ইনসাইড এডুকেশন

আর যেন বন্ধ না হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান


প্রকাশ: 21/02/2022


Thumbnail

শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড, এই বাক্যটি আমাদের বর্তমান প্রজন্ম যেন ভুলেই যেতে বসেছে। ভুলবে নাই বা কেন? করোনা সংক্রমণের কারণে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছিল সরকার। দীর্ঘ ১৮ মাস পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে বেশকিছু নির্দেশনা দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হয়েছিল। নির্দেশনা মেনে ক্লাস চলার মধ্যেই নতুন করে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গত ২১ জানুয়ারি আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করে সরকার যা আজ শেষ হচ্ছে। আগামীকাল থেকে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দেয়া হয়েছে। তবে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় খুলবে আগামী ২ মার্চ।

করোনার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় দীর্ঘ দুই বছরে অনলাইনে শিক্ষাকার্যক্রম চললেও সশরীরে খুব বেশি ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। অনলাইনে শিক্ষাকার্যক্রম দেশের প্রেক্ষাপটে ছিল নতুন। ফলে অনলাইন ক্লাসের প্রয়োজনীয় সারঞ্জমের সুবিধা বঞ্চিত অধিকাংশ শিক্ষার্থী বিশেষ করে প্রান্তিক শিক্ষার্থীরা অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রমে যুক্ত হতে পারেনি। এর ফলে শিক্ষার্থীরা নানামুখী ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ফলে জাতির মেরুদণ্ড এখন যে ক্ষতিগ্রস্ত তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলে সার্বিকভাবে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর এই ক্ষতি কাটিয়ে জাতির মেরুদণ্ড সোজা করে দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখাই বর্তমানে আমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ।

প্রথমত, মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন আয়ের পরিবারের সন্তানরা লেখাপড়া থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। আর্থিক সমস্যার দরুন ছেলেদের নানাবিধ কাজ করতে হচ্ছে এবং মেয়েদের বিবাহ দিয়ে দেয়া হচ্ছে। ফলে বিরাট একটি অংশ শিক্ষা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। লেখাপড়া থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের আবারও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরিয়ে আনাই হবে প্রধান চ্যালেঞ্জ।

দ্বিতীয়ত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সুযোগে শিক্ষার্থীদের একটা অংশ সোশ্যাল মিডিয়া, টিকটক, লাইকিসহ বিভিন্ন ট্রেন্ডে আসক্ত হয়ে পড়েছে। ফলে এখন লেখাপড়ার প্রতি তাদের এক ধরণের অনীহা তৈরি হয়েছে। তাদের ওপর এইসব বিষয়ের একটি মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব পড়েছে যা ভয়ঙ্কর। শিক্ষার্থীরা এখন অটোপাস কিংবা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের দাবিতে আন্দোলনও করছে। ফলে তারা অনেকটাই বেপরোয়া হয়ে উঠছে। এদের কেউ কেউ আবার আসক্ত হয়ে পড়ছে মাদকে। যদিও এই সবকিছুর জন্য পরিবারের উদাসীনতাকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই বেপরোয়া শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের সুস্থ পরিবেশে ফিরিয়ে আনাও বেশ কঠিন চ্যালেঞ্জ বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

তৃতীয়ত, করোনার কারণে স্নাতক (অনার্স) ফাইনাল পরীক্ষায় বসতে পারেনি এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা নেহাত কম নয়। আর এই স্নাতক (অনার্স) ফাইনাল পরীক্ষা না দিতে পারার দরুন করতে পারছে না চাকরীর পরীক্ষার আবেদনও। অন্যদিকে বয়স তো থেমে নেই। বয়স শেষ হলে করা যাবে না আবেদনও। পাশাপাশি করোনার কারণে কমেছে কর্মসংস্থানও। সবমিলিয়ে এই চাকরী প্রার্থীদের হতাশা এবং অসহায় আত্মসমর্পণের খবর গণমাধ্যমে চোখ রাখলেই দেখা যায়।

করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধে রেকর্ড করেছে বাংলাদেশ। করোনায় সবকিছুই প্রায় স্বাভাবিক চললেও কেবল বন্ধ করা হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। সবমিলিয়ে করোনার আঘাতে জর্জরিত বাংলাদেশের শিক্ষাখাত কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবে সেটি এখন বড় প্রশ্ন। যদি ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব না হয় তাহলে আমরা এমন একটি প্রজন্ম পেতে যাচ্ছি, যার ভয়াবহতা অননুমেয়। করোনায় কেবলই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই কেন বন্ধ হয় সেটিও একটি বড় প্রশ্ন। করোনা এখন আর ভয়ংকর-আগ্রাসী রূপে নেই। ইতোমধ্যে টিকার জগতেও প্রবেশ করছি আমরা। তবুও আমাদের সকলের স্বাস্থ্যবিধি মানতেই হবে। পাশাপাশি জাতির মেরুদণ্ড সোজা করতে আর যেন বন্ধ না হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। প্রয়োজনে অন্যসব বন্ধ রেখে হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেন খোলা থাকে, আর যেন বন্ধ না হয় বলেই দাবি জানাচ্ছে সংশ্লিষ্ট সকলেই।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭