ইনসাইড থট

দুধ উৎপাদনে ভারতের উত্থান এবং বাংলাদেশের অভিযাত্রা (চতুর্থ পর্ব)


প্রকাশ: 21/02/2022


Thumbnail

জাতীয় অর্থনীতিতে প্রাণিসম্পদের অবদান

কৃষি প্রধান জনবহুল বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা, সুষম পুষ্টি, বেকার সমস্যার সমাধান ও আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, কৃষি জমির উর্বরতা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং স্মৃতিশক্তি বিকশিত মেধা সম্পন্ন জাতি গঠনের জন্য অপরিহার্য খাত হলো প্রাণিসম্পদ খাত। ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপি’তে প্রাণিসম্পদ খাতের অবদান ছিল ১.৪৪ শতাংশ এবং প্রবৃদ্ধির হার ৩.৮০ শতাংশ। মোট কৃষিজ জিডিপি’তে প্রাণিসম্পদ খাতের অবদান প্রায় ১৩.১০ ভাগ। তাছাড়া ২০২০-২১ অর্থ বছরে প্রাণিসম্পদ খাতে জিডিপির আকার  ছিল ৫০৩০১ কোটি টাকা, (সূত্র: বিবিএস ২০২০-২১)। লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো প্রাণিসম্পদ খাতে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ক্রমবর্ধমান, অর্থাৎ প্রতি বছর প্রাণিসম্পদ খাতে জিডিপি বেড়েই চলছে। 

প্রাণিসম্পদ ও ডেইরী উন্নয়ন প্রকল্পঃ বাংলাদেশে ডেইরী সেক্টরের উন্নয়ন স্বপ্ন বাস্তবায়নে সম্মিলিত প্রয়াস ও প্রতিশ্রুতি

প্রকল্প পরিচিতিঃ
বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন প্রাণিসম্পদ ও ডেইরী উন্নয়ন প্রকল্পটি অধিদপ্তর এবং মন্ত্রনালয়ের জন্য একটি ফ্লাগশিপ প্রকল্প যেখানে মোট বিনিয়োগ ৪২৮০ কোটি টাকারও বেশি। সদাশয় সরকার বিশ্বব্যাংক থেকে ৫০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা গ্রহণ করে, যা দেশের প্রাণিসম্পদ ও ডেইরী উন্নয়নে এযাবৎকালের সর্ববৃহৎ বিনিয়োগ। জানুয়ারী ২০১৯ সালে যাত্রা শুরু করে এক বছরের মাথায় প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কোভিড-১৯ গ্লোবাল প্যানডেমিকে ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হলেও বর্তমানে ঘুরে দাড়িয়েছে। ২০১৯-২০২৩ এই পাঁচ বছর মেয়াদি প্রকল্পটির মাধ্যমে দেশে দুধ ও মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধি, প্রাণিসম্পদ তথা গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, পোল্ট্রির উৎপাদন দক্ষতা বৃদ্ধি, বিভিন্ন ধরণের যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি প্রদর্শনী দ্বারা খামারীদের দক্ষতা উন্নয়ন, দুধ বিপণনের জন্য বাজার সংযোগ, পণ্য বহুমূখীকরণ, মূল্য সংযোজন, স্থানীয় পর্যায়ে উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি, প্রাণিজাত আমিষের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি ফুড চেইনের সকল পর্যায়ে সেফটি নিশ্চিতকরণ, দুধ-মাংস উৎপাদনকারী, পরিবহণকারী, ব্যবসায়ী, কারিগর, ভোক্তা ইত্যাদি সকল স্তরে সচেতনতা বৃদ্ধি, এতদসংক্রান্ত প্রোটোকল/নীতি প্রণয়ন ও অনুসরণ, বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে ম্যাচিং প্লান্ট পদ্ধতিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৪০০টি ভিলেজ মিল্ক কালেকশন সেন্টার, আঞ্চলিক পর্যায়ে ২০টি ডেইরী হাব স্থাপন, পশু জবাই ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের জন্য মেট্রো পর্যায়ে ৩টি, জেলা পর্যায়ে ২০টি পশুজবাইখানা নির্মাণ, উপজেলা/গ্রোথ সেন্টার পর্যায়ে ১৯২টি স্লটার স্লাব/মাংসের বাজার উন্নয়ন, খামারের বর্জ্য ব্যবহার করে বিকল্প জ্বালানী/বায়োগ্যাস ও বায়োফার্টিলাইজার উৎপাদনে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সহায়তা প্রদান, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক দেয় ভেটেরিনারী সেবা আরও বেগবান করা ও মানোন্নয়নের জন্য ডায়াগনোস্টিক ল্যাব ও ভেটেরিনারী হাসপাতালসমূহের সক্ষমতা বৃদ্ধি, উপজেলা পর্যায়ে মোবাইল ভেটেরিনারী ক্লিনিক ব্যবস্থা পরিচালনা, ভোক্তা সৃষ্টি ও পুষ্টি সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য পাইলট আকারে স্কুল মিল্ক কার্যক্রম পরিচালনা, প্রাণিসম্পদ বীমা ব্যবস্থায় উৎসাহ প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ডাটাবেজ তথা ক্ষেত্র প্রস্তুতকরণ, প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তির সেবা প্রদান দক্ষতা বৃদ্ধি, ইত্যাদি কার্যক্রম রয়েছে প্রকল্পটিতে। 

প্রকল্প এলাকায় প্রযুক্তি সম্প্রসারণ সেবা খামারীর দোরগোড়ায় পৌছে দেয়ার জন্য ইউনিয়ন পর্যায়ে লাইভস্টক সার্ভিস প্রোভাইডার (৪২০০জন), উপজেলা পর্যায়ে লাইভস্টক ফিল্ড এসিস্টেন্ট (৯৩০জন) এবং প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা (৪৬৫জন) প্রকল্প অর্থায়নে নিযুক্ত রয়েছে, প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছে। এছাড়াও মাঠ পর্যায়ে সিভিল ওয়ার্কস এর জন্য ৩জন সহকারি প্রকৌশলী এবং একটি ডিজাইন ও সুপারভিশন ফার্ম নিয়োজিত রয়েছে। প্রকল্প কার্যক্রম তদারকি ও তথ্য সংগ্রহের জন্য ২০জন মনিটরিং অফিসার ও সিনিয়র এমএন্ডই বিশেষজ্ঞ সমন্বয়ে প্রকল্পটির শক্তিশালী মনিটরিং সেল রয়েছে। 

প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ সেবা প্রদানে ফার্মারস ফিল্ড স্কুল মডেল
প্রকল্পভূক্ত ৪৬৬ উপজেলায় ৪টি ভিন্ন ভিন্ন ভেলুচেইন বিশেষকরে (ক) ডেইরী ভেলুচেইন, (খ) বীফ ফ্যাটেনিং ভেলুচেইন, (গ) জাবরকাটা ছোট প্রাণি অর্থাৎ ছাগল/ভেড়া ভেলুচেইন এবং (ঘ) দেশী হাস-মুরগী ভেলুচেইনের আওতায় গড়ে ৩০জন খামারী সংগঠিত করে একটি প্রোডিউসার গ্রুপ বা পিজি গঠন করা হয়েছে/হচ্ছে। এরকম মোট পিজি হবে ৫৫০০টি। এই পিজিভিত্তিক ফার্মার্স ফিল্ড স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হবে এবং এই ফিল্ড স্কুল বা খামারীর উঠান বা খামারকেন্দ্রিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, প্রযুক্তি হস্তান্তর, উপকরণ সরবরাহ, পুষ্টি য স্বাস্থ্য পরামর্শ প্রদান ইত্যাদি যাবতীয় সম্প্রসারণ কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে গবাদিপশুর উৎপাদন দক্ষতা বৃদ্ধি, খামারের হাইজিন উন্নয়ন ও ফুড সেফটি উন্নয়ন করা হবে। অর্থাৎ প্রশিক্ষণ বা সম্প্রসারণ সেবার জন্য খামারীকে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে নয়, বরং প্রাণিসম্পদ দপ্তর এই পিজি ভিত্তিক ফার্মার্স ফিল্ড পরিচালনার মাধ্যমে খামারী তাদের কাঙ্খিত সেবা বাড়িতে বসেই পেয়ে যাবেন। 

আগামীকাল পঞ্চম ও শেষ পর্ব প্রকাশিত হবে...


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭