নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের লক্ষ্যে গঠিত সার্চ কমিটির সুপারিশ করা ১০ জনের নাম এবং কোন কোন সংগঠন সেই নামগুলো দিয়েছে তা প্রকাশের দাবি জানিয়েছে বেসরকারি সংস্থা সুজন। এই দাবির পর অনেক কথাই ঘুরে ফিরে আসছে। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সব জায়গায় সুশাসন প্রতিষ্ঠার লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কথা বললেও এবার তাদের লক্ষ্য একটু ভিন্ন বলেই মনে হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে সংগঠনটির বিভিন্ন প্রস্তাবনা দেখলেই সেটা গোচর করা যাচ্ছে। যে প্রতিষ্ঠানটি অনুদানের অর্থের মাধ্যমে নিজেদের তহবিল সংগ্রহ করে চলে, সেই প্রতিষ্ঠানটির সাম্প্রতিক এসব দাবি ও কর্মকাণ্ড রাজনৈতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন মহলের দৃষ্টিতে এসেছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্যান্য কমিশনার নিয়োগে সার্চ কমিটির কাছে ৩২২ জনের নাম প্রস্তাব করেছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সংগঠন। রাজনৈতিক দল, সুজন ও সুশীল সমাজের দাবির প্রেক্ষিতে বিভিন্ন দল ও সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত নামের তালিকা প্রকাশ করে সার্চ কমিটি। কিন্তু সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার এতেও খুশি হতে পারছেন না। তার দরকার পূর্ণাঙ্গ তালিকা। আসলে তিনি চাচ্ছেন নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়াকে একটি প্রশ্নের মুখোমুখি করতে। তার বক্তব্যেই সেটা স্পষ্ট হয়ে যায়। ৩২২ জনের তালিকা প্রকাশ করার পর তিনি বলেছেন, সার্চ কমিটি যা প্রকাশ করেছে, তাতে পরিপূর্ণ স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়নি, কারণ কাদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে, তা প্রকাশ করলেও কারা প্রস্তাব করেছে, তা কমিটি প্রকাশ করেনি। অসম্পূর্ণ তথ্য প্রকাশ করলে বা তথ্য গোপন করলে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয় না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচন প্রক্রিয়া যেমন গোপন একটি ব্যাপার তেমনি নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়াও একটি গোপন বিষয়। কেউ যেমন ভোট দেওয়ার পর বলে না যে, সে আওয়ামী লীগ না বিএনপিকে ভোট দিয়েছে, ঠিক তেমনি এই নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়াও। নির্বাচনে গোপনীয়তা রক্ষা না করলে যেমন ভোটের পবিত্রতা নষ্ট হয়, তেমনি এটাও তো এক ধরনের নির্বাচন। এটি একটি বাছাই প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার মধ্যে যদি, আওয়ামী লীগ যাদের নাম দিয়েছে বা অন্য দল যাদের নাম দিয়েছে তা বলে দেওয়া হয় তাহলেও এই প্রক্রিয়ার পবিত্রতা নষ্ট হয়। সেই সাথে যে দল যাদের নামই দিক না কেনো, সেই দলের গোপনীয়তাও নষ্ট হয়। এমনকি যে দলের পক্ষ থেকে ওই ব্যক্তিদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে তাদেরও গোপনীয়তা নষ্ট হয়। এর ফলে এই সার্চ কমিটির যে কর্মকাণ্ড, সেটাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
এছাড়াও বিভিন্ন দল ৩২২ জনের নাম প্রস্তাব করেছিল সার্চ কমিটির কাছে। তার মধ্যে থেকে সার্চ কমিটি ১০ জনকে বেছে নিয়ে সেই নামগুলো যদি প্রস্তাবকারী সংগঠনের নামের সাথে প্রকাশ করে তাহলে বাকিরা এটি নিয়ে রাগ, ক্ষোভ দেখাবে। এমনকি এটা নিয়ে নানা ধরনের সমালোচনা হবে। রাজনৈতিক দলগুলো এগুলো নিয়ে রাজনীতির পসরা সাজিয়ে বসবে এবং এটি একটি বড় রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে দাঁড়াবে। তখন দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। সেকারণেই ভোট যেমন একটি গোপনীয় বিষয়, ঠিক তেমনি বাছাই প্রক্রিয়াও একটি গোপনীয় বিষয়। সেক্ষেত্রে গোপনীয়তা যদি নষ্ট হয় তাহলে তো এই প্রক্রিয়ার পবিত্রতা থাকে না। এ কারণেই সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার নির্বাচন কমিশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা জন্য, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্যান্য কমিশনার বাছাই প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করা জন্য এধরনের দাবি উঠাচ্ছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সুজনের এসব কর্মকাণ্ডে এখন নানা ধরনের প্রশ্ন উঠছে। সুজন কি দেশে একটি অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য কারও সঙ্গে হাত মিলিয়ে এসব দাবি করছে? যেহেতু সুজন দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচন নিয়ে কাজ করছে, সেহেতু সুজনকে দিয়ে নিজেদের কথা বলিয়ে নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠছে বিভিন্ন মহলে। সার্চ কমিটি যে ১০ জন বাছাই করবে, এটি তাদের ক্ষমতা। সেটি প্রকাশ করবে কি করবে না একান্ত সার্চ কমিটির ব্যাপার। সেটির জন্য সুজন বলার কে? নির্বাচনের ক্ষেত্রে সুজন তো কোনো স্টেকহোল্ডার নয়। তাহলে কোনো সুজন'র এত দৌড়ঝাঁপ সেটাই ক্ষতিয়ে দেখা দরকার।