ইনসাইড গ্রাউন্ড

শেষের পথে কি পাণ্ডব অধ্যায়?


প্রকাশ: 23/02/2022


Thumbnail

পঞ্চপাণ্ডব ধারণাটি এসেছে মহাভারত থেকে। মহাভারত-এ বর্ণিত পাণ্ডুর পাঁচ পুত্র হলেন- যুধিষ্ঠির, ভীম, অর্জুন, নকূল, সহদেব। আর বাংলাদেশের ক্রিকেটের পঞ্চপাণ্ডব হলেন, মাশরাফি, তামিম, সাকিব, মাহমুদুল্লাহ, মুশফিক। গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশ ক্রিকেট মানেই এই পঞ্চপাণ্ডব নিয়ে আলোচনা। যদিও এক পাণ্ডব অর্থাৎ মাশরাফি এখন আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মধ্যে নেই কিন্তু বাকি চার পাণ্ডব এখনও খেলছেন বাংলাদেশ দলের হয়ে। আর এই চারজনকে নিয়ে আলোচনার যেনো শেষও নেই। অবস্থা এমন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে যে, এদের ছায়ায় তরুনরা পর্যন্ত ঢাকা পরে যাচ্ছে। তরুনদের কাজগুলো এদের জন্যই ছাপিয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন। কিন্তু আজকে চার পাণ্ডবের পারফরমেন্সে দেখা গেছে যে, তাদের সময় ফুরিয়ে এসেছে। তরুনদের দিয়ে গড়তে হবে বাংলাদেশের ক্রিকেট। আজকের খেলায় সেটাই অনেকটা বুঝে গেছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তরা। 

মাশরাফি বিন মর্তুজা ২০০১ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেটে যোগ দিয়ে খেলা শুরু করে। এর প্রায় ৬ বছর পরে ২০০৭ সালে খেলা শুরু করেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। মাহমুদুল্লাহ'র কাছাকাছি সময়েই খেলা শুরু করে তামিম, সাকিব, মুশফিকও। আস্তে আস্তে তারা একসঙ্গে খেলতে খেলতে বাংলাদেশের ক্রিকেটের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়ে ওঠেন। এক সময় তাদের নাম হয়ে যায় পঞ্চপাণ্ডব। এরা ৫ জন পঞ্চপাণ্ডব হয়ে উঠলেও, তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আর কেউ সেইভাবে পাণ্ডব হয়ে উঠতে পারে নি। সেই ধারাবাহিকতা এখনও অব্যাহত রয়েছে। এক পাণ্ডব চলে গেলেও এখন পর্যন্ত সেই জায়গা কেউ দখল করতে পারে নি। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ আস্তে আস্তে আলোচনা-সমালোচনা শুরু করেছে। তারা বলছে, বহু হয়েছে পঞ্চপাণ্ডবের কাহিনী। এখন একটু বাস্তবে আসা উচিৎ বিসিবিকে। কারণ গত ২-৩ বছরে এই পাণ্ডবরাই ডুবিয়েছে বাংলাদেশকে। সেই তুলনায় তরুন ক্রিকেটাররা ভালো করছে। তাই আলোচনায় এখন পাণ্ডবদের দিন শেষ, তরুনের হাতে যাক বাংলাদেশ।

পাণ্ডবদের এই অধঃপতন শুরু হয়েছে তখন থেকেই, যখন তারা খেলাটাকে আর গুরুত্ব দেয় নি। ক্রিকেটকে তারা চতুর্থ বিষয় বানিয়ে নিজের ব্যবসা-বাণিজ্য, বিজ্ঞাপন ইত্যাদিকে প্রধান বিষয় বানিয়েছে। তখন থেকে তারা এগুলোর পেছনেই ছুঠছে। খেলার মনোযোগটা এখন তারা আর দিতে পারেন না। মাশরাফি বিন মর্তুজা দলের জন্য অনেক কিছু দিয়েছেন এটি অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু তিনি খেলার চেয়ে রাজনীতিটাকেই মূখ্য বিষয় করে এখন খেলা থেকে অনেক দূরে। যদিও সে আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরবেন না, এটা প্রায় নিশ্চিত। তাই তার কথা বাদই রাখা যায়। অন্য চার পাণ্ডবদের মধ্যে খেলা বাদে সব থেকে বেশি ব্যস্ত সাকিব আল হাসান। তার ক্রিকেটের বাহিরেও রয়েছে নানা ধরনের ব্যবসা। ব্যবসাটাকেই তিনি এখন প্রধান বিষয় হিসেবে তৈরি করেছেন। ক্রিকেট তার কাছে চতুর্থ বিষয় হওয়ার ফলে নানা কারণে দলের সঙ্গে না থাকা এখন এক নিত্য নৈমিত্তিক ব্যপারে পরিণত হয়েছে তার জন্য। 

এ তো না হয় গেলো দুই পাণ্ডবের কথা। অন্য তিন পাণ্ডব তো সেভাবে নিজের ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ওইভাবে সামনে না আসলেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনে তাদের হর হামেশাই দেখা যায়। সাকিব আল হাসান তো বায়ো বাবলে থাকা অবস্থাতেই বিজ্ঞাপনের শুটিং করার জন্য শুটিংস্পট এ চলে যান। এটি নিয়ে কম সমালোচনা হয় নি। তারপরও তাদের এই বিষয়গুলো তেমন গায়ে বাধে না। আসলে তাদের এইসব কর্মাকাণ্ডের ফলে তাদের খেলাতেই এর প্রভাব পড়ছে। তার উজ্জল উদাহরণ আজকের আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ওয়ানডে ম্যাচটি। যেখানে চার পাণ্ডবের সবাই বাজে পারফরমেন্স করেছেন, আর দল জিতিয়েছেন আফিফ এবং মিরাজের মতো তরুনরা খেলে। সে কারণেই এখন আলোচনায় চার পাণ্ডবের ক্রিকেট নিয়ে। 

ক্রিকেট সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাণ্ডবদের সময় এখন শেষ হতে বসেছে। এখন তাদের বিষয়টি বুঝতে হবে। নানা ধরনের রেকর্ড দিয়ে তো দিন শেষে কোনো কাজ হবে না, যদি দল হেরে যায়। আজকের খেলায় দেখা গিয়েছে তরুন আফিফ, মিরাজ, মুস্তাফিজরাই দলটিকে টেনে নিয়ে একটি অবিশ্বাস্য জয় ছিনিয়ে এনেছে। হারের কিনারা থেকে কিভাবে দলকে টেনে তুলতে হয়, সেটি এই তরুনরা জানে। সেটিই তারা দেশের মানুষকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। তাদের এই পারফরমেন্স পাণ্ডবরা আজ ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। পাণ্ডবদের ধারাবাহিক খারাপ পারফরমেন্সে এখন মানুষের মনে তাদের জন্য যে জায়গা ছিল সেটি যেতে বসেছে। পাণ্ডবদের উচিৎ হবে নতুনদের জন্য জায়গা তৈরি করে দেওয়া। যারা আগামী অনেকদিন এই দেশকে সার্ভিস দেবে। শুধু নাম বা বিশ্ব সেরা হওয়ার থেকে দলের জন্য কিছু করাটাই সম্মনের। নাম দিয়ে যে কিছু হয় না, সেটা আজ আরও একবার প্রমাণিত হলো। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭