ইনসাইড থট

দুধ উৎপাদনে ভারতের উত্থান এবং বাংলাদেশের অভিযাত্রা (পঞ্চম ও শেষ পর্ব)


প্রকাশ: 22/02/2022


Thumbnail

প্রাণিস্বাস্থ্য সেবা সম্প্রসারণে মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক ব্যবস্থার প্রচলন:

বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ সেক্টরে বিশেষকরে রুমিনেন্ট প্রাণি যেমন দুধের গাভী, মহিষ, মাংসের গরু, ছাগল ভেড়া ইত্যাদি লালন পালনে এখনও স্মলহোল্ডারদের সংখ্যাধিক্য রয়েছে। অর্থাৎ এখনও গ্রাম ও উপশহর এলাকায় প্রায় হাউজহোল্ডে গবাদিপশু লালন পালন করা হয়। প্রাণিস্বাস্থ্য সেবার জন্য খামারীগণ আত্মনির্ভরশীল নয়। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর তার সীমিত জনবল ও দেশের প্রাইভেট সেক্টরে কর্মরত সংশ্লিষ্ট পেশাজীবিদের মাধ্যমে এই স্বাস্থ্যসেবা চালিয়ে নেয়ার প্রয়াস পাচ্ছে। দেশে এখনও অনেক পরিবার আছে একটি গাভীই তাদের জীবিকার অবলম্বন। সময়যোচিত চিকিৎসাসেবা না পাওয়ায় হয়তো সে আংশিক বা পুরোপরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। এই সমস্যা উত্তোরণের জন্য সদাশয় সরকার প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মাধ্যমে দেশে প্রথমবারের ন্যায় চালু করতে যাচ্ছে ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসা সেবার জন্য মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক। এইটি শুধু উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার জন্য বাহনই নয়ম বরং ভ্রাম্যমাণ একটি ভেটেরিনারি ক্লিনিক যেখানে রয়েছে জরুরী চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ ও যন্ত্রপাতি। এমনকি শল্য চিকিৎসা সরঞ্জাম থাকবে এ বাহনে। পোর্টেবল আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিন, ম্যাস্টাইটিস ডিটেক্টর, এস্ট্রাস ডিটেক্টর, সার্জিক্যাল কিটবক্স, ম্যানিপুলাটিভ ডেলিভেরী যন্ত্রপাতি, পোস্টেমর্টেম সেট, স্টোমাক টিউব, এনিমেল রেস্ট্রেইনিং আইটেম, গামবুট, অ্যাপ্রোণ, স্যালাইন স্ট্যান্ড ইত্যাদি সুবিধা থাকবে এই মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিকে। ফলে অসুস্থ পশুকে হাসপাতালে এনে নয় বরং অসুস্থ পশুর কাছেই চলে যাবে কাংখিত স্বাস্থ্যসেবা। প্রাণিসম্পদ খাতে হবে নবযুগের সুচনা, ভেটেরিনারি সেবা যাবে খামারী দোর গোড়ায়।

ডেইরী উন্নয়নে ডেইরী হাব মডেল: 

দেশে আবহমান কাল থেকেই ডেইরী সেক্টর উন্নয়নে ডেইরী কো-অপেরাটিভ্স মডেল কাজ করে আসছে। প্রযুক্তি ও সচেতনতা বৃদ্ধির সাথে সাথে উন্নয়ন মডেলেও উৎকর্ষ সাধিত হয়েছে। সমবায় মডেলের সাথে আরও বাড়তি সুবিধাদি যুক্ত করে ডেইরী উন্নয়নে ডেইরী হাব মডেল আজ অধিক গ্রহণযোগ্য ও কার্যকর। প্রান্তিক পর্যায়ে সংগঠিত পিজিসমূহে নিবিড় সম্প্রসারণ কার্যক্রম পরিচালনা করে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও পণ্যের মানোন্নয়নের মাধ্যমে এইসব পণ্য স্থানীয়ভাবে স্থাপিত ভিলেজ মিল্ক কালেশন সেন্টার বা ভিএমসিসির সাথে যুক্ত করা হবে। যে গ্রামে বা পিজিসমূহে দুধের উৎপাদন বেশী তার নিকটবর্তী যোগাযোগ ভালো এমন পয়েন্টে সরকার প্রদত্ত ম্যাচিং গ্রান্ট পদ্ধতির আওতায় উদ্যোক্তা ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে এসব ভিএমসিসি স্থাপিত ও পরিচালিত হবে। অর্থাৎ এই ভিএমসিসির মাধ্যমে দুধ ক্রয় করা হবে, এবং এরূপ গড়ে ২০টি ভিএমসিসির দুধ একটি আঞ্চলিক ডেইরী হাবে এনে পরবর্তী প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে প্রক্রিয়াকরণ বা পণ্য বহুমুখীকরণের জন্য প্রসেসিং প্লান্ট বা ফ্যাকটিরীতে যাবে। সরকার ২০টি ডেইরী হাবের আওতায় মোট ৪০০টি ভিএমসিসি স্থাপনের মাধ্যমে দেশব্যাপী সংগঠিত ডেইরী পিজিসমূহকে তাদের উৎপাদিত দুধ বিপণনে সহায়তা করতে যাচ্ছে। 

ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা জন্য শক্তিশালী ডাটাবেজ তৈরী:  

উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নে চাই গ্রহণযোগ্য ডাটাবেজ। একদিনে এই ডাটাবেজ রচিত হয়না এবং এই ডাটাবেজ সৃষ্টির জন্য চাই প্রান্তিক পর্যায় বা খামারীর নিকট থেকে নিয়মিত তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষেন ও পরিসংখ্যানে রূপান্তর করা। আর তার জন্য চাই সঠিক সিস্টেম চালুকরণ। প্রাণিসম্পদ ও ডেইরী উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে সরকার দেশের প্রকল্প এলাকার সকল খামার, খামারী, ও খামারের পশু ও তৎসম্পকৃত তথ্যাদি সংগ্রহ, আইনী ভিত্তি তৈরী, খামার রেজিষ্ট্রেশন ও পশু সনাক্তকরণ ইত্যাদি কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। আশাকরা যায়, আগামী কয়েক বছরে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর খামার, খামারী ও পশুর বিস্তারিত ডাটাবেজ তৈরীর ভিত্তি রচিত করবে। এসব ডাটাবেজ উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন, গবেষনা, ব্যবসা পরিকল্পনা, ইনসুরেন্স ইত্যাদি বহুবিধ সুবিধার ক্ষেত্র প্রস্তুত করবে। 

অন্যান্য আশুকরণীয় বিষয়াদি: 

প্রাণিসম্পদ খাতে যুগোপযোগী পরিবর্তন আনয়নের জন্য বাধ্যতামূলক খামার ও পশু নিবন্ধন, সকল খামার, খামারী ও পশুর ডাটাবেজ তৈরী ও তার আইনীভিত্তি রচনা, প্রযুক্তি হস্তান্তর ও খামার যান্ত্রিকীকরণ, বিশেষকরে উৎপাদন খরচ কমাতে পশুখাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, সংরক্ষণ, পরিবহন ও বিপণন ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনয়ন, পশুরোগ প্রতিরোধ শতভাগ গবাদিপশুকে গুরুত্বপূর্ণ সকল রোগ প্রতিরোধে টীকা উৎপাদন, সংরক্ষণ, পরিবহন, টীকা প্রদান কার্যক্রম জোরদারকরণ, প্রাণিসম্পদ খাত প্রাইভেট সেক্টর পরিবেষ্টিত একটি খাত তাই পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ উন্নয়ন ও তৎপরিচালিত প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি, ভেটেরিনারি ড্রাগের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহাররোধে এন্টি মাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, সবোপরি জাত উন্নয়নে কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রমকে সুনির্দিষ্ট রেকর্ডকিপিং এর আওতায় এনে সত্যিকার উন্নয়নকে এগিয়ে নেয়া যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭