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একের পর এক ভুলে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা অনেকটাই দিশাহারা। একের পর এক ভুল রাজনীতির জন্য আস্তে আস্তে বিএনপি নিঃশেষিত হয়ে যাচ্ছে। দ্বন্দ্ব-কোন্দলে ক্ষত-বিক্ষত সংগঠনটি। এসব কারণে একটি বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি তার গুরুত্ব হারাচ্ছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়েও বিএনপি যেসমস্ত সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছে তার সবই আত্মঘাতী বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এমনকি যারা বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত তারাও বিএনপি'র এই অবস্থানের সমালোচনা করছেন। এসবের মাঝেই বিএনপি চেষ্টা করছিল তাদের তৃণমূলকে শক্তিশালী করতে। কিন্তু তাদের এই ভঙ্গুর দলটিতে বহিষ্কার রাজনীতি প্রবল আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটির অবস্থা ডুবন্ত সূর্যের মতো হয়ে গেছে। 

দলীয় কোন্দল, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মতের অমিলসহ নানা কারণে সমস্যায় জর্জরিত দলে এখন নতুন সমস্যা হয়ে এসেছে বহিষ্কার। একে একে বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রিয় নেতাদের বহিষ্কার করছে বিএনপি। সবার ক্ষেত্রেই বলা হচ্ছে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে তাদের বহিষ্কার করা হচ্ছে, কিন্তু যাদের বহিষ্কার করা হচ্ছে তারা জানেন না কোন কারণে তাদের বহিষ্কার করা হলো। দেখে গেছে, বিএনপি'র এই বহিষ্কার রাজনীতি লেগেই আছে। এমনিতেই নেতাকর্মীর সংকট, তারপর আবার এইভাবে দলের জনপ্রিয় নেতাদের বহিষ্কারের ফলে দলটির মধ্যেই শঙ্কার সৃষ্টি করছে। সর্বশেষ এই বহিষ্কার রাজনীতির শিকার বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান রঞ্জন। এর আগে, গত ১৮ জানুয়ারি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকার ও এবং তার প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ও মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামালকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এছাড়াও তৃণমূলের অনেক নেতাকেই দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ দেখিয়ে বহিষ্কার করা হচ্ছে। 

বিএনপি বারবার নিচের দিকেই যাচ্ছে। এই অধঃপতন দলীয় সিদ্ধান্তের মাধ্যমেই হচ্ছে। এই অধঃপতনগুলো অন্য কারও জন্য হচ্ছে না। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারার কারণেই এই অবস্থা হচ্ছে। দলটির মধ্যে অসন্তোষ, বিভক্তি এবং মতদ্বৈধতা চরম আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে জিয়া পরিবারের বাইরে বিএনপিকে বিজেপি আদলে সাজানোর জন্য একটি মেরুকরণের চেষ্টা চলছে। এ কারণেই এসব ঘটছে দলটির মধ্যে। কে কাকে বহিষ্কার করছে, তার কোনো ঠিক নেই। এইভাবে চলতে চলতে দলটি আর দল হিসেবে চলতে পারবে না। এক সময় নিঃশেষ হয়ে যাবে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বিএনপি'র কোন নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার যে স্বপ্ন, সেটিও ভণ্ডুল হয়ে যাবে। যদিও তাদের এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হওয়ার শঙ্কা অনেকটাই কম। তারপরও তাদের এইসব কর্মকাণ্ড তাদের আরও পেছনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঠাকুরগাঁওয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে নিজেই বলেছিলেন যে, বিএনপি দলগতভাবে স্থানীয় কোনো নির্বাচনে যাবে না। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কেউ যদি যেতে চায় তাহলে যেতে পারে; আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না। এছাড়াও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও বিএনপি প্রার্থীকে ভোটের আগে দল বসে যেতে বলেছিল। কিন্তু তিনি বসেননি। নির্বাচনে জেতার পর দল তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নিয়েছিল। তাহলে কেউ জিতলেই তাকে দলে রাখা হবে, আর হারলেই তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে এটা ঠিক নয়। জনপ্রিয় নেতাদের বহিষ্কার আগামী নির্বাচনে বিএনপি'র পরাজয়ের আলামত। সে কারণেই সময় থাকতেই বিএনপি'র বোঝা উচিৎ বিষয়টি। নইলে চরম বিপর্যয়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে বিএনপিকে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭