ইনসাইড পলিটিক্স

বহিষ্কারাদেশ পেয়েও খুশি কেন বিএনপি'র বহিষ্কৃতরা?


প্রকাশ: 22/02/2022


Thumbnail

বাংলাদেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে খ্যাত বিএনপি এখন ভাঙনের চূড়ায় এসে পৌঁছেছে। দলটির অস্তিত্বই এখন সংকটের মুখে। যেকেনো মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে দলের কাঠামো। কারণ দলটির চেয়ারপার্সন বেগম জিয়া দুর্নীতির মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত একজন আসামী এবং সরকারের অনুকম্পায় বর্তমানে তিনি কারাগারের বাহিরে আছেন। যদিও দল পরিচালনা করার মতো অবস্থায় তিনি নেই। কারণ তিনি বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগে অক্রান্ত হয়ে একাধিকবার হাসাপাতালে ভর্তি থেকে বর্তমানে তার বাসা ফিরোজাতে অবস্থান করছেন। দলের কোনো কর্মকাণ্ডেই তিনি এখন নেই। এদিকে তার এই অনুপস্থিতিতে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েছেন দলটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক জিয়া। তিনিও পলাতক অবস্থায় লন্ডনে বসবাস করছেন। ফলে দলটির হাল ধরার মতো এখন তেমন কেউ নেই। দলটি শুধু দিবসভিত্তিক কর্মসূচির মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে রয়েছে। ফলে দলের যারা নেতাকর্মী আছেন তারাও এই দলে আর স্বস্তিতে নেই। একে দলের কোনো কর্মসূচি নেই, তারপর দলের মধ্যে নতুন রাজনীতি শুরু হয়েছে বহিষ্কার রাজনীতি। বিএনপি'র অনেক জনপ্রিয় নেতাকে গত কয়েকদিনে বহিষ্কার করা হয়েছে। যদিও দেখা গেছে যেসব নেতাদের বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছেন, তারা দল থেকে বহিষ্কার হওয়ার পরও আনন্দ প্রকাশ করেছেন। 

গত ১৮ জানুয়ারি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তৈমূর আলম খন্দকার ও এবং তার প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ও মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামালকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এই বহিষ্কারাদেশ পাওয়ার পর তৈমূর আলম খন্দকার বলেছিলেন, আমাকে যদি বহিষ্কার করে থাকে তাহলে আলহামদুল্লিহ। এদিকে সর্বশেষ বিএনপি'র বহিষ্কার রাজনীতির শিকার হন দলটির সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান রঞ্জন। বহিষ্কারের পর তিনি বলেছিলেন, বহিষ্কার করার পর এখন আমি মুক্ত। আমি স্বাধীনভাবে মুক্ত চিন্তা করতে পারবো, সিদ্ধান্ত নিতে পারবো নির্বাচনে যাবো কি যাবো না। ফলে আমার দল আমার ভালো করে দিলো। আমি স্বাধীন চিন্তার মানুষ। এই সিদ্ধান্তের ফলে আমি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবো। আসলে বিএনপি'র এখন আর কোনো কিছুই অবশিষ্ট নেই। দলের মধ্যে যারা নেতৃত্ব দেবেন, তারাই অনেক ভাগে বিভক্ত। দলের অনেক স্থায়ী কমিটির নেতা আছেন যারা তারেক জিয়াকে মানতে নারাজ। মির্জা আব্বাসের মতো দলটির সিনিয়র নেতাকেও তারেক জিয়ার শোকজ এর মুখে পড়তে হয়েছে। যারা দলের জন্য ত্যাগ শিকার করেছেন, তাদের আগের কর্মকাণ্ড না দেখে যাকে খুশি তাকেই বহিষ্কার করা হচ্ছে। 

দলটির এই বহিষ্কার রাজনীতিতে হতাশ নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। ক্ষমতার বাইরে থাকা, নানা ধরনের মামলার পাহাড়ে চাপা পড়া এসব নেতাকর্মীদের এখন বড় প্রশ্ন হয়ে সামনে আসছে বহিষ্কারের বিষয়টি। ফলে দলটির নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনের যে মনোবাসনা, সেটিও ভেস্তে যেতে বসেছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে বিএনপি চেয়ারপার্সনের মুক্তির আন্দোলনসহ নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে যে আন্দোলনে চিন্তা তারা করছে, তাতে তারা কোনো সময়ই সফল হতে পারবে না। কারণ নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো সময় কোনো আন্দোলন গড়ে তোলা যায় না। আর বর্তমানে বিএনপি'র যে অবস্থা, তাতে করে বিএনপি আস্তে আস্তে তার উঠে দাঁড়ানো ক্ষমতাও হারানো পথে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি এই অধঃপতন দলীয় সিদ্ধান্তের মাধ্যমেই হচ্ছে। এই অধঃপতনগুলো অন্য কারও জন্য হচ্ছে না। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারার কারণেই এই অবস্থা। দলটির মধ্যে অসন্তোষ, বিভক্তি এবং মতভেদ চরম আকার ধারণ করেছে। ফলে নেতাকর্মীদের বহিষ্কার করলেও তাদের এতে কিছু আসছে যাচ্ছে না। নেতাকর্মীদের বহিষ্কার করায় তারা যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচছেন। জনপ্রিয় নেতাদের বহিষ্কার আগামী নির্বাচনে দলটির পরাজয়ের আলামত। বিএনপি'র মাঠের রাজনীতিতে বিশাল শূন্যতা বিরাজ করছে। আর এই শূন্যতাকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে দলের ত্যাগী নেতাদের বহিষ্কার। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাহিরে থাকা দলটির এই শূন্যতা দলের ভিত্তিকে নড়বড়ে করে ফেলেছে। এর ফলে ভবিষ্যতের রাজনীতি বিএনপি'র জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭