ইনসাইড বাংলাদেশ

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ


প্রকাশ: 23/02/2022


Thumbnail

বাঙালি জাতির ইতিহাসে ২৩ ফেব্রুয়ারি ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ দিন। দিবসটি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ দিন। যত দিন বেঁচে থাকব হৃদয়ের গভীরে লালিত এই দিনটিকে স্মরণ করব। ১৯৬৯ সালের এই দিনে বাংলার দুঃখী মানুষের বন্ধু, বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের অন্যতম নেতাকে জাতির পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞচিত্তে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেছিলাম।

বাঙালির জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে ১৯৬৯-এর গণ-আন্দোলন এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। কালপর্বটি ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের ‘ড্রেস রিহার্সাল’। জাতির মুক্তিসনদ ছয় দফা দেওয়াকে অপরাধ গণ্য করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ মোট ৩৫ জনকে ফাঁসি দেওয়ার লক্ষ্যে ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব ও অন্যান্য’ তথা আগরতলা মামলার আসামি করা হয় এবং নির্বিঘ্নে আবার ক্ষমতায় আরোহণের এক ঘৃণ্য মনোবাসনা চরিতার্থে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করেন স্বৈরশাসক আইয়ুব খান। আগরতলা মামলার বিচার যখন শুরু হয়, তখন আমরা উপলব্ধি করি বঙ্গবন্ধুকে যদি ফাঁসিকাষ্ঠে ঝোলানো হয়, তাহলে চিরদিনের জন্য বাঙালি জাতির কণ্ঠ স্তব্ধ হয়ে যাবে। কেননা এই একটি কণ্ঠে কোটি কণ্ঠ উচ্চারিত হয়। তাই আমরা ১৯৬৯ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ডাকসু’ কার্যালয়ে চার ছাত্রসংগঠনের নেতাদের উপস্থিতিতে এক সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ছাত্রদের ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম ‘সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন এবং ছয় দফাকে হুবহু যুক্ত করে ১১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করি। ১১ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ১৯৬৯ সালের ১৭ জানুয়ারি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের জমায়েত অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের বটতলায় এবং পূর্বঘোষিত ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করা হয়। ১৭ জানুয়ারি যে আন্দোলন আমরা শুরু করেছিলাম, ২০ জানুয়ারি শহীদ আসাদের রক্তাক্ত জামা হাতে নিয়ে যে শপথ নিয়েছিলাম, ২৪ জানুয়ারি মতিউর-মকবুল-রুস্তম-আলমগীরের রক্তের মধ্য দিয়ে সেই আন্দোলন সর্বব্যাপী গণ-অভ্যুত্থান সৃষ্টি করেছিল।

১৯৬৬ সালের ৮ মে গভীর রাতে ছয় দফা কর্মসূচি প্রদানের অভিযোগে দেশ রক্ষা আইনে যে শেখ মুজিব গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, ৩৩ মাস পর ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি যে শেখ মুজিব মুক্তিলাভ করেন—এই দুই মুজিবের মধ্যে ছিল গুণগত ফারাক। আগরতলা মামলাটি ছিল বাঙালি জাতির জন্য অগ্নিপরীক্ষার মতো। সেই অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি বন্দিদশা থেকে মুক্ত মানব হয়ে বেরিয়ে আসেন। ২২ ফেব্রুয়ারি আমরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিই, প্রিয় নেতা শেখ মুজিবকে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে গণসংবর্ধনা জানাব। সেই সিদ্ধান্ত অনুসারেই রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ২৩ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৩টায় সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে গণসংবর্ধনা সভার আয়োজন করা হয়।

বছর ঘুরে এমন একটি মধুর দিন যখন ফিরে আসে হৃদয়ের মানসপটে কত স্মৃতি ভেসে ওঠে। আমরা সংখ্যাসাম্যের বিরুদ্ধে সংখ্যাগুরুর অবস্থান থেকে ‘এক মাথা এক ভোটে’র দাবি তুলে তা আদায় করেছিলাম। ফলে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে সংখ্যাধিক্য আসন আমরা লাভ করেছিলাম। এই দিনের প্রতিটি মুহূর্তে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে মনে পড়ে।

ইতিহাসের মহামানব জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ তথা ‘মুজিববর্ষ’ ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের মহতী কালপর্বে ভাষার মাস ‘ফেব্রুয়ারি’ আজ আমাদের জাতীয় জীবনে নবরূপে আবির্ভূত হয়েছে। বছরব্যাপী ‘মুজিববর্ষ’ পালনের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতার চেতনা আজ স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত।

জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের গৌরবময় এই ইতিহাস সৃষ্টি করতে যে নেতা তাঁর যৌবনের ১৩টি মূল্যবান বছর পাকিস্তানের কারাগারে কাটিয়েছেন; কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বসে যে নেতা প্রিয় মাতৃভূমি বাংলার ছবি হৃদয় দিয়ে এঁকেছেন; ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন—সেই নেতার জন্মশতবর্ষে ৭০ হাজার গৃহহীন পরিবার গৃহ পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন আট লাখ ৮৫ হাজার ৬২২ জন গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষকে গৃহ ও ভূমি দেওয়া হবে। দেশের শতভাগ লোক বিদ্যুৎ ব্যবহারের দ্বারপ্রান্তে। শিক্ষার হার ৭৪.৯ শতাংশ। গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়ে ৭৩ বছর। চলতি অর্থবছরে মাথাপিছু আয় দুই হাজার ৫৫৪ ডলারে উন্নীত হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৫ বিলিয়ন ডলার। রপ্তানি ৪৬.৪ বিলিয়ন ডলার। অনেক মেগাপ্রজেক্ট আজ শেষ হওয়ার পথে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। ২০৩৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৫তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। সফলভাবে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা ও কভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রদানেও বাংলাদেশ এরই মধ্যে সমগ্র বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সবই সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সবল ও দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে।

বঙ্গবন্ধু স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেন। সাংবিধানিক সুফল আজ দেশের মানুষ ভোগ করছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ষাটোর্ধ্ব নাগরিকদের জন্য পেনশনের ব্যবস্থা করার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের নির্দেশ দিয়েছেন। আমাদের জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের মহত্তর আদর্শ ছিল স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার পরিবর্তে জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রাষ্ট্রকে জনকল্যাণমুখী করার এই মহতী প্রচেষ্টা ইতিহাস হয়ে থাকবে।

লেখক : আওয়ামী লীগ নেতা, সংসদ সদস্য, সভাপতি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, জাতীয় সংসদ


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭