একের পর এক নিষেধাজ্ঞার কবলে রাশিয়া

একের পর এক নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ছে রাশিয়া। পশ্চিমা দেশগুলো এক জোট হয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নানামুখী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। আর যার সর্বশেষ সংস্করণ হচ্ছে কানাডা। রাশিয়ার পদক্ষেপের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) আনুষ্ঠানিকভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়ে কানাডীয় প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। 

কানাডীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাল্টিক অঞ্চলে শান্তি বজায় রাখার পাশাপাশি ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বকে সুরক্ষিত রাখতে লাটভিয়ায় কানাডার ৪৬০ জন সেনা মোতায়েনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া দোনেতস্ক ও লুহানস্কে রাশিয়ার সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্তেরও নিন্দা জানান তিনি। একইসঙ্গে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত দু’টি রুশপন্থি অঞ্চলকে ‘স্বাধীন’ রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়াকে ইউক্রেনের অখণ্ডতা এবং সার্বভৌমত্বের ওপর আক্রমণ বলেও অভিহিত করেন তিনি।

এদিকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সবার প্রথম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ব্রিটেন। এদিকে রাশিয়ার পাঁচটি ব্যাংকের সম্পত্তি ফ্রিজ করার ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। একইসঙ্গে তিনজন রুশ বিলিয়নিয়ারের বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটি। এই তিন রুশ নাগরিক যুক্তরাজ্যে ভ্রমণ করতে পারবেন না এবং ব্রিটেনে থাকা তাদের সম্পদও আটকে রাখা হবে।

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হাউস অব কমন্সে এই পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করার সময় বেশ কিছু ব্রিটিশ আইনপ্রণেতা প্রধানমন্ত্রী জনসনের নেওয়া পদক্ষেপকে যথেষ্ট নয় বলে দাবি করেন। পরে জনসন দাবি করেন, নিষেধাজ্ঞার পরিধি আরও বাড়ানো হতে পারে।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে সবচেয়ে কঠিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মার্কিন প্রশাসন। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত দু’টি রুশপন্থি অঞ্চলকে মস্কো ‘স্বাধীন’ রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়ায় পর রাশিয়ার ভিইবি এবং রুশ সামরিক বাহিনীর একটি ব্যাংকের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই নিষেধাজ্ঞা রুশ সরকারকে পশ্চিমা দেশগুলো থেকে অর্থ সংগ্রহ বন্ধ করে দেবে।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি বলছে, রাশিয়ার প্রভাবশালী বেশ কিছু ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধেও আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেত পারে যুক্তরাষ্ট্র। জো বাইডেন বলেছেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় মিত্রদেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর আরোপ করা নিষেধাজ্ঞার পরই এ বিষয়ক ঘোষণা দেয় ওয়াশিংটন।

এছাড়া রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার কথা জানিয়েছে জাপানও। জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রয়েছে জাপানে রাশিয়ান বন্ড ইস্যু করা নিষিদ্ধ করা এবং কিছু রুশ নাগরিকের সম্পদ জব্দ করার পাশাপাশি জাপানে ভ্রমণ সীমিত করা।

ইউক্রেনে চলমান উত্তেজনার কারণে রাশিয়ার অন্যতম প্রধান গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্প অনুমোদনের প্রক্রিয়া স্থগিত করেছে জার্মানি। রুশ এই গ্যাস পাইপলাইনটি নর্ড স্ট্রিম ২ নামে পরিচিত এবং এর মাধ্যমে রাশিয়ার গ্যাস জার্মানি তথা পশ্চিম ইউরোপে যাওয়ার কথা রয়েছে।

অবশ্য রাশিয়ার সরবরাহ করা গ্যাসের ওপরই অনেকটা নির্ভরশীল পুরো ইউরোপ। সমগ্র ইউরোপের প্রায় ৪০ শতাংশ গ্যাসের জোগান দিয়ে থাকে রাশিয়া।

এদিকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে একগুচ্ছ নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল। তিনি বলেছেন, ইউক্রেনের দু’টি প্রজাতন্ত্রকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে রুশ পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় ইইউভুক্ত দেশগুলো সর্বসম্মতিক্রমে নিষেধাজ্ঞা আরোপের এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ব্রাসেলসে ইইউয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের জরুরি বৈঠকের পর মঙ্গলবার রাতে বোরেল একথা ঘোষণা করেন। তিনি দাবি করেন, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে রাশিয়া মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বোরেল বলেন, ‘ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ করার’ ঘটনায় জড়িত রাশিয়ার ২৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।